Ajker Patrika

বন্দর, রেলপথ ও নৌঘাঁটি: চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডে বিশ্বের ৫ মেগা প্রকল্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৫: ৪৩
Thumbnail image

এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাকে যুক্ত করতে এক দশক আগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামে চীন যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা প্রায় ২ ট্রিলিয়ন বা ২ লক্ষ কোটি ডলারের মহাযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের আনাচে-কানাচে বিআরআইয়ের জালে পড়েছে হাজার হাজার অবকাঠামো প্রকল্প।

চীনের আয়োজনে গড়ে ওঠা এসব অবকাঠামো বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি করছে নানা বিতর্ক। এসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রকল্পের বিষয়ে এএফপি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

লাওস: অতি দ্রুতগতির রেলপথ
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অনুন্নত ও চারদিকে ভূপরিবেষ্টিত দেশ লাওস। চীনকে সংযুক্ত করতে অতি দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ করেছে দেশটি। ৬০০ কোটি ডলারের এই মেগা প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ জুগিয়েছে চীনা ঋণ।

বেইজিং বলছে, চীনের কুনমিং শহর থেকে লাওসের রাজধানী ভিয়েন্তিন পর্যন্ত প্রায় ১০৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ ২০২১ সালে চালু হয়েছে। এই পথে এযাবৎ কয়েক কোটি যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। 

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ তৈরির জন্য চীন যে বিস্তৃত রেলপথের নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে চাইছে, এটাকে তার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। উভয় পক্ষই এই প্রকল্পকে ‘জনকল্যাণমূলক’ হিসেবে তুলে ধরছে। উপরন্তু, এর মধ্য দিয়ে বন্ধুত্ব, সুখ ও সমৃদ্ধির প্রকাশ ঘটেছে বলে বেইজিংয়ের দাবি।

চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে লাওসের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই রেলপথে শুধু লাওসের জনগণই উপকৃত হবে না, প্রতিবেশী দেশগুলোও সুবিধা পাবে।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, ঋণের ভারে নুইয়ে পড়া দেশটি এই প্রকল্প থেকে খুব বেশি ফায়দা তুলতে পারবে না। করতে পারবে বলে মনে হয় না। এই ঋণ পরিশোধে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে।

পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর। ফাইল ছবি, এএফপিপাকিস্তান: ইকোনমিক করিডর
এক দশক আগে বিআরআই নিয়ে রূপরেখা তৈরির সময় চীন ও পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ইকোনমিক করিডর স্থাপনের পরিকল্পনা করে। এর আওতায় পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর ও পশ্চিম চীনকে যুক্ত করে পরিবহন ও জ্বালানি খাতের একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়নে এ দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের মধ্যে কয়েক হাজার কোটি ডলারের চুক্তি হয়।

গত জুলাইয়ে এই বন্দরের চীনা অপারেটর করিডরকে ‘সাদা কাগজ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের ইচ্ছামতো সবচেয়ে সুন্দর ছবি আঁকতে পারি।’

তবে ওই করিডরকে ‘উচ্চাভিলাষী জুয়া’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন গবেষণা সংস্থা মেরিকসের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বহুবছর ধরে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের অর্থনীতি এতে আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

 প্রায় ৫৯ কোটি ডলারের এই স্থাপনা চীনের বাইরে বেইজিংয়ের প্রথম স্থায়ী নৌঘাঁটি। ছবি, এএফপিজিবুতি: নৌঘাঁটি
বিআরআইয়ের জালে পড়া ছোট্ট আফ্রিকান দেশ জিবুতিকে বিনিয়োগে ভরিয়ে দিয়েছে চীন। কিন্তু তাঁর নজর আসলে বিশাল সামরিক ঘাঁটি। প্রায় ৫৯ কোটি ডলারের এই স্থাপনা চীনের বাইরে বেইজিংয়ের প্রথম স্থায়ী নৌঘাঁটি। এর অবস্থানও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যা লোহিত সাগর ও অ্যাডেন সাগরের মাঝখানে।
বেইজিং বলছে, নৌযান সরবরাহ, আঞ্চলিক শান্তি রক্ষা, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ও জলদস্যুতার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযান পরিচালনার জন্য ওই নৌঘাঁটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

কিন্তু এর অবস্থান মার্কিন সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি বলে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া ঘিরে চীনের গোয়েন্দাগিরি ও শক্তি প্রদর্শনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের অনবরত অভিযোগের কড়া সমালোচনা করেছেন জিবুতির প্রেসিডেন্ট ইসমাইল ওমর গুল্লে।

গ্রিস: ইউরোপে জোরালো অবস্থান
২০১৬ সালে ধুঁকতে থাকা গ্রিসের ইরাস বন্দরের সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ কোম্পানি কিনে নেওয়ার পর চীনের বিষয়ে ইউরোপীয়দের ভ্রু কুঁচকে যায়।  
দুই বছর পর অ্যাথেন্স আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরআইতে যোগদান করে এবং এই বন্দরকে দুই দেশই এশিয়া ও ইউরোপীয় মহাদেশকে সংযোগকারী শীর্ষ ‘ট্রানজিট হাব’ হিসেবে দেখতে থাকে।

গত আগস্টে চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থবির হয়ে পড়া একটি বন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে চীনের বিনিয়োগ।
তবে বিরোধীরা বলছেন, ঋণের ভারে জর্জরিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের ওপর প্রভাব বাড়াতে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক সুবিধা ব্যবহারই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। 

তবে বিআরআইয়ের মাধ্যমে অন্য দেশের ওপর ‘ক্ষতিকর প্রভাব’ ফেলার অভিযোগ চীন বরাবরই অস্বীকার করেছে।

ইতালি: বিআরআই নিয়ে দ্বিধা 
২০১৯ সালে সি চিন পিংয়ের রাষ্ট্রীয় সফরের সময় বিআরইতে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের হতবাক করে দিয়েছিল ইতালি। এর ফলে জি-সেভেনভুক্ত দেশ হিসেবে প্রথম ইতালি চীনের প্রেসিডেন্টের শীর্ষ প্রকল্পে যুক্ত হয়।

দুই দেশের মধ্যে একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি হলেও তা চীনের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বা বেইজিংয়ের ‘অযাচিত প্রভাব’ নিয়ে উদ্বেগ প্রশমিত করতে তেমন জোরালো কোনো ভূমিকা রাখেনি।

ইতালি এখন এই প্রকল্প থেকে প্রত্যাহারের চিন্তা করছে। আগামী বছরের মার্চে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া সমঝোতা স্মারকই এক্ষেত্রে প্রথম নিদর্শন হতে পারে।
তবে প্রকল্প থেকে সম্ভাব্য প্রত্যাহারের বিষয়ে রোম ‘এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি’ বলে গত মাসে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানির সুর কিছুটা ভিন্ন। তিনি বলেছেন, ‘বিআরআই থেকে আমরা যে ফল প্রত্যাশা করেছিলাম, তা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত