Ajker Patrika

বিষ দিয়ে পাখি মেরে জবাই করে বিক্রি করছে শিকারিরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬: ৫১
বিষ দিয়ে পাখি মেরে জবাই করে বিক্রি করছে শিকারিরা

পতঙ্গের ভেতরে বিষ দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে অবাধে পাখি শিকার চলছে। বিষটোপ খেয়ে মৃত পাখিগুলো জবাই করে বিক্রি করছে শিকারিরা। চিকিৎসকেরা বলছেন, এসব পাখির মাংস খেয়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এভাবে নির্বিচারে পাখি হত্যার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদেরা।

আজ শুক্রবার সদর উপজেলার মোলানী এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ফসলের মাঠে পানি দিচ্ছেন কৃষকেরা। এ সময় সাদা বক, গো-শালিক, চড়ুই, ডাহুক পাখি মাটির নিচে নেমে আসে খাবারের সন্ধানে। পোকামাকড়সহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় একশ্রেণির পাখিশিকারি পতঙ্গের ভেতরে বিষাক্ত কীটনাশক ঢুকিয়ে ছেড়ে দেয়। সেই পোকাগুলো খেয়ে পাখিরা মারা যায়। তখন পাখিগুলো ধরে কাছে রাখা ব্লেড, ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামে বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধন করছে অসাধু একটি চক্র। চক্রটি পতঙ্গ ও গমের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তা ছড়িয়ে রাখে ধানখেতের পাশে। সেই বিষাক্ত টোপ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অসহায় পাখিগুলো। 

পাখি শিকার করা দুই কিশোরের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, শখের বশে তারা পাখি শিকার করছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে জবাই করা সাতটি গো-শালিক পাখি বিষয়ে জানতে চাইলে দুই কিশোর জানায়, পাখি ধরা ও মারা আইনগত অপরাধ, তা এত দিন জানত না তারা। 

পাশে স্থানীয় কৃষক নিকেল দাস বলেন, ‘পাখিরা আমাদের ফসলের খেতের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। পাখি হত্যা বন্ধ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’ 

ঠাকুরগাঁও পরিবেশবাদী সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে সব ফসলি মাঠেই পাখি দেখা যাচ্ছে। এসব পাখি শিকারে একশ্রেণির অসাধু লোকজন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাখি শিকারের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। এ কাজে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। 

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন,  অবাধ শিকারের কারণে পাখির আশ্রয়ের পরিসর সীমিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে এর প্রজনন ও আবাসস্থল। অতিথি পাখিসহ সব ধরনের পাখি নিধন বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। 

জেলা সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিউল আলম মন্ডল বলেন, ‘বন বিভাগে জনবলের সংকট রয়েছে। তবে পাখি শিকারের তথ্য পেলে অভিযান পরিচালনা করে পাখি শিকার বন্ধের চেষ্টা করি। স্থানীয়ভাবে সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানো হলে পাখি নিধন কমে যাবে বলে আশা করি।’ 

বিষ দিয়ে মেরে ফেলা পাখি। সদর উপজেলা মোলানী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাকিবুল আলম বলেন, পাখি শিকারের জন্য যে বিষ ব্যবহার করা হয়, তা ত্বকের মাধ্যমে, খাবার ও শ্বাসনালির মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে। বিষের মাত্রা যদি বেশি থাকে, তাহলে মানুষ দ্রুত মারা যেতে পারে। আর এটা না হলে অল্প সময়ের মধ্যে অসুস্থ হতে পারে। যেমন বমি, রক্তচাপ কমে যাওয়া, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। এ ধরনের বিষ দিয়ে শিকার করা পাখি খাওয়া যাবে না। এটি নিরাপদ নয়। এসব পাখির মাংস রান্না করলেও নিরাপদ হবে না। 

সদর জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি কেউ আইন অমান্য করে পাখি শিকার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধানচাষিদের ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে পাখিদের বসার জন্য পাচিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল বা বাঁশের জটা ইত্যাদি খাড়াভাবে জমিতে পুঁতে পাখি বসার কিংবা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ওই কঞ্চিতে পাখি এসে বসে খেতের ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায়। এতে কৃষকের কীটনাশক ব্যবহার কম হয়, ফসলও ভালো হয়। তবে নির্বিচারে পাখি হত্যা হলে কৃষকের ফসলের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত