Ajker Patrika

অফিস খোলেনি সকাল ৮টায়, সাড়ে ৯টাতেও আসেননি কর্মকর্তারা

আল মামুন জীবন, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও)
অফিস খোলেনি সকাল ৮টায়, সাড়ে ৯টাতেও আসেননি কর্মকর্তারা

সকাল ৮টায় অফিস খুলবে। টিভিতে এমন খবর দেখার পর অনেক আশা নিয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভ্যান নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন বড়বাড়ী ইউনিয়নের বেলবাড়ী গ্রামের কৃষক মাহে আলম ও আধারদিঘী গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে দেখে আজ বুধবার সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসে এসেছেন সারের স্লিপ নিতে। গতকাল মঙ্গলবার বৃষ্টি হয়েছে। এই স্লিপ নিয়ে গেলে ডিলারের কাছ থেকে সার কিনে জমিতে দিতে পারবেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টা ধরে ভ্যানের উপরেই বসে আছেন। সকাল সাড়ে ৮টায় কৃষি অফিসের তালা খুললেও কোন কর্মকর্তার দেখা পাননি তাঁরা। আরও অপেক্ষা করতে হবে তাদের।

কৃষক মাহে আলম জানান, মনে করেছিলাম সকাল সকাল স্লিপ নিয়ে এসে সারটা ডিলারের নিকট থেকে কিনে জমিতে দিয়ে ভ্যান নিয়ে বের হবো রোজগার করতে। কিন্তু আজ মনে হয় স্লিপ আর সার কিনতে দিন পার হয়ে যাবে। জমিতে সার দেওয়া আর হবে না। সারা দিন ভ্যান গাড়ি দিয়ে যা আয় করতাম। সেই টাকাটা আর আয় করা হবে না।

ইউনুস আলী জানান, হামার দেশত কৃষক অসহায়। অফিসত আসলে অফিসার নাই, ডিলারের কাছত গেলে সার নাই। ধান আবাদ না করলে কি খায় বাচিমো। ছুয়ালাক কি খিলায় বাঁচায় রাখিমো। সরকারটা চারো পাকাই (চারদিকে) হামাক চিপে ধরিজে। খালি গলাডা চিপে ধরিবা বাকি আছে।

অফিস খোলেনি সময়মতজ্বালানি সাশ্রয়ে গেল ২২ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের  প্রজ্ঞাপনে দেশের সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বেধে দিলেও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের দুটি দপ্তর বাদে অন্য কোন দপ্তরকেই নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি। 

বুধবার সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এবং উপজেলা পল্লি দারিদ্র্য বিমোচন অধিদপ্তর বাদে সব অফিসের দপ্তরেই তালা ঝুলছে। সকাল ৮টা বাজলেও অনেক দপ্তরে বাইরের বৈদ্যুতিক বাল্ব জলতে দেখা গেছে।

সকাল ৮টা ১৪ মিনিটে অফিসে এসে তাড়াহুড়ো করে অফিস খুলছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটু দেরি করে ফেলেছি। সময়টা বদলে যাওয়ার কারণে প্রথম দিন একটু দেরি হয়েছে। এরপরে ঠিক হয়ে যাবে।

সকাল ৯টা পর্যন্ত উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়সহ অন্য দপ্তরগুলোর তালা খুললেও কোনো কর্মকর্তা দপ্তরে উপস্থিত হননি।

অফিস খোলেনি সময়মতআমজানখোর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রাম থেকে সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ে এসেছেন দরিবুল্লাহ নামে এক বৃদ্ধ। উপজেলা পরিষদের অফিসগুলোতে দিনের বেলায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে থাকতে দেখে তিনি জানান, গ্রামের কৃষকেরা বিদ্যুতের অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছি না। আর উপজেলা অফিসের লোকজন দিনের বেলাতেও বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন। অবহেলা করবেন সরকারি লোকজন, ভোগান্তি আমাদের কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, সার সংকট নিরসনে জেলায় মিটিং থাকার কারণে আমি সকালেই চলে এসেছি। অফিস সঠিক সময়েই খোলার কথা। যদি না খুলে তাহলে ফোন করে খবর নিতে হবে।

ঠাকুরগাঁও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, নিয়ম মেনে সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে না আসা চরম গাফিলতি আর অবহেলা। সরকারের নিয়ম নীতি সরকারি লোকজনকেই মানাতে পারছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. যোবায়ের হোসেনর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সময় মতো অফিসে আসা বাধ্যতামূলক। যেসব দপ্তর আজকের সময়মতো অফিসে উপস্থিত হয়নি, তাদের সকলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত