Ajker Patrika

অর্থনৈতিক সংকটে ব্রিটেনে বিচ্ছেদ স্থগিত করেছেন পৌনে ৩ লাখ দম্পতি

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

পশ্চিমের দেশগুলোতে সাধারণত খ্রিষ্টীয় নতুন বছরে বিবাহবিচ্ছেদের হিড়িক পড়ে যায়। বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কিত আইনজীবীদের বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় এটি। তবে এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ২০২৪ সাল আইনজীবীদের জন্য মন্দার বছর যেতে পারে। কারণ নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনযাত্রার নামামুখী সংকটের কারণে ব্রিটেনে ২ লাখ ৭০ হাজার দম্পতি তাঁদের বিচ্ছেদ পিছিয়ে দিয়েছেন।

ব্রিটিশ বহুজাতিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা দেখেছেন, আর্থিক চাপের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের ১৯ শতাংশই পিছিয়ে গেছে। বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া দম্পতি চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করেছেন। ২০২০ সাল থেকে মানুষের জীবনযাত্রার কয়েকটি প্রভাব বিশেষভাবে উচ্চারিত হয়েছে। এর মধ্যে আয়–উপার্জন নিয়ে উদ্বেগ, জীবনযাত্রার চাপ এবং বিবাহবিচ্ছেদের খরচ এসবই দম্পতিদের বিচ্ছেদ স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। 

ব্রিটেনের আইন প্রতিষ্ঠান সেডন্সের পারিবারিক আইন প্রধান নিল রাসেল বলেন, তিনি প্রায়ই এই সমস্যা নিয়ে দম্পতিদের সঙ্গে কথা বলেন। লোকেরা সব সময় মনে করে, আর্থিক চাপই সংসার ভাঙার কারণ। কিন্তু এই সংকট সংসার দীর্ঘস্থায়ীও যে করে সেটি এখন দেখা যাচ্ছে! 

নিল রাসেল বলেন, মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধির মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ পরিবারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। কারণ, এমন পরিস্থিতি তাঁরা কোনো কিছু বিক্রি এবং নতুন করে কেনার সামর্থ্য রাখেন না। এর পেছনে কারণ হলো নতুন মর্টগেজ (বন্ধকি) হার বহন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না এবং একসঙ্গে দুটি পরিবারের খোরপোষ দেওয়ার সামর্থ্য থাকে না। তাই অনেক মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও একসঙ্গে থাকতে বাধ্য হন। 

যখন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন যারা আলাদা হতে চান তাঁদের জন্য টাকা একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে ওঠে। এই সমস্যা সব শ্রেণির উপার্জনকারীর ওপরই প্রভাব ফেলে, আর মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব করে তোলে। যোগ করেন নিল রাসেল। তিনি বলেন, অর্থনীতি ভালো থাকলে বিবাহবিচ্ছেদ সহজ হয় কারণ, তখন মানুষ বাড়ি কিনতে পারে, চাইলে বিক্রিও করতে পারে। হাতে নগদ টাকাও থাকে। 

গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহবিচ্ছেদকারী প্রায় অর্ধেক (৪৮ %) দম্পতি দেখেছেন তাঁদের আয় প্রায় ৩১ শতাংশ কমে গেছে। তাঁদের প্রতি বছর গড়ে ৯ হাজার ৭০০ পাউন্ড আয় কমেছে। 

নতুন বছরের পরে প্রথম কর্মদিবসকে পশ্চিমে প্রায়শই ‘বিচ্ছেদ দিবস’ বলে অভিহিত করা হয়। কারণ ক্রিসমাস বা বড়দিনের পর অনেকেই সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করেন। পেনশন অ্যান্ড লাইফটাইম সেভিংস অ্যাসোসিয়েশন (পিএলএসএ) একটি অনলাইন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা কীভাবে বেসরকারি কর্মক্ষেত্রের পেনশন স্কিম প্রদানকারীরা দিনটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বামী/স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। 

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, টাকা–পয়সা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ২ লাখ ৭২ হাজার বিবাহবিচ্ছেদ স্থগিত করা হয়েছে। তবে পাঁচটির মধ্যে একটি দম্পতি তাঁদের সম্পত্তি ভাগ করার সময় পেনশন নিয়ে আলোচনা করেছেন। আর ৫৮ শতাংশ তাদের পরিবারের বাড়ির মূল্য বিবেচনা করেছেন। 

লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল রিটেইলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পলা লেভেলিন বলেন, ‘মানুষ যখন বিবাহবিচ্ছেদ করে, তখন অর্থ সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, বিশেষ করে জীবনযাত্রার সংকটের চ্যালেঞ্জের সময়। আমাদের গবেষণা দেখায়, একটি বিচ্ছেদ মানুষের অর্থের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।’ 

পাঁচটি বিচ্ছেদের মধ্যে দুটিতেই দেখা গেছে, কোনো একটি পক্ষ মনে করেন, তাঁকে আর্থিকভাবে ঠকানো হয়েছে। এক-তৃতীয়াংশেরও কম কোনো ধরনের অসন্তোষ ও দাবি ছাড়া নথিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। 

গবেষণায় দেখা গেছে, পেনশন তহবিলের ওপর বিবাহবিচ্ছেদের প্রভাব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ দেখা গেছে। অর্থনৈতিক চাপের কারণে প্রতি মাসে গড়ে ৬৩ পাউন্ড কম অর্থ তাঁরা পেনশন ফান্ডে রাখেন। প্রায় ২৯ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদে পেনশনের অধিকার সক্রিয়ভাবে ত্যাগ করতে দেখা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত