Ajker Patrika

অধ্যক্ষ দাবিদার দুজনই, শিক্ষা অফিসেই একজনকে চড় মারলেন আরেকজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী    
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ০২
Thumbnail image
এক শিক্ষককে আরেক শিক্ষকের মারধর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের ভেতরেই এক শিক্ষক আরেক শিক্ষককে চড় মেরেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক জয়নাল আবেদিন নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালীর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে জয়নাল আবেদিন কলেজে অনুপস্থিত। আর অভিযুক্ত সিরাজুল হক কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি এখন কলেজের ‘স্বঘোষিত’ অধ্যক্ষ। তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করলেও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাঁকে এই দায়িত্ব দেননি। এখন জয়নাল আবেদিন ও সিরাজুল হক দুজনই নিজেদের অধ্যক্ষ দাবি করছেন।

লিখিত অভিযোগে জয়নাল আবেদিন নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় কর্মচারীদের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তখন সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল হক তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাঁকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।

ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, পরিচালকের কার্যালয়ের এক কর্মচারীর কক্ষের দরজার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জয়নাল আবেদিন। সিরাজুল হক দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে তাঁকে দেখেই পর পর তিনটি চড় মারেন। এরপর তাঁকে দেয়ালের সঙ্গে গলা চেপে ধরেন। পরে আবার থাপ্পড় দিতে হাত উঁচু করলে দ্রুত এক কর্মচারী গিয়ে ধরে ফেলেন। তারপর সিরাজুল হককে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে জয়নাল আবেদিনকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জয়নাল আবেদিনকে চড়-থাপ্পড় মারার বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল হক প্রথমে দাবি করেন বুধবার তিনি শিক্ষা ভবনেই যাননি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থাকার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন না করলেই খুশি হব। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারব না।’

নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘জয়নাল আবেদিন অভিযোগ করতে আসবেন, এটা জানতাম। পরে অভিযোগ দিয়ে গিয়েছেন কি না জানি না। অভিযোগ দিয়ে গেলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এক শিক্ষককে আরেক শিক্ষকের মারধর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
এক শিক্ষককে আরেক শিক্ষকের মারধর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, গত ৯ আগস্ট তিনি জয়নাল আবেদিনকে কলেজে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়েছেন জয়নাল আবেদীনের বাড়িতেও। কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া ও বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগে জয়নাল আবেদিন সংশ্লিষ্ট থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। সিরাজুলের ভয়ে তিনি কলেজে যেতে পারেন না বলে তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন।

এদিকে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন কলেজে অনুপস্থিত থাকায় গভর্নিং বডির সভাপতি ও ইউএনও সোহরাব হোসেন কলেজের সম্প্রতি এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন। কিন্তু পরদিনই অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে নেন সিরাজুল হক। তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা করেন।

গভর্নিং বডির সভাপতি ও ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, ‘কলেজে যে এখন কে অধ্যক্ষ সেটা নিয়েই জটিলতা চলছে। জয়নাল আবেদিন অনুপস্থিত থাকলেও তিনি আবার আলাদা কমিটিও অনুমোদন করিয়ে এনেছেন আমাকে না জানিয়ে। এসব ব্যাপারে করণীয় জানতে চেয়ে আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে লিখেছিলাম। জেলা প্রশাসন আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।’

এক শিক্ষককে আরেক শিক্ষকের মারধর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
এক শিক্ষককে আরেক শিক্ষকের মারধর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

শিক্ষা ভবনে জয়নাল আবেদিনকে আরেক শিক্ষকের মারধর করার বিষয়ে ইউএনও আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে তো সেটা ফৌজদারি অপরাধ। এ জন্য পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে যদি সিরাজুল হক অভিযুক্ত হন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত