Ajker Patrika

দেশে এসে বাড়ির কাজ শেষে বিয়ে করা হলো না রমজানের

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ২০: ৩৯
দেশে এসে বাড়ির কাজ শেষে বিয়ে করা হলো না রমজানের

২০১৮ সালে সৌদি আরব যান রমজান আলী (৩৩)। গত বছরের শেষের দিকে পাঁচ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসে বাড়ির কাজ শুরু করেছিলেন। কথা ছিল ছুটি শেষে সৌদি আরব গিয়ে বাড়ির অসমাপ্ত কাজ শেষ হলে দেশে এসে বিয়ে করবেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু সুখে কাটাবেন। কিন্তু সেই সুখ আর এল না রমজানের জীবনে। আগুন কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ। সৌদি আরবে এক অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজ প্রামাণিকের ছেলে রমজান।

আজ রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, রমজান আলীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একদিকে বাড়িতে লোকজনের ভিড়, অন্যদিকে স্বজনদের আহাজারি। কিছুতেই যেন থামছে না পরিবার ও স্বজনদের কান্না। শোকে থমথমে হয়ে আছে পুরো গ্রামবাসী। 

রমজান আলীর বড় বোন সুমি আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা দুই ভাই, দুই বোন। ভাইবোনের মধ্যে রমজান তৃতীয়। পরিবারে প্রায় ৬-৭ শতক জায়গা রয়েছে। বাবা আজিজ বেঁচে থাকতেই দুই বোনকে বিয়ে দেন। ২০১৩ সালে বাবা মারা গেলে সংসারের ভার পড়ে রমজানের ওপর। কৃষিশ্রমিক হিসেবে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। এরপর সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ধারদেনা করে ২০১৮ সালে সৌদি আরব যান। গত বছরের শেষদিকে পাঁচ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। 

সুমি বলেন, দেশে এসে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন রমজান। কিন্তু অর্থসংকটের কারণে কাজ শেষ করতে পারেননি। পরিবার থেকে রমজানকে বিয়ের কথা বলা হলে তিনি বিয়ে করেননি। রমজান বলেছিলেন, ‘আগে বাড়ির কাজ শেষ করি, এরপর বিয়ে করব।’ এরপর ফের সৌদি আরব চলে যান রমজান। 

গত শুক্রবার সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের হুফুপ সানাইয়ার আল মনসুরা শিল্প তালুকে অবস্থিত একটি ফার্নিচারের কারখানায় প্রতিদিনের মতো অন্য শ্রমিকদের  সঙ্গে কাজে যান। সেখানে অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশি নয়জনের মধ্যে রমজানের নামও রয়েছে। 

রমজানের বোন সুমি আক্তার আরও জানান, গত মঙ্গলবার মায়ের সঙ্গে ইট কেনা নিয়ে শেষ কথা হয়েছিল রমজানের। এরপর আর কথা হয়নি। গত শুক্রবার সকালে জানতে পারি রমজান কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

সুমি বলেন, ‘আমার ভাই রমজানের স্বপ্ন ছিল বাড়ির কাজ শেষ হলে দেশে এসে বিয়ে করবেন। কিন্তু আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার সঙ্গে আমাদের স্বপ্নগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দ্রুত ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।’ 

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর আমরা নিহত পরিবারের কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছি। এ ছাড়া দ্রুত যেন মরদেহ দেশে আনা যায় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’ 

শুক্রবার সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের হুফুপ সানাইয়ার আল মনসুরা শিল্প তালুকে অবস্থিত একটি ফার্নিচারের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশি নয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে আত্রাই উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের রমজান আলী এবং একই উপজেলার উদয়পুর মণ্ডলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান সরদারের ছেলে বারেক সরদার নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত