Ajker Patrika

সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্য যাত্রীরা

সিলেট প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৫২
সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্য যাত্রীরা

সিলেটে আজ সোমবার ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে পরিবহন শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের ওপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও বিভিন্ন সেতুতে টোল আদায় বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘট। ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য যাত্রীরা।  

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি বৈঠক শেষে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সরকার বলেন, 'পরিবহন শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সিলেটে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। সেই সময় শেষ হলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিভাগজুড়ে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সিলেট বিভাগে কোনো ধরনের গণপরিবহন চলবে না।'

সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি কোন দূরপাল্লার বাস। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষাসহ অন্যান্য যাত্রীরা। এ ছাড়া পর্যটন নগরী সিলেটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকেরাও আটকা পড়েছেন। সকাল থেকে নগরীর কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কুমারগাঁও বাস স্টেশন, হুমায়ুন রসিদ চত্বর, চণ্ডীপুর, তেতলী বাইপাস ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন বাজারে পিকেটিং করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। পরীক্ষার্থী, রোগী ও বিদেশযাত্রীদের বহনকারী যান ধর্মঘটের আওতামুক্ত বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। 

এ বিষয়ে নগরীর এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মাইনুল চৌধুরী বলেন, 'যে কোন ইস্যুতে কথায় কথায় পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য চালাচ্ছে শ্রমিকেরা। এতে প্রশাসনেরও দায় আছে। সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করলে সাধারণ মানুষের এত ভোগান্তিতে পড়তে হত না।' 

চট্টগ্রাম থেকে শাহজালালের মাজার জিয়ারতে আসা সামসুর রহমান বলেন, 'ওলির মাজার জিয়ারতে সিলেট এসেছিলাম। এখন হঠাৎ ডাকা ধর্মঘটের কারণে গন্তব্যস্থলে যেতে পারছি না।' 

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, 'পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চলছে।' 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর চৌহাট্টায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে সিসিক ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও সিসিক মেয়রের মধ্যে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে সিসিকের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিসিকের পক্ষ থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু সময়মতো আপসনামা প্রস্তুত না হওয়ায় আটজনের বিরুদ্ধে সিসিকের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়। এদিকে গত শুক্রবার সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ওমরাহ পালনে সৌদি আরব চলে যাওয়ায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। 

পরিবহন শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে, সিলেট জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা চালক শ্রমিক জোট (রেজি নম্বর: ২০৯৭)-এর ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, 'প্রহসনের নির্বাচন' ও 'বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়' ঘোষিত কমিটি বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবদ আদায়কৃত সকল টাকা ফেরত প্রদান। সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপপরিচালককে প্রত্যাহার করা। সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নম্বর: বি-১৪১৮) নেতৃবৃন্দের ওপর দায়েরকৃত মামলাসমূহ প্রত্যাহার। ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করা। মেয়াদ উত্তীর্ণ শেরপুর, শেওলা, লামাকাজী, শাহপরান ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশাসহ সকল প্রকার গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা করা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ বলেন, এসব দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। বারবার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দিলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই কর্মবিরতির পথ বেঁচে নিতে হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত