Ajker Patrika

৭ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রির আশা চাড়োল গ্রামের চাষিদের

আল মামুন জীবন, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও)
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১৯: ৫৩
৭ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রির আশা চাড়োল গ্রামের চাষিদের

কয়েক বছর আগে গম, ভুট্টা, আলুর চাষ বাদ দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামের হাতে গোনা কয়েকজন চাষি শুরু করেছিলেন পেঁয়াজের বীজ চাষাবাদ। বীজ চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় ওই গ্রামেই চাষির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৯ জনে। চলতি বছর ৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রায় ৪২ হাজার ৯৭০ কেজি পেঁয়াজের বীজের পাওয়া আশা করছেন তাঁরা। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাশের দোগাছি গ্রামের ৫০ জন, ঠুমনিয়া গ্রামের ৬০ জনসহ উপজেলার মোট ৮ ইউনিয়নে ৪১৫ জন চাষি এখন আবাদ করছেন কালো সোনা হিসেবে পরিচিত পেঁয়াজের বীজ। কৃষকেরা বলছেন, আমন ধানের পর আলু, ভুট্টা অথবা গম উৎপাদন করলে খরচ বাদ দিয়ে ১০-২০ হাজার টাকা লাভ তোলা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে পেঁয়াজের বীজ আবাদ করে কোনো চাষিকেই লোকসান গুনতে হয়নি।

চলতি বছর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপ থেকে জানা গেছে, উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৪১৫ জন চাষি প্রায় ৮৯ হেক্টর জমিতে কিং, কুইন, তাহেরপুরী ও সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করেছে। এতে সম্ভাব্য বীজ উৎপাদন ধরা হয়েছে ৯১ হাজার ৮৬১ কেজি। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৬-১৭ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে চাড়োল ও দোগছি গ্রামে। এ দুটি গ্রামের প্রায় ৩০০ জন চাষি আবাদ করেছেন ৫৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ। আশানুরূপ ফলন হলে কমপক্ষে ৯ কোটি টাকা পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করবেন এই দুই গ্রামের চাষিরা।

অথচ গেল বছর উপজেলাটিতে মাত্র ২৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হয়েছিল। চাষাবাদ করেছিলেন চাড়োল ও দোগাছি গ্রামের চাষিরা।

মৌমাছি না থাকায় হাতের স্পর্শে পেঁয়াজ ফুলে কৃত্রিম পরাগায়ন করছেন নারীরা। আজ বৃহস্পতিবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামে তোলাসরেজমিনে দেখা গেছে, পেঁয়াজের সাদা ফুলে ভরে গেছে মাঠ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পেঁয়াজের বীজ খেতে সেচ, স্প্রে এবং শ্রমিকদের নিয়ে কৃত্রিম পরাগায়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কীটনাশক দিয়ে স্প্রে করার কারণে খেতে মৌমাছি নেই। স্প্রে করা না হলে কৃত্রিম পরাগায়নের প্রয়োজন পড়ত না।

গেল বছর চাড়োল গ্রামের সাইদুর রহমান আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ লাগিয়েছিলেন। বীজের দাম ভালো থাকায় উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তিনি সাড়ে ৭ লাখ টাকা লাভ পেয়েছেন। এ বছর আরও দেড় বিঘা বাড়িয়ে ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছেন তিনি। সাইদুর রহমান জানান, এ বছর সার-কীটনাশক ও মজুরির বাদ বাড়লেও পেঁয়াজ খেতের অবস্থা ভালো। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

ওই গ্রামের চাষি আনসার আলী বলেন, ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৭০-৭৫ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ২০০ থেকে ২২০ কেজি পেঁয়াজের বীজ পাওয়া যাবে। গেল বছরে প্রতি কেজি বীজ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। চলতি বছর শোনা যাচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। এই দাম পরে আরও বাড়বে।

এদিকে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনকে ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে ওই এলাকার নারী-পুরুষদের। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পেঁয়াজের ফুলে হাতের ছোঁয়া দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করছেন নারীরা। আগাছা পরিষ্কার, স্প্রে এবং সেচের কাজ করছেন পুরুষেরা।

মৌমাছি না থাকায় হাতের স্পর্শে পেঁয়াজ ফুলে কৃত্রিম পরাগায়ন করছেন নারীরা। আজ বৃহস্পতিবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামে তোলাচাড়োল গ্রামের পেঁয়াজ খেতে হাতের ছোঁয়া দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজে নিয়োজিত গীতা রানী ও বাসন্তী রানী জানান, ৫০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা কাজ করেন ওই এলাকার শতাধিক রানী। বাড়ির কাজের পাশাপাশি ২০০ টাকা দিনে বাড়তি আয়ে বেশ খুশি তারা। যদিও এই সময়টা কাজ না পেয়ে বসে থাকতে হতো তাঁদের।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে ঝুঁকছেন স্থানীয় বেকার যুবকেরা। এর ফলে দিনদিন বাড়ছে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদের পরিধি। এলাকায় তৈরি হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তা।

চাকরি না পেয়ে চলতি বছর থেকে কৃষি কাজে নেমেছেন চাড়োল গ্রামের বিপ্লব রানা। এবার পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করেছেন ১৫ বিঘা জমিতে। তিনি জানান, চার মাস পরিশ্রম করে পেঁয়াজ বীজটা বাজারে বিক্রি করতে পারলেই কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা লাভ হবে। একটা সরকারি চাকরি করে পেনশনের টাকা এক বছরেই আয় করা সম্ভব। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই উদ্যোক্তা হয়েছেন তিনি। প্রতিদিন তার খেতেই কাজ করছেন ২০ জন শ্রমিক।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলে, চলতি বছর পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন বেড়েছে। চাড়োল গ্রামের চাষিদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন কৃষকেরা। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে নানা ভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আশা করছি এ বছর প্রায় ৯২ টন পেঁয়াজ বীজ আমরা পাব। বাজারে যার মূল্য প্রায় ১৬-১৭ কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪২ দিন আগে মিশনে গিয়ে সুদানে ড্রোন হামলায় আহত মানিকগঞ্জের চুমকি

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি  
চুমকি আক্তার। ছবি: সংগৃহীত
চুমকি আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় আহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পেঁচারকান্দা এলাকার চুমকি আক্তার।

চুমকির স্বামী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য মো. ইকরামুল হোসেন রোববার বিকেলে বলেন, চলতি বছরের ৭ নভেম্বর চুমকি আক্তার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। শনিবার বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ছোড়া গ্রেনেডের স্প্লিন্টার তাঁর ডান হাত ও ডান পায়ে লাগে। পরে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

ইকরামুল হোসেন আরও জানান, চুমকির দুই বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। ছেলের নাম ইব্রাহিম আরাবী। মিশনে যাওয়ার সময় শিশুটিকে তিনি শাশুড়ির (চুমকির মা) কাছে রেখে যান। চুমকি আক্তার ঘিওর উপজেলার পেঁচারকান্দা এলাকার আব্দুল হামিদ ও জহুরা বেগমের মেয়ে।

আহত চুমকি আক্তারের মা জহুরা বেগম বলেন, ‘আমার চার মেয়ের মধ্যে চুমকি সবার ছোট। তার ছেলেটাকে আমার কাছে রেখে গেছে। শুনেছি ওর ডান হাত আর পায়ে আঘাত লেগেছে। ও এখন ওই দেশের হাসপাতালে ভর্তি আছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কৃষিকাজ করেন এবং আমাদের কোনো ছেলে নেই।’

এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ওই হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি নিহত এবং আটজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। রোববার নিহত ও আহতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়।

নিহতরা হলেন কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), শামীম রেজা (রাজবাড়ী), শান্ত মণ্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।

আহত শান্তিরক্ষীরা হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা), সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জৌলুশ হারিয়ে ক্রেতাশূন্য মন্ত্রী মার্কেট, দোকান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
একসময় ক্রেতার ভিড়ে ঠাসা মার্কেটটি এখন প্রায় জনশূন্য। ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
একসময় ক্রেতার ভিড়ে ঠাসা মার্কেটটি এখন প্রায় জনশূন্য। ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিমতলা মোড়সংলগ্ন চারতলা বিশাল ‘এল’ আকৃতির ভবনটি একসময় মানুষের পদচারণে সরগরম ছিল। সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের টানা আটবারের সংসদ সদস্য মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের মালিকানাধীন এই ভবনটি ‘মন্ত্রী মার্কেট’ নামে পরিচিত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমজমাট থাকত মার্কেটটি। তবে এখন সেই দৃশ্য আর নেই।

প্রায় এক যুগ আগে নির্মিত মন্ত্রী মার্কেটটি অল্প সময়েই শহরের অন্যতম জনপ্রিয় বিপণিকেন্দ্রে পরিণত হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুরের শিকার হয় ভবনটির সামনের অংশ। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের মৃত্যুর পর মার্কেটটি কার্যত প্রাণহীন হয়ে পড়ে।

সরেজমিন দেখা গেছে, একসময় ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা মার্কেটটি এখন প্রায় জনশূন্য। ক্রেতার অভাবে ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে দোকান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এমনকি মার্কেটে থাকা ব্যাংক ও সরকারি দপ্তরগুলোও স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মন্ত্রী মার্কেটের নিচতলায় রয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও গ্যারেজ, দ্বিতীয় তলায় মার্কেট, তৃতীয় তলায় অগ্রণী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও আয়কর অফিস এবং চতুর্থ তলায় মন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবন। বর্তমানে নিচতলার দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। দ্বিতীয় তলায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ। তৃতীয় তলার ব্যাংক ও আয়কর অফিসগুলোতে ‘শিগগিরই স্থান পরিবর্তন’ লেখা ব্যানার ঝুলছে। চতুর্থ তলার বাসভবনও জনশূন্য।

দ্বিতীয় তলায় ১৫ বাই ১০ ফুট আয়তনের ১৮টি দোকানঘর রয়েছে। একসময় সেখানে বেশির ভাগই গার্মেন্টসের দোকান ছিল। বর্তমানে ইলেকট্রনিকস, কম্পিউটার অ্যাকসেসরিজ, জুয়েলারি, বেকারি ও ফটোকপির কয়েকটি দোকান টিকে আছে। মার্কেট চালুর সময় দোকানপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেওয়া হতো সিকিউরিটি বাবদ আর মাসিক চার হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। ৫ আগস্টের পর ভাড়া কমিয়ে তিন হাজার টাকা করা হলেও এক বছরের ভাড়া অগ্রিম নেওয়ার নিয়ম ছিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, কেউ সিকিউরিটির টাকা ফেরতের অপেক্ষায় আছেন, কেউ আবার কয়েক মাসের ভাড়া না দিয়ে সিকিউরিটির টাকার সঙ্গে সমন্বয় করে চলে গেছেন। প্রায় এক বছর ধরে ব্যবসার সুদিন ফেরার আশায় অপেক্ষা করেও অনেকে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মন্ত্রী মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকান ফাঁকা। কয়েকটি দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। নিচতলায় খোলা থাকা চার-পাঁচটি দোকানের অবস্থাও নাজুক।

একসময় ক্রেতার ভিড়ে ঠাসা মার্কেটটি এখন প্রায় জনশূন্য। ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
একসময় ক্রেতার ভিড়ে ঠাসা মার্কেটটি এখন প্রায় জনশূন্য। ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মন্ত্রী মার্কেটের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ‘এক্সপোর্ট কালেকশন’-এর রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে এই মার্কেটটি প্রায় অচল হয়ে গেছে। ক্রেতা আসে না। ব্যবসায়ীরা ছয় মাস বা এক বছর অপেক্ষা করে পুঁজি হারিয়ে চলে যাচ্ছে।’

কম্পিউটার হ্যাভেনের মালিক সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে এই মার্কেট এখন পরিত্যক্ত। আগের মতো লোকজন আসে না। গার্মেন্টসের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়ে চলে গেছেন। আমরা কয়েকজন কোনো রকমে টিকে আছি।’

গালিব গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী হেলাল শাহ বলেন, ‘আমি প্রায় চার বছর এখানে ব্যবসা করেছি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর ক্রেতা কমে যায়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। আমার মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী অন্যত্র চলে গেছেন।’

মন্ত্রী মার্কেটের তত্ত্বাবধায়ক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী ও ব্যাংক চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ নতুন করে আসছেন। এখন সিকিউরিটি মানি নেওয়া হয় না। এক বছরের ভাড়া অগ্রিম নেওয়া হয়।’

মন্ত্রী মার্কেট ভবনে অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংক ফুলবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক মকছেদ আলী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক নেতাদের ভবনে থাকা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরাও শাখা স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টিকিটে দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসন থেকে টানা আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা-বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

ফুলবাড়ী দোকান ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুম বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসায়ও পড়েছে। মন্ত্রী মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অন্যত্র ব্যবসা করতে চাইলে বা কোনো সমস্যায় পড়লে সমিতি তাদের পাশে থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আনিস আলমগীর ও শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
(বাঁ থেকে) সাংবাদিক আনিস আলমগীর, মেহের আফরোজ শাওন ও মারিয়া কিসপট্টা। ছবি: সংগৃহীত
(বাঁ থেকে) সাংবাদিক আনিস আলমগীর, মেহের আফরোজ শাওন ও মারিয়া কিসপট্টা। ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক আনিস আলমগীর এবং অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্র এবং নিষিদ্ধ সংগঠনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ এই অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন মারিয়া কিসপট্টা ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ।

থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যেও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অভিযুক্তরা এসব কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করছেন।

এতে আরও বলা হয়, অভিযুক্তদের এসব বক্তব্য ও অনলাইন কার্যক্রমের কারণে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, সহিংসতা এবং অবকাঠামো ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, এটি সাইবার-সম্পর্কিত একটি ইস্যু। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ গ্রহণ করেছি। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পেলে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।’

জানা গেছে, এই অভিযোগ দায়েরের পরপরই সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডির একটি জিম থেকে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন আনিস আলমগীর।

তবে ওই জিমের ম্যানেজার আরেফিন গণমাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যা নাগাদ আনিস আলমগীর জিমে আসেন এবং রাত ৮টার দিকে ব্যায়াম শেষে চলে যান। তিনি জিমের ভেতরে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখেননি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, রাতে তীব্র শীত—দিনে ঝলমলে রোদ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
পঞ্চগড় সদর উপজেলা তালমা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সদর উপজেলা তালমা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার, যা শীতের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশাহীন ভোরে সূর্যের ঝলমলে আলোয় প্রকৃতি স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। রোদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্যও লক্ষ্য করা গেছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রায় ওঠানামা দেখা গেছে। আজ সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ও শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯, বুধবার ও মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ এবং আগের সোমবার ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। রাত ও ভোরে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের দাপট বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত