Ajker Patrika

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকির বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে: অর্থমন্ত্রী  

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকির বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে: অর্থমন্ত্রী  

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এখানে বিনিয়োগ করলে লাভের পাশাপাশি যে ঝুঁকিও রয়েছে, তা মাথায় রাখতে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলছেন, পুঁজিবাজারের সরকারের যে সাপোর্ট দরকার, সেটা দেওয়া হবে।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার সারা বিশ্বে একইভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। লাভের জন্য আপনি আসবেন, কিন্তু রিস্কের বিষয়টিও আপনার মাথায় রাখতে হবে। পুঁজিবাজারকে সরকার সাপোর্ট দিয়ে যাবে। তবে কেউ যদি অনেক লাভের জন্য কোনো চিন্তাভাবনা করে সেটা তো হবে না। 

অর্থনীতি শক্তিশালী হলে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবে বলে মত দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, অন্য কোনোকিছু দিয়ে এটিকে ইফেক্ট করার সুযোগ নেই। আমি সব সময় বলি সবাই বুঝেশুনে পুঁজিবাজারে আসবেন। বাজারটিতে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে, দৈনিক ওঠানামা করছে। সুতরাং এটা অনেক বেশি সেনসিটিভ। এই জায়গাটিতে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। যারা বাজারটির সঙ্গে জড়িত তারা এটি সম্পর্কে বুঝেশুনেই এসেছেন। 

সরকারি ২৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে আনার উদ্যোগ নিয়ে আরেক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, বিভিন্ন কারণে সেটি হয়নি। বাজারে যখন কোনো ভালো শেয়ার থাকে না তখন একদিকে মার্কেট বেশি চলে যায়। সারা বিশ্বে এটি হয়। সে জন্য এমন সমস্যা থাকলে সরকার বাজেট দিয়ে বাজার স্ট্যাবল রাখে। সে জন্য আমরা উদ্যোগটি নিয়েছিলাম। দেখা গেল যে আমাদের মার্কেটে যে পরিমাণ শেয়ার থাকা দরকার ছিল সেটি আছে। সে জন্য সরকারকে আর সেই কাজ করতে হয়নি। 

জ্বালানির সঙ্গে খাদ্যশস্যের দামও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এলএমজি নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যে ধারণা করেছিলাম বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি তার মধ্যেই আছে, ওভার অল বাড়েনি। মুদ্রাস্ফীতি আমরা প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করে আপডেট নেই। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তবে জ্বালানির যেভাবে দাম বাড়ছে সেভাবে খাদ্যশস্যের দামও বাড়ছে। 

ডলারের দাম নির্ধারণ করে রাখা হয় না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ওপর ডিপেন্ড করে। ডিমান্ড যদি বেশি থাকে আর সাপ্লাই যদি কম থাকে তাহলে ডলারের দাম বাড়বে। এটা স্বাভাবিকভাবেই অ্যাডজাস্ট করে নেয়। অতীত থেকে আমরা যেভাবে করে আসছি, সেভাবেই হয়ে আসছে। ব্যাংকগুলোর কাছে যখন ডলারের পরিমাণ বেশি থাকে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ডলার কিনতে পারে। অন্য দেশেও এটা করা হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশে এটা ফিক্সড করা থাকে, মার্কেট আপগ্রেড করুক বা না করুক ফিক্সড রেটেই নিতে হবে। আমাদের দেশে এমন নয়। 

রাশিয়া থেকে ২টি হেলিকপ্টার কিনবে সরকার

রাশিয়ার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টারের’ কাছ থেকে ৪২৮ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৬ টাকা ব্যয়ে এমআই-১৭১ এ ২ মডেলের দুইটি হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। 

কেনা হবে ৯০ হাজার টন সার

চট্টগ্রামের কাফকো, কাতারের মুনতাজাত ও সৌদি আরবের সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের কাছ থেকে ৫৬৫ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার ১৯৫ টাকায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন জানান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কাফকোর কাছ থেকে ১৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ১১ হাজার ৬২৫ টাকায়, কাতারের মুনতাজাত থেকে ১৮৯ কোটি ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭০ টাকায় এবং সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের কাছ থেকে ১৯০ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন করে ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনবে। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ যৌথভাবে ভেঞ্চার দি বিল্ডারস ইঞ্জিনিয়ারস অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, ইলেকট্রো গ্লোবাল, মাহেন্দ্রি বেসিন পাওয়ার লিমিটেড এবং অ্যাডভান্স টেকনোলজি কনসোটিয়াম লিমিটেডকে ১০০ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৩ টাকায় দেওয়া হয়েছে। 

এদিন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দেশের ১১ জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণে পণ্য ও পূর্ত কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। 

সামসুল আরেফিন জানান, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ১১টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনে পণ্যের ৮টি ও পূর্ত কাজের ৫৪ প্যাকেজের ক্রয় কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডকে দিয়ে বাস্তবায়নের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া রাজশাহী ওয়াসা বাস্তবায়নাধীন রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে বিআরটিসি, বিইউইটি এবং এএমইসি ইন্টারন্যাসনাল পিটিওয়াই এলটিডিকে নিয়োগের নীতিগত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অর্থ পাচার: অনিল আম্বানির ৩,০৮৪ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অনিল আম্বানি। ফাইল ছবি
অনিল আম্বানি। ফাইল ছবি

অনিল আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং তদন্তের অংশ হিসেবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) প্রায় ৩ হাজার ৮৪ কোটি মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-এর অধীনে গত ৩১ অক্টোবর এই বাজেয়াপ্তের নির্দেশ জারি করা হয়।

বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে মুম্বাইয়ের পালি হিলের বিলাসবহুল পারিবারিক আবাসন, দিল্লির রিলায়েন্স সেন্টার এবং দেশের অন্তত আটটি শহরের রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি। দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, মুম্বাই, পুণে, থানে, হায়দরাবাদ, চেন্নাই এবং অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জুড়ে এই সম্পত্তিগুলো বিস্তৃত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অফিস, আবাসিক ইউনিট এবং জমির প্লট।

কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডির অভিযোগ, রিলায়েন্স হোম ফাইন্যান্স লিমিটেড (আরএইচএফএল) এবং রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইন্যান্স লিমিটেড (আরসিএফএল)-এর সংগৃহীত জনগণের টাকা বেআইনিভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা এবং পাচার করার অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইডি জানিয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইয়েস ব্যাংক আরএইচএফএল-এ ২ হাজর ৯৬৫ কোটি এবং আরসিএফএল-এ ২ হাজার ৪৫ কোটি বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিনিয়োগগুলো খেলাপি সম্পত্তিতে পরিণত হয়।

তদন্তে আরও উঠে আসে, সেবি (এসইবিআই)-এর বিধিনিষেধ এড়ানোর জন্য এই তহবিলগুলো ঘুরপথে ব্যবহার করা হয়েছিল। সংঘাতের স্বার্থ সংক্রান্ত নিয়মের কারণে রিলায়েন্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডের পক্ষে সরাসরি অনিল আম্বানির আর্থিক সংস্থাগুলোতে বিনিয়োগ করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু অভিযোগ, সাধারণ মানুষের মিউচুয়াল ফান্ড থেকে সংগৃহীত অর্থ ইয়েস ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুরপথে আরএইচএফএল এবং আরসিএফএল-এ নেওয়া হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত অনিল আম্বানির কোম্পানিগুলোর কাছে যায়।

ইডি আরও দাবি করেছে, অর্থপাচারের তদন্তে তারা দেখতে পেয়েছে, এই ঋণ দেওয়া ও লেনদেনের ক্ষেত্রে অনিয়ম ছিল। কোনো রকম যাচাই ছাড়াই ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল, বহু ক্ষেত্রে আবেদন জমা দেওয়ার আগেই অথবা একই দিনে মঞ্জুরি ও বিতরণ করা হয়। কিছু ঋণের নথিতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি ফাঁকা বা তারিখবিহীন ছিল বলেও অভিযোগ।

এ ছাড়া, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড (আরকম)-এর সঙ্গে যুক্ত ঋণ জালিয়াতি মামলাতেও তদন্ত জোরদার করেছে ইডি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ১৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপির বেশি অর্থ ‘লোন এভারগ্রিনিং’ (মূল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা মওকুফ) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত এই সম্পত্তিগুলোর সন্ধান ও বাজেয়াপ্তের কাজ তারা চালিয়ে যাবে। তাদের দাবি, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণের স্বার্থ এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুরক্ষিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৬১ হাজার টন গম নিয়ে মার্কিন জাহাজ ভিড়ল চট্টগ্রাম বন্দরে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম নিয়ে এমভি স্পার এরিস (MV SPAR ARIES) জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম নিয়ে এমভি স্পার এরিস (MV SPAR ARIES) জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৬১ হাজার টন গম একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমদাদ ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে নগদ ক্রয় চুক্তির আওতায় ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি স্পার এরিস (MV SPAR ARIES) জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সরকার—টু—সরকার (জি টু জি) ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি কার্যক্রম শুরু করছে। এই চুক্তির আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে, যার প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম গত ২৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে দেশে পৌঁছেছে।

জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম  ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ: আড়াই বিলিয়নের গড় ধারাবাহিকতা দুই মাস

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ: আড়াই বিলিয়নের গড় ধারাবাহিকতা দুই মাস

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পরিবারের প্রয়োজনে প্রতিদিনই টাকা পাঠাচ্ছেন। এই অর্থ দেশে আসে রেমিট্যান্স হিসেবে, যা দেশের টাকার মান ধরে রাখে, আমদানি খরচ মেটায় এবং বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী করে। অক্টোবর মাসে দেশে এসেছে ২৫৬ কোটি ডলার—সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম, কিন্তু গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। তবে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, টানা দুই মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি গড় ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। এই প্রবাসী আয় শুধু পরিবারের সহায়তা নয়, দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতারও এক অদৃশ্য চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ১৪ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময় ছিল ৮০৯ কোটি ডলার। মাত্র চার মাসেই রেমিট্যান্স বেড়েছে ২০০ কোটি ডলার বেশি। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি ছাড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যতক্ষণ হুন্ডি ও পাচার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ততক্ষণ রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়বে। এভাবে প্রতি মাসেই ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে।’

তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ২০২৪ সালের একই মাসে যা ছিল ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ১৬ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, অর্থাৎ অক্টোবরের তুলনায় সামান্য কম।

মাসভিত্তিক প্রবাহের হিসাব অনুযায়ী, জুলাইয়ে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বর ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ এবং অক্টোবর ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশে ডলার মার্কেট এখন স্বাভাবিক এবং খোলাবাজারে হুন্ডির প্রভাব কমায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলেই রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। বর্তমান ব্যাংকিং রেট প্রায় খোলাবাজারের ডলারের কাছাকাছি, যা প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৩টির মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার এসেছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার, বেসরকারি ৪২ ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক থেকে এসেছে ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

তবে কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক এবং বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট। গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ হয়েছে মার্চ মাসে, ৩২৯ কোটি ডলার। পুরো বছর প্রবাসী আয়ের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এর আগের বছরগুলোতেও ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেখা গেছে; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।

ব্যাংকাররা বলছেন, ‘দেশের ডলার মার্কেট স্থিতিশীল হওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন। হুন্ডির প্রভাব কমায় এই প্রবাহ আরও নিয়মিত হচ্ছে।’

অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ দেশকে টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে স্থিতিশীলতা, আমদানি ব্যয় মেটানো এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালী ব্যবহার নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি এটি দেশের অর্থনীতির জন্য এক নির্ভরযোগ্য চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চুয়াডাঙ্গা বিসিক শিল্পনগরী: ৪২ কোটির প্রকল্প চার বছরেও নির্জীব

  • হেলায় নষ্ট হচ্ছে সম্ভাবনা।
  • ৭৮ প্লটের মধ্যে বরাদ্দ হয় ৩১টি।
  • ২৫ উদ্যোক্তার মধ্যে সক্রিয় মাত্র তিনজন।
মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ১৮
চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীর পুরো এলাকা আগাছা-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীর পুরো এলাকা আগাছা-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে ঢুকতেই যেন চোখে পড়ে এক অচেনা নীরবতা। চারপাশে জঙ্গল-আগাছায় ঢাকা রাস্তা, পরিত্যক্ত প্লট, প্রকল্প এলাকাজুড়ে ভবনহীন ঝুলে থাকা তার এবং সার্বিক নিরাপত্তার ঘাটতি—সব মিলিয়ে যেন এক ভুলে যাওয়া প্রকল্পের গল্প। সরকারি ৪২ কোটি টাকায় নির্মিত এ শিল্পনগরী চার বছরেও প্রাণ ফেরাতে পারেনি। ভবন আছে, কিন্তু কাজ নেই; আশা আছে, কিন্তু এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেই।

সরকার ২০২১ সালে ২৫.২ একর জমির ওপর এই শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করে। লক্ষ্য ছিল স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করা, কর্মসংস্থান বাড়ানো, আর জেলার অর্থনীতি চাঙা করা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। ৭৮টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩১টি; এর মধ্যে ৬ জনের বরাদ্দ বাতিল হয় নানা জটিলতায়। ২৫ উদ্যোক্তার মধ্যে মাত্র তিনজন এখন সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন—বাকি প্লটগুলো খালি পড়ে রয়েছে। কিছু জায়গায় ইটের গাঁথুনি শুরু হলেও পরে থেমে গেছে সব।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো এলাকা এখন আগাছা-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভাঙা, পানি নিষ্কাশনের উপায় নেই, বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানি বাড়ায় মশার উপদ্রব, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। এখানে রাত হলে অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা শিল্পনগরী, নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি বিনিয়োগে আসা উদ্যোক্তাদের মনে জাগায় শঙ্কা। ফলে একসময় যেখানে কর্মচাঞ্চল্যের বড় আশা ছিল, সেখানে এখন পায়ের আওয়াজও শোনা যায় না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি মূলত থেমে আছে। এখানে সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে; কিন্তু পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্ট। উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। নানা কারণেই বিসিক এলাকায় ব্যবসা করা মানে বড় ঝুঁকি নেওয়া।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হোসেন। তাঁর কথায়, ‘বিসিক হলো, ভেবেছিলাম এলাকায় কাজের সুযোগ বাড়বে। কিন্তু সবকিছু থেমে গেছে। এখন মনে হয়, এ জায়গায় শুধু আগাছা আর নীরবতাই জন্ম নিচ্ছে। সব সম্ভাবনা উবে গেছে।’

চুয়াডাঙ্গা বিসিকের উপব্যবস্থাপক এ বি এম আনিসুজ্জামান অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, মোট প্লটের ৪০ শতাংশ ইতিমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোও শিগগির বরাদ্দ দেওয়া হবে। যাঁরা বরাদ্দ নিয়েও কাজ শুরু করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘কারখানাগুলো চালু হলে কর্মসংস্থান বাড়বে।’

তবে মাঠের বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। চার বছর ধরে এভাবে অব্যবহৃত পড়ে থাকা শিল্পনগরী প্রশ্ন তুলছে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। প্রায় ৪২ কোটি টাকার এ বিনিয়োগে এখন পর্যন্ত যে ­ফল, তা হতাশাজনক। শুধু সরকারি অর্থের অপচয় নয়; বরং এটি স্থানীয় উন্নয়নের গতি থামিয়ে দিয়েছে।

উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, পানি-বিদ্যুৎ-সংযোগ থেকে শুরু করে রাস্তা, নিরাপত্তা, ড্রেনেজ—সব মৌলিক অবকাঠামোই দুর্বল। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উপযোগী পরিবেশ নেই। অনেকে প্রাথমিকভাবে জমি পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেননি।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, শিল্পনগরী কেবল অবকাঠামো দিয়ে টিকে থাকে না; এর সঙ্গে থাকতে হয় প্রণোদনা, সুযোগ-সুবিধা ও প্রশাসনিক সহায়তা। চুয়াডাঙ্গার বিসিক প্রকল্পে সেগুলোর অভাব স্পষ্ট।

দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ও অবহেলা এখন প্রকল্পটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। কিছু জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ হলেও তার পাশেই জন্ম নিচ্ছে আগাছা। যেন জীবন্ত উদাহরণ, কীভাবে পরিকল্পনার ঘাটতি এক সম্ভাবনাময় প্রকল্পকে জঙ্গলে পরিণত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত