কাবেরী গায়েন

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাইব্রেরিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়তে হচ্ছে? জানলাম, না, তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বিসিএস পরীক্ষায়। দ্বিতীয় অনুসন্ধানে জানলাম, মনোযোগ দিয়ে বিসিএস গাইড থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এত দীর্ঘ লাইন। কিন্তু লাইব্রেরি কেন? উত্তরটি অবশ্য একটু বেদনাদায়ক। অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে পড়াশোনার পরিবেশ পান না, তাই সাতসকালেই চলে আসেন লাইব্রেরিতে। সব বিভাগের শিক্ষার্থীই এখন একই ধারায় পড়াশোনা করছেন। সবার ধ্যান-জ্ঞান বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। লাইব্রেরির কর্মকর্তারা জানালেন, শিক্ষার্থীরা বই তোলেন না লাইব্রেরি থেকে। ধাক্কা খাবার মতোই খবর। সবাই যদি একই লক্ষ্যে একই ধরনের পড়াশোনা করেন, তবে এত বিভাগের কী প্রয়োজন? কবে থেকেই-বা এই প্রবণতা চালু হলো? ভাবলাম, নিশ্চয়ই এটি সাম্প্রতিক কোনো প্রবণতা! স্কুলজীবনের কথা মনে পড়ে। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান অধিকারীদের সাক্ষাৎকার ছাপা হতো পত্রিকায়। তখন সেই অদম্য মেধাবীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ চাইতেন ডাক্তার হতে। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতেন কেউ কেউ। আশির দশকে এক-আধজন সামরিক কর্মকর্তাও হতে চাইতেন। বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করতে চান, এমন তেমন দেখিনি। তাই কৌতূহল নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখলাম, না, এটি মোটেই সাম্প্রতিক প্রবণতা নয় বরং আইসিএস, সিএসপি মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের চাকরি এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বহুকাল আগে থেকেই। এমনকি অত্যুক্তি হবে না যদি বলি, এ প্রবণতা এই উপমহাদেশের শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাদর্শনের ধারাবাহিকতা।
‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি উপমহাদেশের আবহমান ধারা থেকে ভিন্ন নয়। প্রাচীন ভারতবর্ষে শিক্ষার অধিকার ছিল ব্রাহ্মণ এবং রাজপুরুষদের। রাজ্য শাসনই ছিল সেই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতাও ছিল সীমিত। অবশ্য শিক্ষায় অংশগ্রহণ সামন্তযুগের ইউরোপেও রাজপুরুষদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যাজকশ্রেণির হাতে ছিল সে শিক্ষার ভার। ইংরেজ ভারতবর্ষ দখলে নেওয়ার পরে, মূলত তাদেরই প্রয়োজনে, এ দেশে পাশ্চাত্য ধারায় আধুনিক শিক্ষাদীক্ষার প্রচলন শুরু। পাশ্চাত্য মিশনারি, বণিকশ্রেণি এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতেই এই শিক্ষার সূচনা। সেই শিক্ষাদানের পেছনে ব্রিটিশ সরকারের মূল অভিপ্রায় ছিল এ দেশ থেকে সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের কাজটি নির্বিঘ্ন করার জন্য একদল সমর্থক ও লাঠিয়াল তৈরি করা, যাদের ত্বক ভারতীয়, কিন্তু এ শিক্ষার ভেতর দিয়ে তাদের মন হয়ে উঠবে ব্রিটিশ। ১৭৯২ সালের চার্লস গ্র্যান্টের শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশমালা, ১৮৩৫ সালের মেকলের প্রতিবেদন, ১৮৩৮ সালের উইলিয়াম অ্যাডামসের শিক্ষাবিষয়ক জরিপ, ১৮৫৭ সালের চার্লস উডের ডেসপ্যাচ, ১৮৮২ সালে উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন নিয়োগ এবং শেষে ১৯০৪ সালে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বর্তমান রূপটি দেওয়া হয়। একদিকে চার্লস উডের শিক্ষাবিষয়ক ডেসপ্যাচে কলিকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আর হান্টারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় শিক্ষা কমিশন উচ্চবিদ্যালয়ের পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করেছিল। নীতি হিসেবে সর্বজনীন শিক্ষাদান ব্রিটিশ সরকার কখনো গ্রহণ করেনি, তবে উচ্চশিক্ষার প্রসারে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ সম্ভাবনার কথা ভেবে উচ্চশিক্ষা সংকোচন আর প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় এলিটরা সেই প্রস্তাবে কান দেননি। শিক্ষা ইংরেজ আমলে মুষ্টিমেয়র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার উপলক্ষই থেকে যায়। শিক্ষার দর্শন হয়ে ওঠে—‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’।
ভারত বিভাগের পরে, পাকিস্তান রাষ্ট্রেও শিক্ষা ইংরেজ আমলের মতো সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রায় একচেটিয়া দখলে চলে যায়। পূর্ব পাকিস্তান হয়ে পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ। পশ্চিম পাকিস্তানে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে, আর পূর্ব পাকিস্তানে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা সংকোচন নীতি অনুসরণ করা হতে থাকে। গুণগত দিক থেকেও পশ্চিম পাকিস্তানে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার। শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের পাশাপাশি শ্রেণিবিভক্তির কাজটিও অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করা হয়। পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলনে (১৯৪৭) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দ্রুত একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করতে হবে। ১৯৪৬ সালে, ভারত বিভক্তি নিয়ে যখন দর-কষাকষি চলছিল, তখনই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার প্রয়াস নেয় এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর একদম চেপে বসে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি নয়া উপনিবেশে পরিণত হয় পাকিস্তান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে মার্কিন নয়া সাম্রাজ্যবাদের অন্তর্ভুক্তি পাকিস্তানি নেতাদের ইচ্ছায় হয়েছিল। সই হয়েছিল সিয়েটো ও সেন্টোর মতো সামরিক চুক্তি। ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য প্রয়োজন একটি অনুগত ও দক্ষ প্রশাসন। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আমলে এই শক্তির জোগান পাওয়া যেত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) নামের আমলাতন্ত্রে। একইভাবে পাকিস্তানে গড়ে তোলা হলো সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি), যারা মার্কিনদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে শিখল। ব্রিটিশ আমলের মতো পাকিস্তান আমলেও শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠল দেশের মধ্যেই নয়া উপনিবেশ গড়ে তোলা। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় শিক্ষা সম্মেলনেও আগের শিক্ষানীতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের উদ্দেশ্য হয়ে উঠল সিএসপি হওয়া, যদিও পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্যতা ছিল খুবই সীমিত। ১৯৫২ সালে মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে যে শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি গঠিত হয়, সেখানে বেশ কিছু ভালো সুপারিশ থাকলেও পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার তাগিদ থেকে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলে আরও তিনটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল—১৯৫৯ সালের শরীফ কমিশন, ১৯৬৬ সালের হামুদুর রহমান কমিশন এবং ১৯৬৯ সালের অন্তর্বর্তীকালীন নূর খাঁ কমিশন। প্রতিটি শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য একই—মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার সব সুযোগ নানা কৌশলে সীমাবদ্ধ রাখা। স্কুলে অবৈজ্ঞানিক পন্থায় ধর্মশিক্ষা, প্রথম শ্রেণি থেকে আরবি ভাষা শিক্ষা এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ইংরেজি সাহিত্যের পরিবর্তে ফাংশনাল ইংলিশ নামে কাজ চালানোর মতো ইংরেজি শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। পাশাপাশি চালু করা হয় ব্যয়বহুল মডেল স্কুল, ক্যাডেট কলেজ ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে মূল ধারার স্কুলের তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে ৪০০ গুণ বেশি ব্যয় করা হতে থাকে। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি ও জিইয়ে রাখার প্রকল্প হিসেবেই এসব শিক্ষা সংকোচন নীতি নেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলজুড়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং সংকোচন নীতির বীজ বপন করে চারা তৈরির কাজ সম্পন্ন হতে দেখি, যার লিগেসি বাংলাদেশ এড়াতে পারেনি বলেই প্রতীয়মান হয় শিক্ষানীতিগুলোর পাঠ থেকে।
বিসিএসমুখী শিক্ষা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান আমলের সরকারি কর্মকর্তা, যাঁরা পাকিস্তান সরকারকে সেবা দিয়েছেন, তাঁরা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত হন। যদিও স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের প্রতিপত্তি শুরুর দিকে একটু হ্রাস পেয়েছিল। নতুন যে বিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সম্পর্কে জনধারণা তৈরি হয় যে পাকিস্তান আমল থেকে এসে আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত সিএসপি কর্মকর্তাদের মতো নয় তাঁদের মান। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে যেহেতু নামে-বেনামে সামরিক শাসন চলেছে দীর্ঘকাল, এই কালপর্বে, বেশ বড় সময়জুড়ে সিভিল ব্যুরোক্রেসির তুলনায় সামরিক ব্যুরোক্রেসি অধিকতর আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পরে ফের সিভিল ব্যুরোক্রেসি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাঁদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়তে থাকে। অবধারিতভাবে সরকারি এসব কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে কাজ করিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ক্ষমতাবান শ্রেণি এই আমলাতন্ত্র। এখনো সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতায় যেতে চান; কিন্তু সরকারি চাকরিতে ঢুকে বিদেশে ট্রেনিং এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বহু বছর ধরেই সরকারি কর্মকর্তাদের। এই প্রায়োগিক বাস্তবতার পাশাপাশি রাষ্ট্রের শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষানীতিও জড়িত এই বাস্তবতা নির্মাণে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন যে শিক্ষানীতি প্রস্তাব করেছিল, সেখানে সমাজতন্ত্র অভিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা এবং অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। শিক্ষাবিষয়ক চাকরিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রস্তাব ছিল, যেন সবচেয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীরা সেখানে যোগ দিতে চায়। সব ভবিষ্যৎ নাগরিকের অন্তর্ভুক্তিমূলক সেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন শিক্ষানীতি প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব শিক্ষানীতিতে ক্রমে সাম্প্রদায়িকতা ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা স্পষ্ট হয়। মানসম্মত শিক্ষা এবং মানসম্মত শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসম্মত প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা, গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার বিষয়টি ক্রমেই সাধারণের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। ধনিক শ্রেণি মানসম্মত শিক্ষা কিনে নিতে পারছে। দেশে পছন্দ না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষা কিনতে পারছে। কিন্তু দেশে ক্রমাগত শিক্ষায় বরাদ্দ কমে যাচ্ছে, যা গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার পরিসরকে ক্রমাগত সংকুচিত করে দিচ্ছে।
এ বছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে কম। গত অর্থবছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে কমছে শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বরাদ্দ, যা বহু বছর ধরেই এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। কাজেই শিক্ষা, গবেষণা বা অন্যান্য পেশাগত কাজের উৎকর্ষ সাধনের অনিশ্চয়তার তুলনায় বিসিএস অনেক বেশি আকর্ষণীয় চাকরি। তাই বৈজ্ঞানিক কিংবা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা সাংবাদিক হওয়ার চেয়ে বিসিএসকেই সার মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাব্যবস্থার ঔপনিবেশিক অতীত, সাম্প্রদায়িক বাণিজ্যিক বর্তমান এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে লাইব্রেরির সামনের দীর্ঘ লাইনে। তার অধীত বিষয়ের মনোযোগী পাঠের জন্য নয়, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদে চাকরি পাওয়ার জন্য।
আগে চাই অনুধাবন
নিও-লিবারেল অর্থনীতির যুগে ভালো শিক্ষা এবং দক্ষতা আসলে কিনে নিতে হয় চড়া দামে। উন্নত দেশে এই বিপণনে এক ধরনের আভিজাত্য এসেছে। টাকার বিনিময়ে ভালো পণ্য কেনার মতোই ভালো শিক্ষা কেনা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষা আটকে আছে এখনো ফটকা বাজারে। তাই রাজনৈতিক প্রয়োজনে সাক্ষরতা বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি, বরং তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত সাধারণের শিক্ষার মান। পাশাপাশি তৈরি আছে ধনবানের জন্য স্কুল। মাসে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সেই স্কুলে পড়ে তাঁদের সন্তানেরা। বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এখন দুয়োরানি, ইংরেজি সুয়োরানির কাছে সে হেরে ভূত হয়েছে অনেক আগে। কাজেই মুখে কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষানীতির কথা বললেও, সর্বস্তরের শিক্ষার মাধ্যম বাংলা চালু করাকে স্লোগান হিসেবে নিলেও, আমাদের, যাদেরই সক্ষমতা আছে, লক্ষ্য ইংরেজি শিক্ষায় সন্তানকে শিক্ষিত করা, শিক্ষা শেষে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া। যিনি সেটি আপাতত পারছেন না, তিনি মুক্তি খুঁজছেন বিসিএস চাকরিতে।
শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়েই একটি রাষ্ট্র চলবে কি না, সেই অনুধাবন স্পষ্ট করেই রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে নতুন চিন্তা শুরু হোক।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাইব্রেরিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়তে হচ্ছে? জানলাম, না, তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বিসিএস পরীক্ষায়। দ্বিতীয় অনুসন্ধানে জানলাম, মনোযোগ দিয়ে বিসিএস গাইড থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এত দীর্ঘ লাইন। কিন্তু লাইব্রেরি কেন? উত্তরটি অবশ্য একটু বেদনাদায়ক। অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে পড়াশোনার পরিবেশ পান না, তাই সাতসকালেই চলে আসেন লাইব্রেরিতে। সব বিভাগের শিক্ষার্থীই এখন একই ধারায় পড়াশোনা করছেন। সবার ধ্যান-জ্ঞান বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। লাইব্রেরির কর্মকর্তারা জানালেন, শিক্ষার্থীরা বই তোলেন না লাইব্রেরি থেকে। ধাক্কা খাবার মতোই খবর। সবাই যদি একই লক্ষ্যে একই ধরনের পড়াশোনা করেন, তবে এত বিভাগের কী প্রয়োজন? কবে থেকেই-বা এই প্রবণতা চালু হলো? ভাবলাম, নিশ্চয়ই এটি সাম্প্রতিক কোনো প্রবণতা! স্কুলজীবনের কথা মনে পড়ে। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান অধিকারীদের সাক্ষাৎকার ছাপা হতো পত্রিকায়। তখন সেই অদম্য মেধাবীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ চাইতেন ডাক্তার হতে। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতেন কেউ কেউ। আশির দশকে এক-আধজন সামরিক কর্মকর্তাও হতে চাইতেন। বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করতে চান, এমন তেমন দেখিনি। তাই কৌতূহল নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখলাম, না, এটি মোটেই সাম্প্রতিক প্রবণতা নয় বরং আইসিএস, সিএসপি মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের চাকরি এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বহুকাল আগে থেকেই। এমনকি অত্যুক্তি হবে না যদি বলি, এ প্রবণতা এই উপমহাদেশের শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাদর্শনের ধারাবাহিকতা।
‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি উপমহাদেশের আবহমান ধারা থেকে ভিন্ন নয়। প্রাচীন ভারতবর্ষে শিক্ষার অধিকার ছিল ব্রাহ্মণ এবং রাজপুরুষদের। রাজ্য শাসনই ছিল সেই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতাও ছিল সীমিত। অবশ্য শিক্ষায় অংশগ্রহণ সামন্তযুগের ইউরোপেও রাজপুরুষদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যাজকশ্রেণির হাতে ছিল সে শিক্ষার ভার। ইংরেজ ভারতবর্ষ দখলে নেওয়ার পরে, মূলত তাদেরই প্রয়োজনে, এ দেশে পাশ্চাত্য ধারায় আধুনিক শিক্ষাদীক্ষার প্রচলন শুরু। পাশ্চাত্য মিশনারি, বণিকশ্রেণি এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতেই এই শিক্ষার সূচনা। সেই শিক্ষাদানের পেছনে ব্রিটিশ সরকারের মূল অভিপ্রায় ছিল এ দেশ থেকে সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের কাজটি নির্বিঘ্ন করার জন্য একদল সমর্থক ও লাঠিয়াল তৈরি করা, যাদের ত্বক ভারতীয়, কিন্তু এ শিক্ষার ভেতর দিয়ে তাদের মন হয়ে উঠবে ব্রিটিশ। ১৭৯২ সালের চার্লস গ্র্যান্টের শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশমালা, ১৮৩৫ সালের মেকলের প্রতিবেদন, ১৮৩৮ সালের উইলিয়াম অ্যাডামসের শিক্ষাবিষয়ক জরিপ, ১৮৫৭ সালের চার্লস উডের ডেসপ্যাচ, ১৮৮২ সালে উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন নিয়োগ এবং শেষে ১৯০৪ সালে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বর্তমান রূপটি দেওয়া হয়। একদিকে চার্লস উডের শিক্ষাবিষয়ক ডেসপ্যাচে কলিকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আর হান্টারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় শিক্ষা কমিশন উচ্চবিদ্যালয়ের পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করেছিল। নীতি হিসেবে সর্বজনীন শিক্ষাদান ব্রিটিশ সরকার কখনো গ্রহণ করেনি, তবে উচ্চশিক্ষার প্রসারে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ সম্ভাবনার কথা ভেবে উচ্চশিক্ষা সংকোচন আর প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় এলিটরা সেই প্রস্তাবে কান দেননি। শিক্ষা ইংরেজ আমলে মুষ্টিমেয়র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার উপলক্ষই থেকে যায়। শিক্ষার দর্শন হয়ে ওঠে—‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’।
ভারত বিভাগের পরে, পাকিস্তান রাষ্ট্রেও শিক্ষা ইংরেজ আমলের মতো সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রায় একচেটিয়া দখলে চলে যায়। পূর্ব পাকিস্তান হয়ে পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ। পশ্চিম পাকিস্তানে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে, আর পূর্ব পাকিস্তানে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা সংকোচন নীতি অনুসরণ করা হতে থাকে। গুণগত দিক থেকেও পশ্চিম পাকিস্তানে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার। শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের পাশাপাশি শ্রেণিবিভক্তির কাজটিও অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করা হয়। পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলনে (১৯৪৭) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দ্রুত একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করতে হবে। ১৯৪৬ সালে, ভারত বিভক্তি নিয়ে যখন দর-কষাকষি চলছিল, তখনই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার প্রয়াস নেয় এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর একদম চেপে বসে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি নয়া উপনিবেশে পরিণত হয় পাকিস্তান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে মার্কিন নয়া সাম্রাজ্যবাদের অন্তর্ভুক্তি পাকিস্তানি নেতাদের ইচ্ছায় হয়েছিল। সই হয়েছিল সিয়েটো ও সেন্টোর মতো সামরিক চুক্তি। ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য প্রয়োজন একটি অনুগত ও দক্ষ প্রশাসন। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আমলে এই শক্তির জোগান পাওয়া যেত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) নামের আমলাতন্ত্রে। একইভাবে পাকিস্তানে গড়ে তোলা হলো সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি), যারা মার্কিনদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে শিখল। ব্রিটিশ আমলের মতো পাকিস্তান আমলেও শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠল দেশের মধ্যেই নয়া উপনিবেশ গড়ে তোলা। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় শিক্ষা সম্মেলনেও আগের শিক্ষানীতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের উদ্দেশ্য হয়ে উঠল সিএসপি হওয়া, যদিও পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্যতা ছিল খুবই সীমিত। ১৯৫২ সালে মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে যে শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি গঠিত হয়, সেখানে বেশ কিছু ভালো সুপারিশ থাকলেও পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার তাগিদ থেকে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলে আরও তিনটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল—১৯৫৯ সালের শরীফ কমিশন, ১৯৬৬ সালের হামুদুর রহমান কমিশন এবং ১৯৬৯ সালের অন্তর্বর্তীকালীন নূর খাঁ কমিশন। প্রতিটি শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য একই—মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার সব সুযোগ নানা কৌশলে সীমাবদ্ধ রাখা। স্কুলে অবৈজ্ঞানিক পন্থায় ধর্মশিক্ষা, প্রথম শ্রেণি থেকে আরবি ভাষা শিক্ষা এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ইংরেজি সাহিত্যের পরিবর্তে ফাংশনাল ইংলিশ নামে কাজ চালানোর মতো ইংরেজি শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। পাশাপাশি চালু করা হয় ব্যয়বহুল মডেল স্কুল, ক্যাডেট কলেজ ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে মূল ধারার স্কুলের তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে ৪০০ গুণ বেশি ব্যয় করা হতে থাকে। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি ও জিইয়ে রাখার প্রকল্প হিসেবেই এসব শিক্ষা সংকোচন নীতি নেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলজুড়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং সংকোচন নীতির বীজ বপন করে চারা তৈরির কাজ সম্পন্ন হতে দেখি, যার লিগেসি বাংলাদেশ এড়াতে পারেনি বলেই প্রতীয়মান হয় শিক্ষানীতিগুলোর পাঠ থেকে।
বিসিএসমুখী শিক্ষা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান আমলের সরকারি কর্মকর্তা, যাঁরা পাকিস্তান সরকারকে সেবা দিয়েছেন, তাঁরা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত হন। যদিও স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের প্রতিপত্তি শুরুর দিকে একটু হ্রাস পেয়েছিল। নতুন যে বিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সম্পর্কে জনধারণা তৈরি হয় যে পাকিস্তান আমল থেকে এসে আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত সিএসপি কর্মকর্তাদের মতো নয় তাঁদের মান। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে যেহেতু নামে-বেনামে সামরিক শাসন চলেছে দীর্ঘকাল, এই কালপর্বে, বেশ বড় সময়জুড়ে সিভিল ব্যুরোক্রেসির তুলনায় সামরিক ব্যুরোক্রেসি অধিকতর আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পরে ফের সিভিল ব্যুরোক্রেসি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাঁদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়তে থাকে। অবধারিতভাবে সরকারি এসব কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে কাজ করিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ক্ষমতাবান শ্রেণি এই আমলাতন্ত্র। এখনো সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতায় যেতে চান; কিন্তু সরকারি চাকরিতে ঢুকে বিদেশে ট্রেনিং এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বহু বছর ধরেই সরকারি কর্মকর্তাদের। এই প্রায়োগিক বাস্তবতার পাশাপাশি রাষ্ট্রের শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষানীতিও জড়িত এই বাস্তবতা নির্মাণে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন যে শিক্ষানীতি প্রস্তাব করেছিল, সেখানে সমাজতন্ত্র অভিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা এবং অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। শিক্ষাবিষয়ক চাকরিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রস্তাব ছিল, যেন সবচেয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীরা সেখানে যোগ দিতে চায়। সব ভবিষ্যৎ নাগরিকের অন্তর্ভুক্তিমূলক সেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন শিক্ষানীতি প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব শিক্ষানীতিতে ক্রমে সাম্প্রদায়িকতা ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা স্পষ্ট হয়। মানসম্মত শিক্ষা এবং মানসম্মত শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসম্মত প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা, গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার বিষয়টি ক্রমেই সাধারণের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। ধনিক শ্রেণি মানসম্মত শিক্ষা কিনে নিতে পারছে। দেশে পছন্দ না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষা কিনতে পারছে। কিন্তু দেশে ক্রমাগত শিক্ষায় বরাদ্দ কমে যাচ্ছে, যা গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার পরিসরকে ক্রমাগত সংকুচিত করে দিচ্ছে।
এ বছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে কম। গত অর্থবছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে কমছে শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বরাদ্দ, যা বহু বছর ধরেই এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। কাজেই শিক্ষা, গবেষণা বা অন্যান্য পেশাগত কাজের উৎকর্ষ সাধনের অনিশ্চয়তার তুলনায় বিসিএস অনেক বেশি আকর্ষণীয় চাকরি। তাই বৈজ্ঞানিক কিংবা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা সাংবাদিক হওয়ার চেয়ে বিসিএসকেই সার মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাব্যবস্থার ঔপনিবেশিক অতীত, সাম্প্রদায়িক বাণিজ্যিক বর্তমান এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে লাইব্রেরির সামনের দীর্ঘ লাইনে। তার অধীত বিষয়ের মনোযোগী পাঠের জন্য নয়, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদে চাকরি পাওয়ার জন্য।
আগে চাই অনুধাবন
নিও-লিবারেল অর্থনীতির যুগে ভালো শিক্ষা এবং দক্ষতা আসলে কিনে নিতে হয় চড়া দামে। উন্নত দেশে এই বিপণনে এক ধরনের আভিজাত্য এসেছে। টাকার বিনিময়ে ভালো পণ্য কেনার মতোই ভালো শিক্ষা কেনা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষা আটকে আছে এখনো ফটকা বাজারে। তাই রাজনৈতিক প্রয়োজনে সাক্ষরতা বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি, বরং তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত সাধারণের শিক্ষার মান। পাশাপাশি তৈরি আছে ধনবানের জন্য স্কুল। মাসে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সেই স্কুলে পড়ে তাঁদের সন্তানেরা। বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এখন দুয়োরানি, ইংরেজি সুয়োরানির কাছে সে হেরে ভূত হয়েছে অনেক আগে। কাজেই মুখে কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষানীতির কথা বললেও, সর্বস্তরের শিক্ষার মাধ্যম বাংলা চালু করাকে স্লোগান হিসেবে নিলেও, আমাদের, যাদেরই সক্ষমতা আছে, লক্ষ্য ইংরেজি শিক্ষায় সন্তানকে শিক্ষিত করা, শিক্ষা শেষে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া। যিনি সেটি আপাতত পারছেন না, তিনি মুক্তি খুঁজছেন বিসিএস চাকরিতে।
শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়েই একটি রাষ্ট্র চলবে কি না, সেই অনুধাবন স্পষ্ট করেই রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে নতুন চিন্তা শুরু হোক।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কাবেরী গায়েন

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাইব্রেরিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়তে হচ্ছে? জানলাম, না, তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বিসিএস পরীক্ষায়। দ্বিতীয় অনুসন্ধানে জানলাম, মনোযোগ দিয়ে বিসিএস গাইড থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এত দীর্ঘ লাইন। কিন্তু লাইব্রেরি কেন? উত্তরটি অবশ্য একটু বেদনাদায়ক। অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে পড়াশোনার পরিবেশ পান না, তাই সাতসকালেই চলে আসেন লাইব্রেরিতে। সব বিভাগের শিক্ষার্থীই এখন একই ধারায় পড়াশোনা করছেন। সবার ধ্যান-জ্ঞান বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। লাইব্রেরির কর্মকর্তারা জানালেন, শিক্ষার্থীরা বই তোলেন না লাইব্রেরি থেকে। ধাক্কা খাবার মতোই খবর। সবাই যদি একই লক্ষ্যে একই ধরনের পড়াশোনা করেন, তবে এত বিভাগের কী প্রয়োজন? কবে থেকেই-বা এই প্রবণতা চালু হলো? ভাবলাম, নিশ্চয়ই এটি সাম্প্রতিক কোনো প্রবণতা! স্কুলজীবনের কথা মনে পড়ে। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান অধিকারীদের সাক্ষাৎকার ছাপা হতো পত্রিকায়। তখন সেই অদম্য মেধাবীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ চাইতেন ডাক্তার হতে। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতেন কেউ কেউ। আশির দশকে এক-আধজন সামরিক কর্মকর্তাও হতে চাইতেন। বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করতে চান, এমন তেমন দেখিনি। তাই কৌতূহল নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখলাম, না, এটি মোটেই সাম্প্রতিক প্রবণতা নয় বরং আইসিএস, সিএসপি মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের চাকরি এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বহুকাল আগে থেকেই। এমনকি অত্যুক্তি হবে না যদি বলি, এ প্রবণতা এই উপমহাদেশের শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাদর্শনের ধারাবাহিকতা।
‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি উপমহাদেশের আবহমান ধারা থেকে ভিন্ন নয়। প্রাচীন ভারতবর্ষে শিক্ষার অধিকার ছিল ব্রাহ্মণ এবং রাজপুরুষদের। রাজ্য শাসনই ছিল সেই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতাও ছিল সীমিত। অবশ্য শিক্ষায় অংশগ্রহণ সামন্তযুগের ইউরোপেও রাজপুরুষদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যাজকশ্রেণির হাতে ছিল সে শিক্ষার ভার। ইংরেজ ভারতবর্ষ দখলে নেওয়ার পরে, মূলত তাদেরই প্রয়োজনে, এ দেশে পাশ্চাত্য ধারায় আধুনিক শিক্ষাদীক্ষার প্রচলন শুরু। পাশ্চাত্য মিশনারি, বণিকশ্রেণি এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতেই এই শিক্ষার সূচনা। সেই শিক্ষাদানের পেছনে ব্রিটিশ সরকারের মূল অভিপ্রায় ছিল এ দেশ থেকে সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের কাজটি নির্বিঘ্ন করার জন্য একদল সমর্থক ও লাঠিয়াল তৈরি করা, যাদের ত্বক ভারতীয়, কিন্তু এ শিক্ষার ভেতর দিয়ে তাদের মন হয়ে উঠবে ব্রিটিশ। ১৭৯২ সালের চার্লস গ্র্যান্টের শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশমালা, ১৮৩৫ সালের মেকলের প্রতিবেদন, ১৮৩৮ সালের উইলিয়াম অ্যাডামসের শিক্ষাবিষয়ক জরিপ, ১৮৫৭ সালের চার্লস উডের ডেসপ্যাচ, ১৮৮২ সালে উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন নিয়োগ এবং শেষে ১৯০৪ সালে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বর্তমান রূপটি দেওয়া হয়। একদিকে চার্লস উডের শিক্ষাবিষয়ক ডেসপ্যাচে কলিকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আর হান্টারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় শিক্ষা কমিশন উচ্চবিদ্যালয়ের পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করেছিল। নীতি হিসেবে সর্বজনীন শিক্ষাদান ব্রিটিশ সরকার কখনো গ্রহণ করেনি, তবে উচ্চশিক্ষার প্রসারে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ সম্ভাবনার কথা ভেবে উচ্চশিক্ষা সংকোচন আর প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় এলিটরা সেই প্রস্তাবে কান দেননি। শিক্ষা ইংরেজ আমলে মুষ্টিমেয়র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার উপলক্ষই থেকে যায়। শিক্ষার দর্শন হয়ে ওঠে—‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’।
ভারত বিভাগের পরে, পাকিস্তান রাষ্ট্রেও শিক্ষা ইংরেজ আমলের মতো সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রায় একচেটিয়া দখলে চলে যায়। পূর্ব পাকিস্তান হয়ে পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ। পশ্চিম পাকিস্তানে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে, আর পূর্ব পাকিস্তানে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা সংকোচন নীতি অনুসরণ করা হতে থাকে। গুণগত দিক থেকেও পশ্চিম পাকিস্তানে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার। শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের পাশাপাশি শ্রেণিবিভক্তির কাজটিও অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করা হয়। পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলনে (১৯৪৭) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দ্রুত একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করতে হবে। ১৯৪৬ সালে, ভারত বিভক্তি নিয়ে যখন দর-কষাকষি চলছিল, তখনই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার প্রয়াস নেয় এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর একদম চেপে বসে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি নয়া উপনিবেশে পরিণত হয় পাকিস্তান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে মার্কিন নয়া সাম্রাজ্যবাদের অন্তর্ভুক্তি পাকিস্তানি নেতাদের ইচ্ছায় হয়েছিল। সই হয়েছিল সিয়েটো ও সেন্টোর মতো সামরিক চুক্তি। ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য প্রয়োজন একটি অনুগত ও দক্ষ প্রশাসন। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আমলে এই শক্তির জোগান পাওয়া যেত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) নামের আমলাতন্ত্রে। একইভাবে পাকিস্তানে গড়ে তোলা হলো সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি), যারা মার্কিনদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে শিখল। ব্রিটিশ আমলের মতো পাকিস্তান আমলেও শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠল দেশের মধ্যেই নয়া উপনিবেশ গড়ে তোলা। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় শিক্ষা সম্মেলনেও আগের শিক্ষানীতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের উদ্দেশ্য হয়ে উঠল সিএসপি হওয়া, যদিও পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্যতা ছিল খুবই সীমিত। ১৯৫২ সালে মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে যে শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি গঠিত হয়, সেখানে বেশ কিছু ভালো সুপারিশ থাকলেও পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার তাগিদ থেকে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলে আরও তিনটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল—১৯৫৯ সালের শরীফ কমিশন, ১৯৬৬ সালের হামুদুর রহমান কমিশন এবং ১৯৬৯ সালের অন্তর্বর্তীকালীন নূর খাঁ কমিশন। প্রতিটি শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য একই—মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার সব সুযোগ নানা কৌশলে সীমাবদ্ধ রাখা। স্কুলে অবৈজ্ঞানিক পন্থায় ধর্মশিক্ষা, প্রথম শ্রেণি থেকে আরবি ভাষা শিক্ষা এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ইংরেজি সাহিত্যের পরিবর্তে ফাংশনাল ইংলিশ নামে কাজ চালানোর মতো ইংরেজি শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। পাশাপাশি চালু করা হয় ব্যয়বহুল মডেল স্কুল, ক্যাডেট কলেজ ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে মূল ধারার স্কুলের তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে ৪০০ গুণ বেশি ব্যয় করা হতে থাকে। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি ও জিইয়ে রাখার প্রকল্প হিসেবেই এসব শিক্ষা সংকোচন নীতি নেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলজুড়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং সংকোচন নীতির বীজ বপন করে চারা তৈরির কাজ সম্পন্ন হতে দেখি, যার লিগেসি বাংলাদেশ এড়াতে পারেনি বলেই প্রতীয়মান হয় শিক্ষানীতিগুলোর পাঠ থেকে।
বিসিএসমুখী শিক্ষা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান আমলের সরকারি কর্মকর্তা, যাঁরা পাকিস্তান সরকারকে সেবা দিয়েছেন, তাঁরা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত হন। যদিও স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের প্রতিপত্তি শুরুর দিকে একটু হ্রাস পেয়েছিল। নতুন যে বিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সম্পর্কে জনধারণা তৈরি হয় যে পাকিস্তান আমল থেকে এসে আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত সিএসপি কর্মকর্তাদের মতো নয় তাঁদের মান। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে যেহেতু নামে-বেনামে সামরিক শাসন চলেছে দীর্ঘকাল, এই কালপর্বে, বেশ বড় সময়জুড়ে সিভিল ব্যুরোক্রেসির তুলনায় সামরিক ব্যুরোক্রেসি অধিকতর আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পরে ফের সিভিল ব্যুরোক্রেসি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাঁদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়তে থাকে। অবধারিতভাবে সরকারি এসব কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে কাজ করিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ক্ষমতাবান শ্রেণি এই আমলাতন্ত্র। এখনো সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতায় যেতে চান; কিন্তু সরকারি চাকরিতে ঢুকে বিদেশে ট্রেনিং এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বহু বছর ধরেই সরকারি কর্মকর্তাদের। এই প্রায়োগিক বাস্তবতার পাশাপাশি রাষ্ট্রের শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষানীতিও জড়িত এই বাস্তবতা নির্মাণে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন যে শিক্ষানীতি প্রস্তাব করেছিল, সেখানে সমাজতন্ত্র অভিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা এবং অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। শিক্ষাবিষয়ক চাকরিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রস্তাব ছিল, যেন সবচেয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীরা সেখানে যোগ দিতে চায়। সব ভবিষ্যৎ নাগরিকের অন্তর্ভুক্তিমূলক সেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন শিক্ষানীতি প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব শিক্ষানীতিতে ক্রমে সাম্প্রদায়িকতা ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা স্পষ্ট হয়। মানসম্মত শিক্ষা এবং মানসম্মত শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসম্মত প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা, গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার বিষয়টি ক্রমেই সাধারণের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। ধনিক শ্রেণি মানসম্মত শিক্ষা কিনে নিতে পারছে। দেশে পছন্দ না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষা কিনতে পারছে। কিন্তু দেশে ক্রমাগত শিক্ষায় বরাদ্দ কমে যাচ্ছে, যা গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার পরিসরকে ক্রমাগত সংকুচিত করে দিচ্ছে।
এ বছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে কম। গত অর্থবছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে কমছে শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বরাদ্দ, যা বহু বছর ধরেই এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। কাজেই শিক্ষা, গবেষণা বা অন্যান্য পেশাগত কাজের উৎকর্ষ সাধনের অনিশ্চয়তার তুলনায় বিসিএস অনেক বেশি আকর্ষণীয় চাকরি। তাই বৈজ্ঞানিক কিংবা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা সাংবাদিক হওয়ার চেয়ে বিসিএসকেই সার মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাব্যবস্থার ঔপনিবেশিক অতীত, সাম্প্রদায়িক বাণিজ্যিক বর্তমান এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে লাইব্রেরির সামনের দীর্ঘ লাইনে। তার অধীত বিষয়ের মনোযোগী পাঠের জন্য নয়, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদে চাকরি পাওয়ার জন্য।
আগে চাই অনুধাবন
নিও-লিবারেল অর্থনীতির যুগে ভালো শিক্ষা এবং দক্ষতা আসলে কিনে নিতে হয় চড়া দামে। উন্নত দেশে এই বিপণনে এক ধরনের আভিজাত্য এসেছে। টাকার বিনিময়ে ভালো পণ্য কেনার মতোই ভালো শিক্ষা কেনা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষা আটকে আছে এখনো ফটকা বাজারে। তাই রাজনৈতিক প্রয়োজনে সাক্ষরতা বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি, বরং তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত সাধারণের শিক্ষার মান। পাশাপাশি তৈরি আছে ধনবানের জন্য স্কুল। মাসে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সেই স্কুলে পড়ে তাঁদের সন্তানেরা। বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এখন দুয়োরানি, ইংরেজি সুয়োরানির কাছে সে হেরে ভূত হয়েছে অনেক আগে। কাজেই মুখে কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষানীতির কথা বললেও, সর্বস্তরের শিক্ষার মাধ্যম বাংলা চালু করাকে স্লোগান হিসেবে নিলেও, আমাদের, যাদেরই সক্ষমতা আছে, লক্ষ্য ইংরেজি শিক্ষায় সন্তানকে শিক্ষিত করা, শিক্ষা শেষে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া। যিনি সেটি আপাতত পারছেন না, তিনি মুক্তি খুঁজছেন বিসিএস চাকরিতে।
শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়েই একটি রাষ্ট্র চলবে কি না, সেই অনুধাবন স্পষ্ট করেই রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে নতুন চিন্তা শুরু হোক।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাইব্রেরিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়তে হচ্ছে? জানলাম, না, তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বিসিএস পরীক্ষায়। দ্বিতীয় অনুসন্ধানে জানলাম, মনোযোগ দিয়ে বিসিএস গাইড থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এত দীর্ঘ লাইন। কিন্তু লাইব্রেরি কেন? উত্তরটি অবশ্য একটু বেদনাদায়ক। অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে পড়াশোনার পরিবেশ পান না, তাই সাতসকালেই চলে আসেন লাইব্রেরিতে। সব বিভাগের শিক্ষার্থীই এখন একই ধারায় পড়াশোনা করছেন। সবার ধ্যান-জ্ঞান বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। লাইব্রেরির কর্মকর্তারা জানালেন, শিক্ষার্থীরা বই তোলেন না লাইব্রেরি থেকে। ধাক্কা খাবার মতোই খবর। সবাই যদি একই লক্ষ্যে একই ধরনের পড়াশোনা করেন, তবে এত বিভাগের কী প্রয়োজন? কবে থেকেই-বা এই প্রবণতা চালু হলো? ভাবলাম, নিশ্চয়ই এটি সাম্প্রতিক কোনো প্রবণতা! স্কুলজীবনের কথা মনে পড়ে। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান অধিকারীদের সাক্ষাৎকার ছাপা হতো পত্রিকায়। তখন সেই অদম্য মেধাবীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ চাইতেন ডাক্তার হতে। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতেন কেউ কেউ। আশির দশকে এক-আধজন সামরিক কর্মকর্তাও হতে চাইতেন। বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করতে চান, এমন তেমন দেখিনি। তাই কৌতূহল নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখলাম, না, এটি মোটেই সাম্প্রতিক প্রবণতা নয় বরং আইসিএস, সিএসপি মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের চাকরি এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বহুকাল আগে থেকেই। এমনকি অত্যুক্তি হবে না যদি বলি, এ প্রবণতা এই উপমহাদেশের শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাদর্শনের ধারাবাহিকতা।
‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি উপমহাদেশের আবহমান ধারা থেকে ভিন্ন নয়। প্রাচীন ভারতবর্ষে শিক্ষার অধিকার ছিল ব্রাহ্মণ এবং রাজপুরুষদের। রাজ্য শাসনই ছিল সেই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতাও ছিল সীমিত। অবশ্য শিক্ষায় অংশগ্রহণ সামন্তযুগের ইউরোপেও রাজপুরুষদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যাজকশ্রেণির হাতে ছিল সে শিক্ষার ভার। ইংরেজ ভারতবর্ষ দখলে নেওয়ার পরে, মূলত তাদেরই প্রয়োজনে, এ দেশে পাশ্চাত্য ধারায় আধুনিক শিক্ষাদীক্ষার প্রচলন শুরু। পাশ্চাত্য মিশনারি, বণিকশ্রেণি এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতেই এই শিক্ষার সূচনা। সেই শিক্ষাদানের পেছনে ব্রিটিশ সরকারের মূল অভিপ্রায় ছিল এ দেশ থেকে সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের কাজটি নির্বিঘ্ন করার জন্য একদল সমর্থক ও লাঠিয়াল তৈরি করা, যাদের ত্বক ভারতীয়, কিন্তু এ শিক্ষার ভেতর দিয়ে তাদের মন হয়ে উঠবে ব্রিটিশ। ১৭৯২ সালের চার্লস গ্র্যান্টের শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশমালা, ১৮৩৫ সালের মেকলের প্রতিবেদন, ১৮৩৮ সালের উইলিয়াম অ্যাডামসের শিক্ষাবিষয়ক জরিপ, ১৮৫৭ সালের চার্লস উডের ডেসপ্যাচ, ১৮৮২ সালে উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন নিয়োগ এবং শেষে ১৯০৪ সালে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বর্তমান রূপটি দেওয়া হয়। একদিকে চার্লস উডের শিক্ষাবিষয়ক ডেসপ্যাচে কলিকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আর হান্টারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় শিক্ষা কমিশন উচ্চবিদ্যালয়ের পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করেছিল। নীতি হিসেবে সর্বজনীন শিক্ষাদান ব্রিটিশ সরকার কখনো গ্রহণ করেনি, তবে উচ্চশিক্ষার প্রসারে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ সম্ভাবনার কথা ভেবে উচ্চশিক্ষা সংকোচন আর প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় এলিটরা সেই প্রস্তাবে কান দেননি। শিক্ষা ইংরেজ আমলে মুষ্টিমেয়র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার উপলক্ষই থেকে যায়। শিক্ষার দর্শন হয়ে ওঠে—‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’।
ভারত বিভাগের পরে, পাকিস্তান রাষ্ট্রেও শিক্ষা ইংরেজ আমলের মতো সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রায় একচেটিয়া দখলে চলে যায়। পূর্ব পাকিস্তান হয়ে পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ। পশ্চিম পাকিস্তানে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে, আর পূর্ব পাকিস্তানে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা সংকোচন নীতি অনুসরণ করা হতে থাকে। গুণগত দিক থেকেও পশ্চিম পাকিস্তানে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার। শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের পাশাপাশি শ্রেণিবিভক্তির কাজটিও অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করা হয়। পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলনে (১৯৪৭) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দ্রুত একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করতে হবে। ১৯৪৬ সালে, ভারত বিভক্তি নিয়ে যখন দর-কষাকষি চলছিল, তখনই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার প্রয়াস নেয় এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর একদম চেপে বসে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি নয়া উপনিবেশে পরিণত হয় পাকিস্তান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে মার্কিন নয়া সাম্রাজ্যবাদের অন্তর্ভুক্তি পাকিস্তানি নেতাদের ইচ্ছায় হয়েছিল। সই হয়েছিল সিয়েটো ও সেন্টোর মতো সামরিক চুক্তি। ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য প্রয়োজন একটি অনুগত ও দক্ষ প্রশাসন। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আমলে এই শক্তির জোগান পাওয়া যেত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) নামের আমলাতন্ত্রে। একইভাবে পাকিস্তানে গড়ে তোলা হলো সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি), যারা মার্কিনদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে শিখল। ব্রিটিশ আমলের মতো পাকিস্তান আমলেও শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠল দেশের মধ্যেই নয়া উপনিবেশ গড়ে তোলা। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় শিক্ষা সম্মেলনেও আগের শিক্ষানীতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের উদ্দেশ্য হয়ে উঠল সিএসপি হওয়া, যদিও পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্যতা ছিল খুবই সীমিত। ১৯৫২ সালে মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে যে শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি গঠিত হয়, সেখানে বেশ কিছু ভালো সুপারিশ থাকলেও পাকিস্তানের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার তাগিদ থেকে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলে আরও তিনটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল—১৯৫৯ সালের শরীফ কমিশন, ১৯৬৬ সালের হামুদুর রহমান কমিশন এবং ১৯৬৯ সালের অন্তর্বর্তীকালীন নূর খাঁ কমিশন। প্রতিটি শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য একই—মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার সব সুযোগ নানা কৌশলে সীমাবদ্ধ রাখা। স্কুলে অবৈজ্ঞানিক পন্থায় ধর্মশিক্ষা, প্রথম শ্রেণি থেকে আরবি ভাষা শিক্ষা এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ইংরেজি সাহিত্যের পরিবর্তে ফাংশনাল ইংলিশ নামে কাজ চালানোর মতো ইংরেজি শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। পাশাপাশি চালু করা হয় ব্যয়বহুল মডেল স্কুল, ক্যাডেট কলেজ ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে মূল ধারার স্কুলের তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে ৪০০ গুণ বেশি ব্যয় করা হতে থাকে। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি ও জিইয়ে রাখার প্রকল্প হিসেবেই এসব শিক্ষা সংকোচন নীতি নেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলজুড়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং সংকোচন নীতির বীজ বপন করে চারা তৈরির কাজ সম্পন্ন হতে দেখি, যার লিগেসি বাংলাদেশ এড়াতে পারেনি বলেই প্রতীয়মান হয় শিক্ষানীতিগুলোর পাঠ থেকে।
বিসিএসমুখী শিক্ষা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান আমলের সরকারি কর্মকর্তা, যাঁরা পাকিস্তান সরকারকে সেবা দিয়েছেন, তাঁরা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত হন। যদিও স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের প্রতিপত্তি শুরুর দিকে একটু হ্রাস পেয়েছিল। নতুন যে বিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সম্পর্কে জনধারণা তৈরি হয় যে পাকিস্তান আমল থেকে এসে আমলাতন্ত্রে আত্তীকৃত সিএসপি কর্মকর্তাদের মতো নয় তাঁদের মান। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে যেহেতু নামে-বেনামে সামরিক শাসন চলেছে দীর্ঘকাল, এই কালপর্বে, বেশ বড় সময়জুড়ে সিভিল ব্যুরোক্রেসির তুলনায় সামরিক ব্যুরোক্রেসি অধিকতর আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পরে ফের সিভিল ব্যুরোক্রেসি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাঁদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়তে থাকে। অবধারিতভাবে সরকারি এসব কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে কাজ করিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ক্ষমতাবান শ্রেণি এই আমলাতন্ত্র। এখনো সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতায় যেতে চান; কিন্তু সরকারি চাকরিতে ঢুকে বিদেশে ট্রেনিং এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বহু বছর ধরেই সরকারি কর্মকর্তাদের। এই প্রায়োগিক বাস্তবতার পাশাপাশি রাষ্ট্রের শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষানীতিও জড়িত এই বাস্তবতা নির্মাণে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন যে শিক্ষানীতি প্রস্তাব করেছিল, সেখানে সমাজতন্ত্র অভিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা এবং অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। শিক্ষাবিষয়ক চাকরিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রস্তাব ছিল, যেন সবচেয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীরা সেখানে যোগ দিতে চায়। সব ভবিষ্যৎ নাগরিকের অন্তর্ভুক্তিমূলক সেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন শিক্ষানীতি প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব শিক্ষানীতিতে ক্রমে সাম্প্রদায়িকতা ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা স্পষ্ট হয়। মানসম্মত শিক্ষা এবং মানসম্মত শিক্ষায় সাধারণের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসম্মত প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা, গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার বিষয়টি ক্রমেই সাধারণের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। ধনিক শ্রেণি মানসম্মত শিক্ষা কিনে নিতে পারছে। দেশে পছন্দ না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষা কিনতে পারছে। কিন্তু দেশে ক্রমাগত শিক্ষায় বরাদ্দ কমে যাচ্ছে, যা গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার পরিসরকে ক্রমাগত সংকুচিত করে দিচ্ছে।
এ বছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে কম। গত অর্থবছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে কমছে শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বরাদ্দ, যা বহু বছর ধরেই এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। কাজেই শিক্ষা, গবেষণা বা অন্যান্য পেশাগত কাজের উৎকর্ষ সাধনের অনিশ্চয়তার তুলনায় বিসিএস অনেক বেশি আকর্ষণীয় চাকরি। তাই বৈজ্ঞানিক কিংবা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা সাংবাদিক হওয়ার চেয়ে বিসিএসকেই সার মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাব্যবস্থার ঔপনিবেশিক অতীত, সাম্প্রদায়িক বাণিজ্যিক বর্তমান এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে লাইব্রেরির সামনের দীর্ঘ লাইনে। তার অধীত বিষয়ের মনোযোগী পাঠের জন্য নয়, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদে চাকরি পাওয়ার জন্য।
আগে চাই অনুধাবন
নিও-লিবারেল অর্থনীতির যুগে ভালো শিক্ষা এবং দক্ষতা আসলে কিনে নিতে হয় চড়া দামে। উন্নত দেশে এই বিপণনে এক ধরনের আভিজাত্য এসেছে। টাকার বিনিময়ে ভালো পণ্য কেনার মতোই ভালো শিক্ষা কেনা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষা আটকে আছে এখনো ফটকা বাজারে। তাই রাজনৈতিক প্রয়োজনে সাক্ষরতা বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি, বরং তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত সাধারণের শিক্ষার মান। পাশাপাশি তৈরি আছে ধনবানের জন্য স্কুল। মাসে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সেই স্কুলে পড়ে তাঁদের সন্তানেরা। বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এখন দুয়োরানি, ইংরেজি সুয়োরানির কাছে সে হেরে ভূত হয়েছে অনেক আগে। কাজেই মুখে কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষানীতির কথা বললেও, সর্বস্তরের শিক্ষার মাধ্যম বাংলা চালু করাকে স্লোগান হিসেবে নিলেও, আমাদের, যাদেরই সক্ষমতা আছে, লক্ষ্য ইংরেজি শিক্ষায় সন্তানকে শিক্ষিত করা, শিক্ষা শেষে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া। যিনি সেটি আপাতত পারছেন না, তিনি মুক্তি খুঁজছেন বিসিএস চাকরিতে।
শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়েই একটি রাষ্ট্র চলবে কি না, সেই অনুধাবন স্পষ্ট করেই রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে নতুন চিন্তা শুরু হোক।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাই
২৬ জুলাই ২০২৩
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাই
২৬ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাই
২৬ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

পত্রিকায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, চাবির গোছা ও ব্যাগের স্তূপ; আপ্লুত হয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই লাইন। কিন্তু এর জন্য লাইব্রেরি কেন? তবে কি বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসছে আজকাল, যার জন্য লাই
২৬ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫