Ajker Patrika

রংপুর

আমনে বাড়তি খরচ শতকোটি টাকা

  • জমি ফেটে যাচ্ছে, চারাও শুকিয়ে যাচ্ছে।
  • শ্যালো পাম্পে পানি তুলে আমন রোপণ ও ধানের চারা বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা কৃষকদের।
শিপুল ইসলাম, রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৮: ৩৭
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

‘এই বর্ষা কি আর আগের মতো আছে?’ মাঠে কাজ করতে করতে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন কৃষক মঈনুল ইসলাম। পাশে দাঁড়ানো আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম উত্তর দিলেন, ‘এবার তো শ্যালোর পানি ছাড়া ধান বাঁচবে না। হামার কপালোত যে কী আছেম আল্লাহ জানে’।

রংপুরের তারাগঞ্জের মেনানগর গ্রামের কৃষক মঈনুল ও নজরুলের এমন সংলাপ এখন উত্তরের কৃষকপাড়ার প্রতিদিনের বাস্তবতা। বৃষ্টি নেই, আছে শুধু রোদ, ঘাম আর বাড়তি খরচের বোঝা।

বর্ষাকাল চলছে; অথচ মাঠে এখনো জমেনি বৃষ্টির পানি। জমি ফেটে যাচ্ছে, চারা শুকিয়ে যাচ্ছে; কৃষকের কপালও যেন তেমনি চৌচির। শ্যালো পাম্পে পানি তুলে আমন রোপণ ও ধানের চারা বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চলছে এই অঞ্চলের কৃষকদের।

রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলে (রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী) চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টরে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমনের চারা রোপণ শুরু হয়। চলবে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।

তবে কৃষকেরা বলছেন, আমন ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল। কিন্তু ভরা বর্ষা আর আমনের মৌসুমে এবার বৃষ্টি দেখা নেই। প্রতি হেক্টরে সেচ দিয়ে শুধু চারা রোপণে দুই হাজারের বেশি টাকা খরচ পড়ছে। এ পর্যন্ত লাগানো আমনে বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মৌসুমে বৃষ্টি না হলে প্রায় ১২৪ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা শুধু রোপণে সেচ বাবদ খরচ হবে।

সম্প্রতি অন্তত ১০টি মাঠ সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টি না হলেও ডিজেল চালিত শ্যালো ও সেচ পাম্প দিয়ে আমন রোপণের ধুম লেগে গেছে। কেউ চারা রোপণে ব্যস্ত, কারও রোপণ করা চারা পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা।

তারাগঞ্জের হাজীপাড়ার মাঠে কথা হয় কৃষক কেচু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আলুত সউগ লস, দাম নাই, নেওছে না। বোরো ধান আর্ধেক পোকা খাইছে। আগোত আমন চাষে তেমন খরচ লাগে নাই। এবার বৃষ্টির কোনো ঠিক নাই। খুব রোদ, মাটি ফাটি যাওছে। শ্যালো নাগে আমন চাষ করার নাগেছে। হামার কপালোত যে কী আছে, তাক আল্লাহ ভালো জানে।’

নারী বর্গাচাষি ফকিরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রাহেনা বেগম বলেন, ‘এবার যে অবস্থা, তাতে মনে হয়, ফসল উঠবার আগেই ঋণ হয়া যাইবে। পানি দিতে দিতে জমিত মাটি নরম হইতাছে ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টি না হইলে ফলন তো কমবে।’

তবে ২৮ জুলাই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমন ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল। কৃষকেরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা জানেন, এ সময় বৃষ্টি হয়। হয়তো বৃষ্টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হবে বলে সতর্কবার্তা দেখেছি। কিন্তু তা অনিশ্চিত ব্যাপার। বাড়তি খরচ হলেও চারার বয়স ঠিক থাকা এবং ফলন ভালো হওয়ার জন্য সেচ মেশিনগুলো চালু করে যথাসময়ে চারা রোপণের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লজ্জায় ধর্ষণের শিকার মায়ের আত্মহত্যা: ৮ বছরের মেয়েটি যাবে কোথায়

বলিদান ও শয়তান পূজার বুদ্ধি দিল চ্যাটজিপিটি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মহড়া শুরু, চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত

বাংলাদেশ ব্যাংকে পোশাক নির্দেশনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিকের

সঞ্জয়ের ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে পারিবারিক উত্তেজনা তুঙ্গে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত