Ajker Patrika

উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে উলিপুরের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী, তীব্র খাদ্য সংকট 

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
Thumbnail image

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে বন্যা কবলীয়ত এলাকায় মানুষসহ গবাদিপশুর তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। 

চার উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের থেকে পাওয়া তথ্য জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত উপজেলার সাহেবের আলগা, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া ইউনিয়নে গ্রামগুলোতে পানি বাড়ার ফলে চরগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ। তাঁরা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে পানিবন্দীরা আশ্রয়ের জন্য কলার ভেলায় ও নৌকায় করে ছুটছেন উঁচু জায়গায়। 

হাতিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অনন্তপুর কলাতিপাড়া এলাকার মকবুল, দিপবলি, একরামুল হকসহ অনেকে বলেন, কয়েক দিন থেকে পানিবন্দী হয়ে থাকলেও আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি কেউ। বাড়ি ঘরে পানি ওঠায় রান্না করে খাওয়ার মতো অবস্থা না থাকায় পরিবার নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাতে হচ্ছে। 

সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর রহমান বলেন, কাতলমারির চর, নেপুরের আলগা চর, মাঝের আলগা চর, জাহাজের আলগা, দই খাওয়ার চর, কাজিয়ার চর, হকের চর, একবিল খড়িয়ার চর, চর বাগুয়া, গেন্দার আলগা, ফতুল নামাজের চর, ঘুঘু মারির চরের প্রায় ৩ হাজার পরিবারে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী। কয়েক দিন থেকে এসব মানুষ গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। পানিবন্দী থাকায় দেখা দিয়ে বিশুদ্ধ পানিসহ শুকনো খাবারের সংকট। 

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাইখুল ইসলাম নয়া বলেন, মাঝিপাড়া, খাতাতিপাড়া, কদমতলা, টাপুরজান, শ্যামপুর, চর অনন্তপুর, হাতিয়াপাড়া, নয়ারডারা, চরেয়ারপাড়, কামারটারী এলাকার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারে ৯ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এসব এলাকার মানুষ কোনো খাদ্য সহায়তা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। 

বাড়িতে বানের পানি। তাই কলার ভেলায় করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছে এক পরিবার। উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকাবেগমগঞ্জ ইউপি সদস্য তছির উদ্দিন বলেন, বিন্দুর চর, চর বালাডোবা, মাষ্টারপাড়া, মুসার চার, ব্যাপারীপাড়া, টোয়ার চর, মন্ডলপাড়া, সরকারপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, মাঝিপাড়া, একতা, চৌমহনী বাজার, চেয়ারম্যানপাড়া, বানিয়াপাড়া, মশালের চর, ইসলামপুর এলাকার প্রায় ৩ হাজার পরিবারে প্রায় ৯ হাজার মানুষ চার দিন থেকে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। পানিবন্দী এসব মানুষ খাদ্য সংকটে রয়েছেন। 

বুড়াবুড়ি ইউপি সদস্য আব্বাস আলী সরকার বলেন, কিশামত ফুলবাড়ি, ছয়ারিপাড়া, সরকারপাড়া, ছড়ারপাড়, নয়াগ্রাম, শিমুলতলা, বগপাড়া, জলঙ্গারকুটি, চরকলাকাটা, পূর্ব সাতভিটা, আফতাবগঞ্জ, পশ্চিম সাতভিটা, বালাজনের ডারা, উত্তর বুড়াবুড়ি, মাঝিপাড়া গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবারে ৮ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী তিন দিন থেকে পানিবন্দী। সরকারিভাবে এসব এলাকার মানুষ এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। 

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সিরাজুদৌল্লা জানান, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ৩৩ টন চাল ও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে। 

বাড়িতে বানের পানি। তাই কলার ভেলায় করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছে এক পরিবার। উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউর রহমান জানান, নদী ভাঙনের কবলে পড়া ও পানিবন্দী প্রায় ৬ হাজার পরিবারের তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। কয়েক দিন ধরে দুর্যোগ কবলিত এসব মানুষের চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। 

 ইউএনও, চেয়ারম্যানরা এ রকম দাবি করতে পারে। তবে আমাদের কাছে ৬ হাজার পরিবারের তথ্যই রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত