Ajker Patrika

হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম নেই, সাপের কামড়ে দুই সপ্তাহে ৫ মৃত্যু

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
সাপের কামড়ে মৃতের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাপের কামড়ে মৃতের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছেলেকে সাপে কামড়ানোর পর দুই জেলার চার হাসপাতালে নিয়েও বাঁচাতে পারেননি এক বাবা। হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম না থাকায় ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যর্থ বাবার যেন দুঃখের শেষ নেই।

ভুক্তভোগী এই ব্যক্তি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্ত এলাকা বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের ইসরাইল উদ্দীন। তাঁর ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল ইসলামকে শুক্রবার রাতে কামড় দেয় বিষধর সাপ। চিকিৎসার জন্য চার হাসপাতালে গিয়েও পাননি সাপের বিষমুক্ত করার ভ্যাকসিন (অ্যান্টিভেনম)। পরে দিনাজপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে মারা যায় সাকিবুল।

শনিবার বিকেলে সাকিবের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। এদিকে ছেলের মৃত্যুশোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা। দুদিন ধরে চিকিৎসা চলছে তাঁর। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে।

ইসরাইল উদ্দীন বলেন, ‘ছেলেকে বাঁচাতে চারটা হাসপাতালে নিয়ে গেছি। বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতাল থেকে হরিপুর, এরপরে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল। সেখানেও ভ্যাকসিন না পেয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ হাসপাতাল নিয়ে গেলাম রাত তখন ১০টা বাজে। সেখানেও ভ্যাকসিন নেই, দিনাজপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে আমার ছেলে কোলে মারা গেছে। বাবা হয়ে ছেলেকে বাঁচাতে পারিনি। আর যেন কোনো বাবার বুক খালি না হয়, সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলছাত্র সাকিবুলের মতো ঠাকুরগাঁও জেলায় গত দুই সপ্তাহে পীরগঞ্জের সপ্তম শ্রেণির স্কুলছাত্র তারেক, রাণীশংকৈলের কলেজছাত্র মোকসেদ আলী, হরিপুরে গৃহবধূ সম্পা রানীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিষধর সাপের কামড়ে। তাদের স্বজনেরা বলছেন, জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম না থাকায় মারা যাচ্ছে এসব রোগী।

সম্পা রানীর স্বামী জিতেন বলেন, ‘সকালে সাপে কামড়ানোর পর হরিপুর, রাণীশংকৈল এবং সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নিয়ে গেছি, কিন্তু ভ্যাকসিন পাইনি। নিরুপায় হয়ে ওঝার কাছে নিয়ে গেছি। স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। দেড় বছরের একটা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’

পল্লিচিকিৎসক আজমুল হক বলেন, ‘বর্ষার সময়ে প্রতিবছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০-১৫ জন সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার হাসপাতালগুলো ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠায়। এরপরে যখন ভ্যাকসিন হাসপাতালে এসে পৌঁছায়, তখন বর্ষা শেষ। স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত ইউনিয়ন-উপজেলা ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে বর্ষার আগেই ভ্যাকসিন মজুত রাখার।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শাকিলা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এখানে ৫ ভায়াল অ্যান্টিভেনম রয়েছে। কিন্তু একজন রোগীর জন্য কমপক্ষে ১০ ভায়াল প্রয়োজন। বিষয়টি সিভিল সার্জন অফিসে জানানো হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘চাহিদা পাঠানোর পরও অ্যান্টিভেনম দেয়নি। পরে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারেও অ্যান্টিভেনমের সংকট। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ে আসার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত