Ajker Patrika

বদলে গেছে উৎসব পালনের ধরন

রুমী সাঈদ, জেদ্দা (সৌদি আরব) 
বদলে গেছে উৎসব পালনের ধরন

ঈদ মানে মুসলমানদের এক মাস সিয়াম সাধনার পর একটি খুশির দিন। গোটা বিশ্বের দেশে দেশে মুসলিম সম্প্রদায় দিনটি পালন করে আনন্দদায়ক নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে পরিচালিত সৌদি আরবে ঈদ উদ্‌যাপিত হয় কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে, নিজস্ব ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ ভাগ বিদেশির বসবাস এ দেশে। বিদেশিরাও এখানে ঈদ উদ্‌যাপন করেন তাঁদের নিজ নিজ দেশের প্রথা অনুযায়ী। ইদানীং সৌদি আরবে ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে ধর্মীয় অনুশাসন শিথিল হওয়ায় বদলে গেছে সব ধরনের উৎসব পালনের ধরন। নারীরা অবগুণ্ঠিত থাকছেন না।

দেশটিতে ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় টেলিভিশনে সৌদি বাদশার পক্ষে তথ্যমন্ত্রী রাজকীয় ফরমান ঘোষণার মাধ্যমে ঈদ উদ্‌যাপনের সংবাদ জানান। 
ঈদ উপলক্ষে বড় বড় শহর সাজানো হয় নতুন সাজে। প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো সাজানো হয় কলেমা খচিত পতাকায়। সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোয় করা হয় আলোকসজ্জা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই দেশের সর্বত্র আদায় করা হয় ঈদুল ফিতরের নামাজ। কোথাও খোলা ময়দানে, আবার কোথাও সুবিশাল মসজিদে। প্রায় সর্বত্রই পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরা নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে বড়রা ছোটদের ঈদের সালামি (এরা যাকে আরবিতে ঈদি বলে) দেওয়ার প্রথাও চালু রয়েছে। বাসাবাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের জন্য সুসজ্জিত ঝুড়িতে নানা ধরনের চকলেট সাজিয়ে রাখতে দেখা যায় ঈদের দিন।

শহরের বিনোদন পার্কগুলোতে নামে শিশু-কিশোরদের ঢল। অনুমতি পাওয়ার পর আজকাল পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে গাড়ি চালিয়ে ছুটে চলতে দেখা যায় সৌদি নারীদের। সৈকত-শহর যেমন জেদ্দা, দাম্মাম, ইয়ামবুতে সৈকতে থাকে নগরবাসীর উপচে পড়া ভিড়।

সেখানে নানা রকম আনন্দদায়ক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় নারী ও শিশু-কিশোরেরা। চলে আতশবাজির বর্ণিল মহোৎসব। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দেখা যায় আরব পুরুষদের আরব সংগীতের সঙ্গে বেদুইন নৃত্য। বেদুইনপল্লিতেও চলে এ ধরনের আয়োজন।

শহরের বড় বড় বিপণিবিতানে আয়োজন করা হয় আরবদের নিজস্ব বাজনার সঙ্গে পুরুষদের ট্র্যাডিশনাল নৃত্য ও লাঠিখেলার নানা দর্শনীয় কসরত। গ্রামে গোত্রপ্রধান বা সম্ভ্রান্তদের বাড়িতে নারী ও পুরুষদের আলাদাভাবে চলে আরবি কফির (আরবিতে বলে গাহুয়া) আড্ডা। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে গল্পের আসর। এরপর নৈশভোজ, যাতে থাকে লাহাম কেবসা (উট, ছাগল, দুম্বার মাংসের আরবি বিরিয়ানি ও নানা ধরনের ফল)। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে চা-কফির পালা। আরব নারী, পুরুষ, শিশু সবাই ঈদে নতুন কাপড়চোপড় বানিয়ে বা কিনে থাকে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, ঈদের সময় দেশজুড়ে জবাই করা হয় হাজার হাজার পশু (উট, দুম্বা, ছাগল, গরু) অথচ কোথাও রাস্তাঘাট বা বাড়ির আঙিনায় এতটুকু রক্ত বা বর্জ্য দেখতে পাওয়া যায় না। গ্রাম ও শহর—সর্বত্রই রয়েছে পর্যাপ্ত কসাইখানা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সবাই কসাইখানায়ই পশু জবাই করে থাকে। দেশটিতে ঈদুল ফিতরে প্রচুরসংখ্যক পশু জবাই করা হয়। কারণ আরবদের উৎসব আয়োজনে প্রধান খাবারই তৈরি হয় পশুর মাংস দিয়ে।

দেশটিতে বিদেশিদের জন্য বিনোদনের ক্ষেত্র তুলনামূলক কম। ফলে এখানে বসবাসকারীরা ঈদের আনন্দ উদ্‌যাপন করে সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে। যারা পরিবার নিয়ে বসবাস করে, তারা একে অপরের বাসায় বেড়াতে গেলেও অবিবাহিতদের ঈদ কাটে ঘরের ভেতরে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গল্প গুজব, ভালো রান্না আর খাওয়া-দাওয়া করে। সঙ্গে থাকে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ঈদ অনুষ্ঠান। দেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে একটা বড় সময় কাটে তাঁদের। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত