Ajker Patrika

দুর্ঘটনার এক বছর পর চোখ মেলেছেন প্রবাসী শ্রমিক জব্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল জব্বার। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল জব্বার। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক বছর কোমায় থাকার পর অবশেষে বাম চোখ খুলেছেন সৌদি আরবপ্রবাসী শ্রমিক আবদুল জব্বার সরদার (৪৫)। পুরোপুরি জ্ঞান না ফিরলেও চোখ মেলে তাকানোয় উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিবার।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর টানা এক বছর সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন জব্বার। দেশে এনে গত ২৬ মে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গতকাল শনিবার তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। ওয়ার্ডে নেওয়ার সময় তিনি এক চোখ মেলে তাকান।

হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আবদুল জব্বার একেবারে কঙ্কালসার হয়ে গেছেন। তাঁর শরীরে প্রচুর পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে। মাথায় অস্ত্রোপচার লাগবে। আশা করছি, এরপর ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে আসবে।

আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, জব্বারের গলায় ট্রাকিওটমি টিউব সংযুক্ত আছে, যা সৌদি আইসিইউতে থাকার সময় লাগানো হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যে এটি সরিয়ে ফেলা হবে। এরপর কথা বলার সক্ষমতা ফিরে পেতে পারেন তিনি।

জব্বার সরদার রাজশাহীর তানোর উপজেলার হিরানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে বিমানবন্দরে নামার পরই তাঁকে ক্লিনারের কাজে লাগানো হয়। পরে জানতে পারেন, দালালেরা তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিন বছর পর খালি হাতে ফিরতে হয় তাঁকে।

একপর্যায়ে পরিচিত এক ব্যক্তির সহায়তায় তিনি একটি টাইলস কারখানায় কাজ পান। গত বছর ১০ মে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকেই আইসিইউতে অচেতন ছিলেন।

স্বামীকে ফেরত আনতে মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন স্ত্রী আদরি খাতুন। ইউএনও অফিসে ২২ দিন দাঁড়িয়ে থেকেছেন, দ্বারে দ্বারে গেছেন সহায়তার আশায়। অবশেষে নানা প্রচেষ্টায় অচেতন অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনেন স্বামীকে।

হাসপাতালে বাবার পাশে থাকা জব্বারের মেয়ে জলি আরা বলে, ‘আব্বা আমাকে চিনতে পারছে। আমি কথা বললাম, তখন মুখে হালকা হাসি ফুটল। কথা বলার চেষ্টা করছিল।’

আদরি খাতুন বলেন, স্বামীকে দেশে আনতে যা খরচ হয়েছে, সব ধার। এখনো সাত লাখ টাকা ঋণ রয়ে গেছে, যেটা নিয়ে উনি বিদেশে গিয়েছিলেন। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাত ঘণ্টা রাখতেই ৭০ হাজার টাকা লেগে যায়। এরপর ২৫ হাজার টাকায় অক্সিজেনসহ গাড়ি ভাড়া করে রাজশাহী আসতে হয়।

জব্বারের দেশে ফেরা ও চিকিৎসায় সহায়তা পেতে গত ১৩ জানুয়ারি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করেছিলেন আদরি খাতুন। আর্থিক সহায়তা এখনো মেলেনি।

বোর্ডের সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ) মাইন উদ্দিন বলেন, ‘জব্বারের পরিবার আবেদন করার পর আমরা দূতাবাসে চিঠি দিয়েছি। ৯ এপ্রিল আবার তাগিদপত্র পাঠানো হয়। পরে তাঁকে দেশে পাঠানো হয়। চিকিৎসা সহায়তার জন্য আবার আবেদন করলে তিনি যদি নিবন্ধিত শ্রমিক হন, দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত