Ajker Patrika

রাজশাহীর ৪ জেলায় পানিবন্দী সাড়ে ৬ হাজার পরিবার, বাড়ছে নদীভাঙন আতঙ্ক

রিমন রহমান, রাজশাহী 
পদ্মায় পানি বাড়ার ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। রাজশাহীর মিডিল চর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পদ্মায় পানি বাড়ার ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। রাজশাহীর মিডিল চর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নদ-নদীতে পানি বাড়ার কারণে রাজশাহী বিভাগের চার জেলায় কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে অনেক বাড়িঘর। আজ রোববার সকাল থেকে পদ্মা নদীর পানি কমছে। এর ফলে ভাঙন আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ।

বিভাগের আট জেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, এরপর রাজশাহী। কিছু বসতবাড়ি তলিয়েছে নাটোর ও নওগাঁয়। সরকারি হিসেবে রাজশাহীতে ১ হাজার ৭৩৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার, নাটোরে ৮০ ও নওগাঁয় ২৫ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি।

সম্প্রতি পদ্মা নদীর পানি বাড়ার ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। এ ছাড়া সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতুলি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব ইউনিয়নের অনেক বাড়িঘর ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজাহার আলী জানান, পদ্মা নদীর পানি বাড়ার ফলে বন্যায় শিবগঞ্জের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এই উপজেলায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৩ টন চাল ও ৭৫ বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ইউএনও নুরুল ইসলাম জানান, দুই ইউনিয়নে পানিবন্দী হয়েছে দুই হাজার পরিবার। প্লাবিত হয়েছে ৬০০ হেক্টর ফসলি জমি। চাল, শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট নিয়ে তাঁরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বেসরকারি সংগঠনও এগিয়ে আসছে।

পদ্মা নদীর পানি বাড়ার কারণে রাজশাহীর বাঘা, পবা, গোদাগাড়ী ও চারঘাটের অনেক পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ থেকে এবারও অনেক লোক তাঁদের ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু নিয়ে এ পাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সবচেয়ে কষ্টে আছেন বাঘার চক নারায়ণপুর, পবার মিডিল চর ও চর মাজারদিয়ারের বাসিন্দারা। মিডিল চরের চারপাশ ডুবে গেছে। পানি ঢুকেছে বাড়িতে। চর মাজারদিয়ায় সবগুলো ঘরবাড়ি হাঁটুসমান কিংবা একগলা পানিতে ডুবে গেছে। ফলে অনেকে গবাদিপশু নিয়ে এ পাড়ে রাজশাহী শহরের বেতার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। আর যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁরা চরেই কোথাও একটু উঁচু জায়গা পেলে সেখানেই গবাদিপশু ও শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এই চরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম এখনো কোথাও যেতে পারেননি। আজ সকালে একগলা পানি মাড়িয়ে তাঁকে পাশের আরও একটি ডুবে যাওয়া বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আসতে দেখা যায়। মনোয়ারা বেগম জানান, জন্ম থেকে তিনি এই চরেই বাস করছেন। ভাঙনের কারণে তাঁদের চারবার বাড়ি নতুন জায়গায় সরাতে হয়েছে। এবার না ভাঙলেও বাড়ি ডুবে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয় কি না, তা নিয়ে এখন আছেন আতঙ্কে।

রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, জেলায় পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে বাঘা, চারঘাট, পবা, গোদাগাড়ী ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ড রয়েছে। তাঁরা এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৮৫ টন চাল, নগদ ৪ লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।

রাজশাহীর মিডিল চর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর মিডিল চর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। এবার বাড়তে বাড়তে পানি ১৭ দশমিক ৪৯ মিটারে উঠেছিল। এরপর গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে পানি ধীরে ধীরে কমছে। আজ দুপুর ১২টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৩৫ মিটার।

এদিকে আত্রাই নদের পানি বাড়ার ফলে গতকাল ভোররাতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার তালপাতিলা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের তালপাতিলা ও উত্তর চকরামপুর গ্রামের কমপক্ষে ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নওগাঁর রানীনগর ও আত্রাই এবং রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়।

নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়দুর রহমান বলেন, বাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে প্রায় ২০০ বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। সম্প্রতি লাগানো আমন ধান ডুবে গেছে। তবে মাত্র ২৫টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। অন্যরা সহায়তা পায়নি।

জানতে চাইলে মান্দার ইউএনও আখতার জাহান সাথী দাবি করেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা পঁচিশের বেশি নয়। তিনি বলেন, ‘এর বেশি হলে তো আমাকে জানানো হতো। আমি জানি না।’

নাটোরের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম শাহা আলম মোল্লা জানান, লালপুর উপজেলায় পদ্মা তীরের ৮০টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। বন্যা হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নাটোরের সবগুলো উপজেলায় মোট ২০০ টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

বিভাগের সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বাড়ার ফলে চরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। সিরাজগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল বাছেদ জানান, যমুনা নদীর পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার। আজ সকালে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা হলে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন।

বগুড়ার ত্রাণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলায় নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। তবে ঘরবাড়ি এখনো প্লাবিত হয়নি। এখানে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাবনায় এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি বাড়ার ফলে জয়পুরহাট সদর ও আক্কেলপুর উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল করিম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনো বন্যা সৃষ্টি হয়নি। তবে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি বাড়ার কারণে কয়েকটা বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। নদীটা সদর উপজেলা হয়ে আক্কেলপুর গেছে। নদীতে পানি বাড়ছে। আরও পানি বাড়লে এ দুই উপজেলায় বন্যা দেখা দিতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

রাশিয়া খুবই বড় শক্তি, চুক্তি ছাড়া ইউক্রেনের কোনো গতি নেই: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত