Ajker Patrika

মাঝপথে দুই পিডির দরপত্র স্থগিত ২০০ ঠিকাদারের ক্ষতি ২ কোটি

  • দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে কয়েক হাজার শিডিউল কিনেছিলেন ঠিকাদারেরা।
  • প্রতিটি শিডিউলের মূল্য এক হাজার টাকা; তা আর ফেরত পাবেন না তাঁরা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ১৭
Thumbnail image

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) দুজন প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দুটি দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই শতাধিক ঠিকাদার। জানা গেছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে তাঁরা কয়েক হাজার শিডিউল কিনেছিলেন। প্রতিটি শিডিউলের মূল্য ছিল এক হাজার টাকা। এই টাকা আর ফেরত পাবেন না তাঁরা। সব মিলিয়ে এসব ঠিকাদারের প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ-দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্পের পরিচালক নাজিরুল ইসলাম সম্প্রতি ২৬টি লটে একটি দরপত্র আহ্বান করেছিলেন। প্রতিটি লটে ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭১২ টাকার কাজ ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় বিল পুনঃখননের এই কাজ করার কথা ছিল। প্রতিটি লটে দরপত্রে অংশ নিতে ঠিকাদারদের এক হাজার টাকা মূল্যের শিডিউল কিনতে হয়েছিল। ২৬ লটের এক সেট শিডিউলের মূল্য ছিল ২৬ হাজার টাকা। কাজ পাওয়ার আশায় অনেক ঠিকাদার তিন-চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে কয়েক সেট করে দরপত্র কিনেছিলেন। ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-জিপিতে দরপত্র দাখিল করার সময় ছিল। কিন্তু গত রোববার ঠিকাদারেরা জানতে পারেন, দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছেন পিডি নাজিরুল ইসলাম। এ খবর জানাজানির পর ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে প্রায় ১৫০ ঠিকাদারের

এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিএমডিএর একজন ঠিকাদার বলেন, ‘পিডি নাজিরুল টাকা নিয়ে কাজ দেন। এবার হয়তো টাকার হিসাবটি ঠিকমতো মেলেনি। ফলে তিনি কাউকেই কাজ না দিয়ে স্থগিত করে দিয়েছেন।’

এদিকে বিএমডিএর ‘ভূগর্ভস্থ সেচ নালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পিডি শহীদুর রহমান সম্প্রতি বিএমডিএর গভীর নলকূপের পাইপলাইন সম্প্রসারণকাজের দরপত্র আহ্বান করেছিলেন। ৯৫টি লটে মোট ১৯ কোটি টাকার এই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রতিটি লটে কাজ ছিল ২০ লাখ টাকার। প্রতিটি লটেরই কাজের শিডিউল মূল্য ছিল এক হাজার টাকা। বেশির ভাগ ঠিকাদার সব কটি লটের জন্য ৯৫ হাজার টাকা দিয়ে শিডিউল কিনেছিলেন। একাধিক লাইসেন্সে অনেকে কয়েক সেট শিডিউল কেনেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই দরপত্র আহ্বান করার পরই ৫ জানুয়ারি রাজশাহীর প্রয়াত এক জামায়াত নেতার ছেলে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে পিডির কার্যালয়ে যান। তাঁদের কাজ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। পিডি বলেছিলেন, ই-জিপি সিস্টেমে কাউকে কাজ দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। পরে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়। দপ্তরে ভাঙচুরও করা হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করেন পিডি।

শহীদুর বলেন, ‘টেন্ডার আবার করা হবে। কাজ চলছে।’ তিনি জানান, এবার আর ই-জিপি প্রক্রিয়ায় নয়, লটারিতে কাজ দেওয়া হবে। এটা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁকে লাঞ্ছিত করার কারণেই লটারির প্রক্রিয়ায় যাওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকটা সে রকমই।’

পিডি নাজিরুল ইসলাম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার প্রকল্প রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায়। দরপত্রে শুধু এই তিন জেলার ঠিকাদারদেরই অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বিএমডিএর কার্যক্রম চলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায়। ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুরের লোকজন দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁরা আন্দোলন করার হুমকি দিচ্ছেন। তাই দরপত্র স্থগিত করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত