Ajker Patrika

বাবার কোলে মাথা রাখার সুযোগ পেল না সাইফান

 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৩৩
ছেলে মিনহাজুল ইসলাম সাইফানকে কোলে নিয়ে মা নূরেসান খাতুন শম্পা। সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছেলে মিনহাজুল ইসলাম সাইফানকে কোলে নিয়ে মা নূরেসান খাতুন শম্পা। সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

আট বছর অপেক্ষার পর বাবা হয়েছিলেন মিনারুল ইসলাম; কিন্তু সন্তানের মুখ দেখা হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এই যুবক। স্বামীর শোকে ভেঙে পড়া নূরেসান খাতুন শম্পা তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামী হারানোর ২ মাস ৯ দিন পর নূরেসানের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক ছেলেশিশু। স্বামীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছেন মিনহাজুল ইসলাম সাইফান। তার বয়স এখন ৯ মাস। ছোট্ট সাইফান এখনো বোঝে না, বাবা প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্য। বাবার কোলে মাথা রাখার সুযোগ হয়নি তার।

শহীদ মিনারুল ইসলামের (২৭) বাড়ি রাজশাহী নগরের গুড়িপাড়ার পুরাপাড়া এলাকায়। তাঁর বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। বাড়িতে মা ডলি বেগম আর বড় দুই ভাই মো. সোহেল ও নাজমুল হক। মিনারুলের দুই ভাই সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। আর মিনারুল পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২০ জুলাই দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। স্ত্রী নূরেসান যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন থেকে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুর গ্রামে বাবা মো. সাইদুলের বাড়িতে থাকেন। ২০ জুলাই দুপুরেও স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মিনারুল খেয়েছেন কি না জানতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাইরে তো খুব গ্যাঞ্জাম চলছে। আপনি বাইরে যাইয়েন না।’ কিন্তু মিনারুল গিয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর জুলাই যোদ্ধারা মিনারুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরদিন রাজশাহীর পুরাপাড়ার বাড়িতে মিনারুলের মরদেহ আনা হয়। তখন ছুটে আসেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী। তিনি পরিবারকে ভয় দেখান যে ‘মিনারুল গুলিতে নিহত হয়েছে’ এ কথা বলা যাবে না। মিনারুলের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়, এমন মৃত্যুসনদ লিখে তড়িঘড়ি লাশ দাফন করিয়ে দেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৩ সেপ্টেম্বর মিনারুলের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করে গত ৯ মে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত শুক্রবার দুপুরে ফরাদপুরে গিয়ে নূরেসান খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। ফুটফুটে হাসিখুশি ছেলেকে কোলে নিয়ে নূরেসান বলেন, ‘বাবা থাকলে আমার ছেলেটার সুন্দর ভবিষ্যৎ হতো। ছেলেটাই আমার ভবিষ্যৎ। আমি মায়ের বাড়িতে থাকি। আমার বাবাও দিনমজুর। আমাদের তো সামর্থ্য নেই। ছেলেটাকে যেন মানুষের মতো মানুষ করতে পারি, সেটাই চাওয়া। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।’ একটু থেমে চোখের পানি মুছে নূরেসান বলেন, ‘বিচারও চাই আমার স্বামীকে এভাবে গুলি করে হত্যার। সেটা যত দ্রুত সম্ভব।’

নূরেসানের বাবা মো. সাইদুল বলেন, ‘আমি দিনমজুরি করে খাই। আমার নাতি অনেক সময় অসুস্থ থাকে। ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। সরকারের পক্ষ থেকে যে সহায়তা পাওয়া গেছে, সেটা দুই ভাগ হয়েছে। সাইফানের দাদি একটা অংশ পেয়েছে; বাকিটা আমরা সাইফানের জন্য রেখেছি। আমরা যাতে ছেলেটাকে মানুষ করতে পারি, সে জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাবিপ্রবিতে শাস্তি পাচ্ছেন ছাত্রলীগের ১০২ জন

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

এনসিপির নিবন্ধন: ২০০ ভোটারের শর্ত পূরণ হয়নি ২৫ উপজেলায়

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে লাগবে আলাদা অনুমোদন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত