Ajker Patrika

দেশীয় মাছ হারাচ্ছে হাওর, জীবিকার সংকটে সুনামগঞ্জের জেলেরা

  • হুমকির মুখে ৬৪ প্রজাতির মাছ
  • জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ইজারা প্রথাকে দুষছেন জেলেরা
  • মাছ সংরক্ষণে সমন্বিত নীতিমালার তাগিদ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭: ৩৬
সুনামগঞ্জের পাগনার হাওরে মাছ ধরতে পাতা জাল টেনে তুলছেন জেলেরা। ছবিটি গত শনিবার দুপুরে তোলা। ছবি:  আজকের পত্রিকা
সুনামগঞ্জের পাগনার হাওরে মাছ ধরতে পাতা জাল টেনে তুলছেন জেলেরা। ছবিটি গত শনিবার দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশীয় মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরগুলোতে বর্ষার ভরা মৌসুমেও মাছ নেই বললেই চলে। এতে করে সংকটে পড়েছেন স্থানীয় জেলেরা। মাছ শিকারকে যাঁরা পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন, তাঁরা এখন বাধ্য হচ্ছেন পেশা পরিবর্তনে। অনেকে বাধ্য হয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ নিচ্ছেন, কেউবা এলাকায় অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো নানা কারণে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।

হাওরে একসময় দেশীয় প্রজাতির মাছ ছিল ১৪৩টি। এর বাইরে ছিল ১২ প্রজাতির বিদেশি মাছ। সুনামগঞ্জ মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে ৬৪ প্রজাতি হুমকির মুখে। এগুলোর মধ্যে ৯টি অতিবিপন্ন, ৩০টি বিপন্ন এবং ২৫ প্রজাতি সংকটাপন্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইজারা প্রথা, আগ্রাসী মাছ চাষ, রাসায়নিক নির্ভর কৃষি, পাহাড়ি এলাকার কয়লাখনি থেকে ক্ষতিকর পদার্থ পানিতে মেশা, কীটনাশকের ব্যবহারসহ নানা কারণে মাছের প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে।

দেশের সবচেয়ে বড় মিঠাপানির জলাধার সুনামগঞ্জে ৯৫টি হাওর, ছোট-বড় ২৬টি নদী আর ১ হাজারের বেশি বিল ও জলমহাল আছে। পুরো জেলার জলাশয়ের আয়তন ৬৩ হাজার ৬৬৬ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু হাওরের আয়তনই ৩৫ হাজার ৯৯০ হেক্টর। এত বিস্তীর্ণ জলাশয়ে এখন মাছের সংকট প্রকট।

জেলার উন্মুক্ত জলাশয়ে বছরে মাছ উৎপাদিত হয় ৮৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর পুকুরে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে দেশীয় প্রজাতি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। মহাশোল, সরপুঁটি, ঘারুয়া, বাগাড়, রিঠা, চিতল, নাফতানি, বামোশ, রানী, চাকা, টাটকিনি, বাঁশপাতা, বাছা, ঢেলা, ফলি, দাড়কিনা, আইড়, পাবদা, তিতপুঁটি, কালবাউশ, নান্দিনা, খাশ খাইরা, তিলা শোল, শালবাইম, ঘাং মাগুর, নামা চান্দা, চিংড়ি, কাচকিসহ হরেক প্রজাতির মাছ বিপন্ন ও অতিবিপন্ন পর্যায়ে চলে গেছে।

সুনামগঞ্জে নিবন্ধিত মৎস্যজীবী ১ লাখ ১ হাজার ৩২৯ জন। অনিবন্ধিত আছেন আরও ২০ হাজারের বেশি। কিন্তু মাছ না থাকায় অনেক নিবন্ধিত জেলে পেশা বদল করেছেন। শাল্লা উপজেলার যাত্রাপুর হিলিফ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হিমাদ্রী সরকার বলেন, ‘হাওরে মাছ নেই, মৎস্যজীবীদের রোজগারও নেই। অনেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে ঢাকায় চলে গেছে। এলাকায় যারা আছে, তারাও কষ্টে রয়েছে।’ তাঁর মতে, জলাভূমি নেতাদের ইজারা দেওয়া হলে তাতে করে মৎস্যজীবীদের কোনো লাভ হয় না। ফলে এই প্রথা বন্ধ করতে হবে।

হাওরে মাছ ধরার নৌকা এখন আগের চেয়ে অনেক কম চোখে পড়ে। পাগনার হাওরে কোনা জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন মুছা মিয়া (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচজনে এই জাল টাইন্যা যে মাছ পাওয়া যায়, তাতে একজনে কোনোরকম দুই-তিন শ টাকা কইরা পড়ে। কোনো দিন এইডাও হয় না। হাওরে মাছ নাই কইলেই চলে।’

একসময় যেসব হাওর নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল, সেগুলোও এখন মাছশূন্য। চিতল মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত হালি হাওরের সুন্দরপুর বিল থেকে চিতল উধাও। টাঙ্গুয়ার হাওরের আলংডোয়ারে একসময় ছিল চিতলের খনি। এখন আর নেই। রৌ মাছের জন্য খ্যাত রৌয়ার হাওরেও মাছ মিলছে না। টাঙ্গুয়ার হাওরের জেলে হরলাল দাস বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার আলংডোয়ার একটা জায়গা, যেডা চিতল মাছের খনি আছিল। ওই চিতল মাছ এখন আর নাই। সব শেষ হইয়া গেছে।’

হাওরবিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হাওরের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ অর্থাৎ ঋতুভিত্তিক পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালুতে ডোবা-বিল, জলাভূমি ও কৃষিজমি ভরাট হচ্ছে। এতে হাওর, নদীর উচ্চতায় পার্থক্য তৈরিসহ সংযোগস্থল বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে মাছের বিচরণস্থল হুমকিতে পড়ছে।’

পাভেল পার্থ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাওরের জলাভূমি অপরিকল্পিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত উপায়ে ইজারা দেওয়ায় আগ্রাসী প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। এতে দেশীয় মাছের প্রাকৃতিক খাবারের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বর্ষায় পাহাড়ি এলাকার কয়লা-চুনাপাথরের খনি থেকে সিলিকা-সালফার্ড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশছে। রাসায়নিক নির্ভর কৃষি প্রচলনের ফলেও মাছের প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে। এটি মাছ, রেণুপোনা ও ডিমে মড়ক সৃষ্টি করছে।’

হাওরে সব ধরনের ইজারা বাতিলের দাবি জানান এই গবেষক। তাঁর মতে, মাছ ধরার অধিকার শুধু জেলেদেরই থাকা আবশ্যক। জলাভূমি ও মাছ সংরক্ষণে জেলে সম্প্রদায়ের লোকায়ত জ্ঞান অর্থাৎ তাদের কৃষ্টি, আচার, রীতি, প্রথাকে জাতীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি হাওর ও মৎস্য ব্যবস্থাপনায় তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

মাছ সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিম। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সময়মতো বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। হাওর পানিস্বল্পতায় ভুগছে। নিষিদ্ধ জাল, কীটনাশক, অপরিকল্পিত বাঁধ, পলি জমে জলাশয় ভরাট, নাব্যতাসংকট—এগুলো মাছ বিলুপ্তির কারণ। এসব কারণে মাছের নির্বিঘ্ন চলাচল ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত