Ajker Patrika

‘অছাত্র’ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মারধর-চাঁদাবাজির অভিযোগ, বহিষ্কার হয়েও থাকেন হলে

রাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৫: ২৪
‘অছাত্র’ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মারধর-চাঁদাবাজির অভিযোগ, বহিষ্কার হয়েও থাকেন হলে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাসকিফ আল তৌহিদ। তাঁর মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে বছর দুই আগে। শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় হল থেকে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর সভাপতির পক্ষ থেকে ‘হল দেখভালের’ দায়িত্ব নিয়ে আবার হলে ফেরেন তিনি।

ওই দায়িত্ব পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তাসকিফ আল তৌহিদ। জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীকে মারধর, হুমকি, চাঁদাবাজি ও হলের আসন থেকে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে।

এদিকে ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তাসকিফ আল তৌহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি একই জেলায়। সভাপতির আস্থাভাজন হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁর (তৌহিদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তাঁর হলে থাকার বিষয়ে মোস্তাফিজ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তাসকিফ আল তৌহিদ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২০৬ নম্বর কক্ষে থাকেন। আরবি বিভাগ থেকে ২০২০ সালে স্নাতক এবং ২০২২ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তিনি।

২০২২ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে তাসকিফ আল তৌহিদসহ তিন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তৌহিদকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কারসহ বাকি দুজনকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। ওই ঘটনা তদন্তে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক জরুরি সভায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। সেই তদন্ত আর এগোয়নি।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী বিবেক সাহাকে কক্ষ থেকে নামিয়ে এক জুনিয়র কর্মীকে আসনে তুলে দেন তৌহিদ। বিষয়টি নিয়ে মাঝরাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন।

একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মফিজুর রহমানকে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৌহিদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে হল প্রাধ্যক্ষ উভয় পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।

চলতি মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে তৌহিদসহ ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে। দোকানিরা অভিযোগ করেন, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহায়তার কথা বলে চাঁদা আদায় করেছিলেন তাঁরা।

এদিকে ইফতারের নামে তোলা চাঁদা ফেরত চাওয়ায় গত বুধবার নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী খালেদুল ইসলামকে ২০৬ নম্বর কক্ষে আটকে রেখে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৌহিদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদের নেতৃত্বে হল ছাত্রলীগের ইফতার আয়োজনের কথা ছিল। এ জন্য হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলেছেন তৌহিদের কয়েকজন অনুসারী। কিন্তু সেই ইফতারের আয়োজন হয়নি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে তাসকিফ আল তৌহিদ বলেন, শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের একটি অংশ বর্তমান কমিটিকে মেনে নিতে পারেনি। মূলত তারাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। হলের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ শেষ হয়েছে। তিনি একটি ভাষা কোর্সে ভর্তি হয়েছেন এবং হল ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করায় হলে থাকছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা বিভিন্ন সান্ধ্যকালীন কোর্স ও শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন, তাঁদের নিয়মিত শিক্ষার্থী বলার সুযোগ নেই। তাঁরা আবাসিক হল ও পরিবহন সুবিধা পাবেন না।

এ বিষয়ে নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০২২ সালে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পর তৌহিদকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ তুলে নেওয়ায় তদন্ত আর এগোয়নি। পরে ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পর দায়িত্ব পেয়ে তিনি আবার হলে ফিরে আসেন। মূলত তিনি রাজনৈতিক প্রভাবে হলে থাকছেন।’ এ বিষয়ে তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটে মুনিগঞ্জ সেতুর নিচ থেকে ব্যবসায়ী উদ্ধার, হাসপাতালে মৃত্যু

বাগেরহাট প্রতিনিধি
ক্যাপশন: উদ্ধার করা ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ক্যাপশন: উদ্ধার করা ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাট শহরের মুনিগঞ্জ সেতুর নিচের পিলার-সংলগ্ন বেজমেন্ট থেকে ইব্রাহিম শেখ (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে ভর্তি করার প্রায় দুই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরিহিত ছিলেন এবং পায়ে কালো রঙের জুতা ও মোজা ছিল।

নিহত ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ বাগেরহাট শহরের নোনাডাঙ্গা এলাকার বাবর আলী শেখের ছেলে। ব্যবসার কারণে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় থাকতেন। তবে এলাকায় এলে তিনি সদর উপজেলার কান্দাপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়ির পাশে নির্মাণ করা নিজ বাড়িতে অবস্থান করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কান্দাপাড়ার ওই বাড়ি বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনি ঢাকা থেকে বাগেরহাটে এসেছিলেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে বাগেরহাটে এসে পৌঁছাননি।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উল-হাসান জানান, নিহত ব্যক্তির মরদেহের সুরতহাল (প্রাথমিক পরীক্ষা) সম্পন্ন হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে। এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি কেস) করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দাখিল করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টঙ্গিবাড়ীতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণ করে বিয়ের চেষ্টা, গ্রেপ্তার ৩

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার করা তিন আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার করা তিন আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীকে অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ের চেষ্টা করার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ব্যাপারীকান্দি গ্রামের মো. উজ্জল হাসান (২২), টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের আতাউল হক ঢালীর ছেলে মো. সিয়াম ঢালী (২০) এবং একই উপজেলার হাসাইল গ্রামের আবুল দেওয়ানের ছেলে মো. ইসমাঈল হোসেন দেওয়ান (২০)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে ওই তিন যুবক ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকায় নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ের চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বুধবার (২৯ অক্টোবর) মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। পরে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বগুড়া প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার রেজ্জাকুল ইসলাম রাজু। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার রেজ্জাকুল ইসলাম রাজু। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুলিশের ওপর হামলা করে হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে গ্রেপ্তার করেছে বগুড়া র‍্যাব। বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানার নবীনগর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাব-১২ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ফিরোজ আহম্মেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার রাজু শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, ৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার চক ভোলাখাঁ গ্রামে তাঁর মামাতো ভাইয়ের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজু। এই খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা-পুলিশ তাঁকে আটক করে হাতকড়া পড়ায়। এ সময় রাজুর চিৎকার শুনে এলাকাবাসী পুলিশের ওপর হামলা করে রাজুকে হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাজুকে প্রধান আসামি করে দুই শতাধিক নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করে।

পুলিশ রাজুকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও ওই গ্রামের ১১ নারী এবং ১০ জন পুরুষকে গ্রেপ্তার করে। রাজু দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজুকে শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নান্দাইলে শত বছর ধরে চলছে হাইত উৎসব: বলদা বিলে মাছশিকারিদের ঢল

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে যেন প্রাণ ফিরে পেল ময়মনসিংহের নান্দাইল। পলো, জাল আর মাছ ধরার সরঞ্জাম হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভোরে হাজারো মানুষ জড়ো হলেন সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলের ধারে।

নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গ্রামীণ জীবনের শত বছরের আনন্দ-ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতিবছরের মতো এবারও বলদা বিলে শুরু হলো ‘হাইত উৎসব’—শৌখিন মৎস্যশিকারিদের এই মিলনমেলা পরিণত হলো এক গণ-উৎসবে।

প্রতিবছর আশ্বিনের শেষে বা কার্তিক মাসের মধ্যে যখন বলদা বিলের খালবিল ও জলাশয়গুলোর পানি কমে হাঁটু বা কোমরসমান হয়, তখনই এলাকার মানুষ দিনক্ষণ ঠিক করে এই হাইত উৎসবের আয়োজন করে থাকে। উৎসবের দিনক্ষণ এক সপ্তাহ আগে থেকে এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।

আয়োজনের খবর পেয়ে মাছশিকারিরা বুধবার রাতেই বলদা বিলের আশপাশের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর থেকে হাজার হাজার শৌখিন মাছশিকারি তাঁদের পলো, ঠেলা জাল, খড়াজাল, ডুবা ফাঁদ, চাঁইসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে মাছ ধরার এই আনন্দ আয়োজনে অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মাছশিকারিরা হইহুল্লোড় করতে করতে বিলে নেমে পড়েছেন। বিলের দুই পাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী-পুরুষের ভিড়। আশপাশের উপজেলা, যেমন ঈশ্বরগঞ্জ, তাড়াইল, হোসেনপুর, কেন্দুয়া থেকেও মাছশিকারিরা এতে অংশ নেন। তবে এ বছর আগেই নিষিদ্ধ কারেন্ট ও নেট জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মাছশিকারিরা বেশি মাছ শিকার করতে পারেননি।

তাই মাছশিকারিদের মধ্যে কিছুটা আক্ষেপ লক্ষ করা গেছে। পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান শুভ বলেন, ‘হাইত উৎসবে মাছ শিকার করতে এসে তেমন মাছ পাইনি। তবে সবার সঙ্গে বিলে এসে মাছ ধরার আনন্দ উপভোগ করেছি।’

মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, আগের মতো হাইত উৎসবের সেই জৌলুশ নেই। বর্তমানে কিছু কিছু অঞ্চলে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে গ্রামের মুরব্বিরা এই আয়োজন করেন, কিন্তু মাছশিকারিরা তেমন মাছ শিকার করতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ১০০ বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা বলদা বিলে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে হাইত উৎসবের আয়োজন করে আসছে। তবে এ বছর নিষিদ্ধ কারেন্ট ও নেট জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মাছশিকারিরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ শিকার করতে পারেননি।’

বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে এই মাছ শিকারের আয়োজন। মাছ কম মিললেও শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মিলনমেলা গ্রামীণ মানুষের জীবনে অন্যরকম আনন্দ এনে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত