Ajker Patrika

চিকিৎসককে মারধর

চার হাসপাতালে কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে রোগীরা

রংপুর প্রতিনিধি
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদ এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসক-কর্মচারীরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা। তারাগঞ্জের চিকিৎসকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আজ মঙ্গলবার বদরগঞ্জ, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে।

মামলার এজাহার এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ (৩০) ওই রোগীকে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় সেখানে রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার তূর্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির সদস্য তাওরাতসহ আরও চার-পাঁচজন ওই চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে চিকিৎসকের শরীরে আঘাত করেন। এ ঘটনায় তূর্য, তাওরাতসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন চিকিৎসক সাবরিনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাগঞ্জ হাসপাতালের সামনে এখনো ঝুলছে কর্মবিরতির ব্যানার। তার পাশে বসে আছেন পুলিশ সদস্যরা। বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনেরা অপেক্ষার পর বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে ভর্তি রোগীরাও হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ফাঁকা পড়ে রয়েছে বেড।

চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন ডাঙ্গীরহাট গ্রামের সোনা মিয়া। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ডাক্তার চিকিৎসা দেওছে না। ঘরোত তালা দিছে। ওমার নাকি মারামারি হইচে। ওই জন্য হামাক চিকিৎসা দিবার নেয়। এটে হামার কী দোষ। হামরা রোগীরা কি ডাক্তারোক মারছি। হামাক ওষুধ চিকিৎসা দেওছে না কেন।’

অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালের সামনে কাতরাচ্ছিলেন সয়ার মাছুয়াপাড়া ধনেশ্বর রায়। তাঁর মা কাউছালী রানী মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন। ধনেশ্বর রায় বলেন, ‘হাসপাতালে নাকি চিকিৎসা বন্ধ। মোর মাক বাচাইম কেমন করি। ডাক্তারোক অনুরোধ করোং না হইলে, অ্যাম্বুলেন্সত রংপুর নিয়া যাইম।’

তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অসুস্থ মাকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছেলে ধনেশ্বর রায়। ছবিটি আজ মঙ্গলবার বেলা ২টায় তোলা। আজকের পত্রিকা
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অসুস্থ মাকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছেলে ধনেশ্বর রায়। ছবিটি আজ মঙ্গলবার বেলা ২টায় তোলা। আজকের পত্রিকা

তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অনির্বাণ মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তূর্য ও তাওরাত ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একজন অন্তঃসত্ত্বা চিকিৎসকের ওপর হাত তুলেছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য জেলা থেকে বৈষম্যবিরোধী নেতারা এসেছিল। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তারা অপরাধ করেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।’

ডা. অনির্বাণ আরও বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি, আশ্বাসও দেয়নি। অন্তত কেউ যদি আশ্বাস দিত ৭ দিন, ১০ দিনের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার করা হবে। তা-ও আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতাম। কিন্ত আসামিরা প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার সাথে সাথেই হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।’

এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্ত তূর্য ও তাওরাতকে পাওয়া যায়নি। তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ। তবে তূর্যের বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমার সামনে ওই চিকিৎসক আমার ছেলেকে বলেছে, তোমার বাপ মরলে আমি কী করব। এ কারণে ছেলে রাগান্বিত হয়েছিল। এ নিয়ে তর্ক হয়েছে। মারপিটের অভিযোগ সঠিক না।’

জানতে চাইলে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম মুঠোফোনে আজকের পত্রিকা বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে চিকিৎসকদের মারধরের প্রতিবাদ এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বদরগঞ্জ, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক ঘণ্টা করে প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসক-কর্মচারীরা। দ্রুততম সময়ে আসামি গ্রেপ্তার করা না হলে রংপুরের ৮ উপজেলার কর্মরত চিকিৎসক-কর্মচারীরা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাবে বলেও জানা গেছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাকির মুবাশ্বির বলেন, ‘অপরাধ যে-ই করুক, তাঁর বিচার হওয়া দরকার। আমাদের সহকর্মীকে মারধর করা হয়েছে। তাঁর প্রতিবাদে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরা আজ এক ঘণ্টা প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেছি। দ্রুত আসামি গ্রেপ্তার না হলে আমরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাব।’

কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজাত সাহা জানান, জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা। তিনি বলেন, সম্প্রতি তারাগঞ্জে এক নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা। কর্মবিরতি শেষে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

এদিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে চিকিৎসা চালু এবং রোগীদের দুর্ভোগ, হয়রানি বন্ধে আজ বিকেল সাড়ে চারটায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে তারাগঞ্জের ছাত্র-জনতা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির সদস্য তারাগঞ্জের বাসিন্দা আল-আমিন আকাশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত