Ajker Patrika

সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনার ঝড়

পাবনা প্রতিনিধি
সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনার ঝড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনার ঝড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুচিত্রা সেনের নাম বাদ দিয়ে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রীনিবাসের নতুন নামকরণ নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে সংবাদটি প্রকাশের পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। পাবনার সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সাধারণ নাগরিকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

এটিকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ পাবনার সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সুচিত্রা সেন এই উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং পাবনাবাসীর গর্ব তিনি।

তিনি যেহেতু সব ধরনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে, সেহেতু তাঁর নামে করা হলের নাম পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি পাবনাবাসীর জন্য লজ্জাজনক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা চাই, ওই ছাত্রীনিবাসের নাম সুচিত্রা সেনের নামে পুনরায় বহাল করা হোক।’

সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল তাঁর ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস–এর নাম পাল্টে দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাবনার সংস্কৃতিপ্রেমী জনতা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

পাবনার একুশে বইমেলা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি ও সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ভিত্তি করেই এই ছাত্রীনিবাসের নাম রাখা হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নাম বাদ দিয়ে সেখানে অন্য একজনের নামে নামকরণ করা, এটা খুবই গর্হিত কাজ। এটা শিল্প-সংস্কৃতিকে অপমান করা হয় বলে মনে করি।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়ার। তিনি নামকরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, প্রথমে যখন নামকরণ করা হয়, তখন একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য এই নামকরণের (সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস) পক্ষে ছিলেন না।

তখনকার অধ্যক্ষ মহোদয় বলেছিলেন, এটা পার্শ্ববর্তী একটি দেশের কূটনীতির চাপে করতে হচ্ছে। এটা তৎকালীন একটা পলিটিক্যাল গ্রুপ তখনকার প্রেসার গ্রুপ ছিল, তারা তাদের পলিটিক্যাল টার্গেটে এই নাম ঢুকিয়েছিল এডওয়ার্ড কলেজের মধ্যে।

মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত ছাত্রাবাস, ছাত্রীবাস, হল, কোনো নায়িকার নামে নেই। সুচিত্রা সেন আমাদের দেশের নাগরিকও নন। কেন এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রীদের হলে তাঁর নাম আসতে হলো—এ নিয়ে তখনকার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রতিবাদ সেদিন টেকেনি। অধ্যক্ষ মহোদয় তখন চাপে পড়ে এই নামকরণ (সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস) প্রস্তাব করেছিলেন বলে তিনি তখন জানিয়েছিলেন।’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘এবার যখন সুযোগ পেয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল, তখন তারা প্রস্তাব করে বলেছে, ওই সময় আমাদের চাহিদাটা পূরণ করতে পারিনি। এখন নতুন প্রশাসনের কাছে, নতুন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ দাবি করছি যে নামটা আমরা পরিবর্তন চাই। তখন সব শিক্ষক, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই নামটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে পরবর্তী সভায় নতুন নামটা (জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস) প্রস্তাব হয় এবং সবাই একমত হয়।’

আব্দুল আউয়াল মিয়া আরও বলেন, ‘এখানে যারা স্টেকহোল্ডার, তাদের সম্মতি, ছাত্রসংগঠনের সম্মতি, ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং হলের আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে এই নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এখন যারা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে ভিন্ন কথা বলছে, তাদের একটি নির্দিষ্ট বলয়ের চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, গতকাল পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নতুন নামফলক উন্মোচন করা হয়েছে। এগুলো হলো–শেখ রাসেল ছাত্রাবাসের পরিবর্তিত নাম’ বিজয় ২৪ হল’, বেগম ফজিলাতুন নেছা ছাত্রীনিবাস’ আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) ছাত্রীনিবাস’ এবং সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের পরিবর্তিত নাম ‘জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান

শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপি নেতা

৪ ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বদলে গেল স্কুল-কলেজের শপথ, বাদ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত