Ajker Patrika

মাটির গর্তে আটকে থাকে প্রতিবন্ধী শিশুটি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ২২: ২৬
মাটির গর্তের ভেতরে দাঁড়ানো গোপাল সাঁওতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাটির গর্তের ভেতরে দাঁড়ানো গোপাল সাঁওতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় চা-শ্রমিক পরিবারের সন্তান গোপাল সাঁওতাল। বয়স মাত্র সাড় তিন বছর। জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। এই বয়সে অন্য স্বাভাবিক শিশুরা যেখানে ছোট্ট পায়ে ঘরময় হেঁটে বেড়ায়, সেখানে ঘরের ভেতর মাটির গর্তের মধ্যে বুক পর্যন্ত ঢুকিয়ে রাখা হয় তাকে। ক্ষুধার সময় কান্নাকাটি করলে সেখানেই তাকে খাওয়ান মা।

উপজেলার মুরইছড়া চা-বাগানের সনচড়ি সাঁওতাল ও অনিল সাঁওতালের একমাত্র সন্তান গোপাল। মুরইছড়া চা-বাগানের স্কুলের টিলা এলাকায় একটি ঘরে থাকেন তাঁরা। জন্মের পর থেকে গোপাল স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। তাই মা সনচড়ি ঘরের মাটির মেঝেতে একটা গর্ত করেছেন। সেই গোলাকার গর্তে বুক পর্যন্ত গোপালকে ঢুকিয়ে রাখা হয়। সেই গর্তে দাঁড় করিয়ে সন্তানকে খাওয়ান, যত্ন করেন মা। না হলে সে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে। মা সনচড়ি ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ ছেলেকে দেখে রাখেন। বাবা অনিল সাঁওতাল চা-বাগানে কাজ করেন। অভাব-অনটনের সংসারে সন্তানের চিকিৎসা করানো তাঁদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

মায়ের কোলে গোপাল সাঁওতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
মায়ের কোলে গোপাল সাঁওতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

শিশুটির মা সনচড়ি সাঁওতাল জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য সিলেটের খাদিমনগরের একটি সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানকার চিকিৎসক বলেছেন, শিশুটিকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। এটাই তার উন্নতির একমাত্র পথ। কিন্তু এ ধরনের থেরাপি নিয়মিত নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাঁদের নেই। যেখানে নিজেরাই তিন বেলা খেতে পান না, সেখানে ছেলের চিকিৎসা কীভাবে করাবেন। সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা কীভাবে মেলে, তা-ও তিনি জানেন না।

তিনি আরও জানান, ছেলের কান্না আর কষ্ট সহ্য করা কঠিন। তাই বুদ্ধি করে তিনি এই গর্ত করেছেন। এখানে ঢোকালে ছেলেটি একটু দাঁড়াতে পারে। সামর্থ্য থাকলে তিনি যন্ত্রপাতি কিনে আনতেন। এই রকম প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নাকি ডিজাইন করা অনেক যন্ত্রপাতি আছে বলে শুনেছেন তিনি। বাবা অনিল সাঁওতাল জানান, একমাত্র সন্তানটি যেন একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, নিজের মতো করে হাঁটতে পারে—এটাই তাঁদের চাওয়া।

শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্চয় দেবনাথ বলেন, ‘শিশুটিকে আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি। শিশুটির এই মুহূর্তে প্রয়োজন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্য পরিবারটির নেই। শিশুটিকে সহযোগিতা করা খুবই প্রয়োজন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিবারের প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবে, সেটা কারও কাম্য হতে পারে না।’

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশুটির প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা খুব শিগগির করা হবে। একই সঙ্গে সরকারি চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত