Ajker Patrika

৫ লাখ টাকায় সন্তান বিক্রির চেষ্টা ঋণগ্রস্ত কৃষকের, ঠেকালেন গ্রামবাসী

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ২০: ১৬
তিস্তা চরাঞ্চলের ঋণগ্রস্ত কৃষকের সন্তান বিক্রির চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিস্তা চরাঞ্চলের ঋণগ্রস্ত কৃষকের সন্তান বিক্রির চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাত্র ৫ লাখ টাকায় দুই বছর বয়সী নিজের সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা করেছেন লালমনিরহাট তিস্তা চরাঞ্চলের এক কৃষক। আজ বৃহস্পতিবার জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি প্রকাশ পেলে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তা প্রতিহত করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিস্তা নদীর চরাঞ্চল চর সিন্দুর্না গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হাবিবুর রহমান। গত মৌসুমে স্থানীয় ওমর আলী, আশরাফুল ও নুর আলম নামের তিনজন দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু ফসলে লোকসান হওয়ায় ঋণের মাত্র এক লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

পরে বাকি টাকা সুদাসলে দাঁড়িয়েছে চার লক্ষাধিকে। কিছু দিন ধরে দাদন ব্যবসায়ীরা চাপ দেন। অভাবের সংসারে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক হাবিবুর রহমান। একপর্যায়ে নাড়িছেঁড়া ধন দুই বছরের মেয়েকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

পাশের গ্রামের নিঃসন্তান এক দম্পতি তাঁর সন্তানকে ক্রয় করতে সম্মত হলে এক লাখ টাকা বায়না দেন। এরপর আজ সেই দম্পতি সন্তানকে দেখতে এলে বিষয়টি বুঝতে পারেন হাবিবুরের স্ত্রী নুরনাহার বেগম। তখন তিনি চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এলে বিষয়টি প্রকাশ পায় এবং তাঁরা প্রতিহত করেন।

তিস্তা চরাঞ্চলের ঋণগ্রস্ত কৃষকের সন্তান বিক্রির চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিস্তা চরাঞ্চলের ঋণগ্রস্ত কৃষকের সন্তান বিক্রির চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। এরপর বৈঠকের সিদ্ধান্তমতে সন্তান বিক্রি থেকে রক্ষা পান হাবিবুর। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করতে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কৃষক হাবিবুর রহমানের স্ত্রীকে একটি ভিজিডি কার্ড করে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে কৃষক হাবিবুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভাবের সংসার। সামান্য জমি বর্গা নিয়ে চাষবাস করি। ধার-দেনা শোধে হিমশিম খাচ্ছি। এখন আর কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিক্রির কথা ভেবেছিলাম।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘একজন পিতা যখন ঋণের চাপে নিজের সন্তানকে বিক্রি করতে উদ্যত হয়, তখন বুঝতে হয় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। আমরা তা হতে দেইনি।’

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ স্থানীয় ইউপি সদস্যকে পাঠিয়ে বিক্রির চেষ্টা বন্ধ করি এবং পরিবারটিকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনি। পাওনাদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি হাবিবুরের স্ত্রীর নামে ভিজিডির কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত