Ajker Patrika

হাওর বাঁচাও আন্দোলন ও ডিসি দুই মেরুতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
সুনামগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সুনামগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুনামগঞ্জে ‌‘ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষে’র দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’। পাশাপাশি বাঁধের কাজে ঢিলেমি, বরাদ্দের টাকা লুট, পিআইসি গঠনে ছলচাতুরীর অভিযোগ করা হয়। প্ল্যাটফর্মটির দাবি, বাঁধের কাজ ৭০-৮০ ভাগ শেষ হলেও মাটির কাজ কার্যাদেশ অনুযায়ী হয়নি।

আজ বুধবার দুপুরে জেলা শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে জেলা প্রশাসকের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ওই দাবি করেন প্ল্যাটফর্মটির কেন্দ্রীয় ও জেলার স্থানীয় নেতারা।

তবে কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি এবং সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কে দাবি করছে, ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ? উনারা যেটা বলছে, সেটা ভুল বলছেন। আমরা কখনোই এ রকম বলিনি। ৯ মার্চ ফেসবুকে একটা পোস্ট করে সবাইকে অনুরোধ জানাইছি, কোথাও যদি কাজে কোনো ধরনের অসম্পূর্ণ থাকে, সেটা পিআইসি নম্বর উল্লেখ করে জানালে আমরা সেই কাজ করে দেব। তার মানে, আমরা তো বলি নাই, যে কাজ শেষ হইছে। দুর্নীতির বিষয়টি তো প্রমাণসাপেক্ষ ব্যাপার। দেখেন, আমরা যাদেরকে দিয়ে কাজ করাইছি; তাদের এখনো বিল দিতে পারিনি। নির্বাহী প্রকৌশলী-১ এর অধীন কাজের ৫০%, আর নির্বাহী প্রকৌশলী-১-এর অধীনে ৩৭% বিল পরিশোধ করেছি। উনাদের কি কেউ বলছে, আমাদের কাছে টাকা চাইছে? তাহলে উনারা (হাওর বাঁচাও আন্দোলন) জানল কীভাবে, দুর্নীতি হইছে? আমরা নীতিমালা অনুযায়ী পিআইসি করেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ চিত্ত রঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য দেন জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল। তিনি বলেন, ‘বোরো ফসল রক্ষায় সুনামগঞ্জে ৫৮৭ কিলোমিটার বাঁধে ৬৮৬টি প্রকল্পে ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ১০ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এ সময়ে কাজ শেষ হয়নি। অপ্রয়োজনীয় বাঁধে বরাদ্দ দিয়ে টাকা লুট করা হচ্ছে।’

ইয়াকুব বখত বাহলুল আরও বলেন, ‘বাঁধের কাজে প্রাক্কলন থেকে শুরু করে পিআইসি গঠন পর্যন্ত পাউবো ও প্রশাসন ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। প্রাক্কলনে কিলোমিটারের যে মাপ, সেটা একধরনের চালাকি। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জরিপে আমরা দেখেছি, অনেক বাঁধের কিলোমিটার পর কিলোমিটার মাটি ভরাটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রাক্কলনের সময় অক্ষত বাঁধকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে সরকারের টাকা নয়ছয় করা হয়।’

লিখিত বক্তব্যে ইয়াকুব বখত বাহলুল দাবি করেন, ‘মাঠপর্যায়ে গণশুনানি করে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের দাবি থাকলেও সেটি করা হয় নাই। স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এতে পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটা যোগসাজশে থাকে। কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য কৃষকের ধানকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কারও গাফিলতিতে হাওরে বিপর্যয় ঘটলে এর দায় কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে। প্রয়োজনে আদালতে আইনি বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ‘হাওরে অনেক বাঁধ রয়েছে, সেখানে মাটি ভরাট না করে শুধু দূর্বাঘাস পরিষ্কার করে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জরিপে দেখা যায়, হাওরে বাঁধের কাজ ৭০-৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ডিসির ফেসবুক ওয়ালে কাবিটা বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রচার করেন। এবং কোথাও ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে জানাতে বলেন। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, মাটির কাজ কার্যাদেশ অনুযায়ী হয়নি। পুরাতন বাঁধকে মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়ে নতুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। অধিকাংশ বাঁধে ঘাস লাগানো ও দুর্মোজ করা হয়নি।’

৯ মার্চ বেলা ২টা ১৬ মিনিটে ‘ডিসি সুনামগঞ্জ’ ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
৯ মার্চ বেলা ২টা ১৬ মিনিটে ‘ডিসি সুনামগঞ্জ’ ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

সভাপতির বক্তব্যে চিত্ত রঞ্জন দাস বলেন, ‌‘সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের মান খুবই খারাপ। যে হাওরে ৭ হাজার টাকার ধান উৎপাদিত হয় না, সেই হাওরে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার সব উপজেলায় অনেক বাঁধেই অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ সরকার, জেলা কমিটির সহসভাপতি খোরশেদ আলম, মুর্শেদ জামান, আলী নূর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে কুদরত পাশা।

এর আগে ৯ মার্চ বেলা ২টা ১৬ মিনিটে ‘ডিসি সুনামগঞ্জ’ ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, যেহেতু সুনামগঞ্জ জেলায় কাবিটা বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং এ পর্যায়ে বাঁধের কাজে কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে বিস্তারিতসহ পিআইসির নম্বর ও স্থান উল্লেখ করে ইউএনওকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ইউএনও সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত