Ajker Patrika

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইসির প্রকাশিত তালিকায় তাঁতী লীগ নেতার সংস্থা

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৭: ১৯
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইসির প্রকাশিত তালিকায় তাঁতী লীগ নেতার সংস্থা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের ৬৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নামের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই তালিকায় রয়েছে রাজশাহীর এক তাঁতী লীগ নেতার একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। নামসর্বস্ব এই এনজিওটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল। এবার আবার আবেদন করা হয়েছে।

এই সংস্থাটির নাম স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন (সেফ)। এই সংস্থার নির্বাহী প্রধান হলেন রুপন কুমার দত্ত। রাজশাহীতে তিনি আর কে দত্ত নামেও পরিচিত। রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের ৩ নম্বর সহসভাপতি তিনি।

গত বছরের ১১ মে এই কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। মহানগর তাঁতী লীগের বিভিন্ন সভায় রুপনের অংশগ্রহণের ছবিও পাওয়া গেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০১৭-এ বলা আছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা বর্তমানে আছেন এ রকম কোনো ব্যক্তি কোনো সংস্থার প্রধান কিংবা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হলে এই সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন করা হবে না। 

যেসব সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য ইসিতে আবেদন করেছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে কারও দাবি, আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা ১৫ দিনের মধ্যে ইসিকে জানাতে বলা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুপনের সেফ নামে এই সংস্থার তেমন কোনো কার্যক্রমই নেই রাজশাহীতে। সংস্থার প্রধান তাঁতী লীগ নেতা রুপন রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন ২০১১ সালে। এমপিও করার সময় ধরা পড়ে তাঁর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছিল জাল। জাল সনদে এমপিও করতে না পেরে ২০১৮ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন রুপন দত্ত। এখন কলেজের সামনে একটি ফার্মেসি দিয়ে ওষুধের ব্যবসা করেন তিনি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও দেন। 

শাহমখদুম কলেজের অধ্যক্ষ এস এম রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এসব কথা তো কোনো দিন কাউকে বলিনি। আসলে রুপনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটা ছিল জাল। এমপিও করতে গিয়ে সেটা ধরা পড়ে। তখন আমি তাকে ডেকে বলি, যেহেতু তিনি শিক্ষক। সসম্মানে তিনি নিজেই যেন চাকরিটা ছেড়ে দেন। জাল সনদে এই কলেজে কারও চাকরি হবে না। এরপর তিনি ইস্তফা দেন।’ 

ইসিতে আবেদন করা রুপনের সংস্থার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজশাহী নগরীর বেলদারপাড়া এলাকা। বেলদারপাড়া মোড়েই একটি দোতলা বাড়ির নিচতলায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন রুপন। ওই বাড়ির নিচতলায় ‘অর্পিতা বিউটি স্পা’ নামে একটি সাইনবোর্ড, তবে সেফের কোনো সাইনবোর্ড নেই। শুধু একটি দরজার ওপরে সেফের নাম দিয়ে একটি কাগজের পোস্টার লাগানো আছে। বাড়ির সামনে মো. দীপুর চায়ের দোকান। তিনি জানান, নিজের বাড়িতেই একটা চেম্বার করে এনজিওর কার্যক্রম চালান রুপন। আলাদা কোনো অফিস এ এলাকায় নেই। 

বাড়িতে রুপনের স্ত্রী শাইলাকে পাওয়া যায়। তিনি দাবি করেন, পাশেই একটি ভবনে তাঁদের অফিস রয়েছে। তবে সেখানে এখন কোনো লোক নেই বলে তিনি অফিসে নিয়ে যেতে চাননি। শাইলা দাবি করেন, তাঁদের সংস্থার কার্যক্রম সব গ্রামে। লোকবলও কাজ করে গ্রামে। শহরে কেউ নেই। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাঁতী লীগ নেতা রুপন দত্ত ২০০৮ সালে সেফ গঠন করেন। তিনি এখন অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ অব বাংলাদেশের (এডাব) কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য। তাঁর সংস্থাটি ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছে। এ ছাড়া দুটি বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে অনুদান বাগিয়ে নিয়েছে সেফ। এ টাকায় তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো সামান্য কিছু কার্যক্রম চালিয়েছে। সংস্থাটি এখনো অপরিচিত। 

এর আগে ২০১৮ সালে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। ওই সংস্থার পাঁচ বছর মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালেও পর্যবেক্ষক হিসেবে ইসিতে নিবন্ধিত হয়েছিল রাজশাহীর নামসর্বস্ব এই সংস্থাটি। আবেদন করলেও তখন নিবন্ধন পেয়েছিলেন তা এত দিন জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন সংস্থার প্রধান রুপন দত্ত। আজ বুধবার সকালে শাহমখদুম কলেজের সামনে রুপনের ‘মাদার মেডিকো’ নামে ওষুধের দোকানে বসেই কথা হয় তার সঙ্গে। 

রুপন বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য ইসিতে আবেদন করেছিলাম, নিবন্ধন পেয়েছিলাম সেটা জানিই না। এই পাঁচ বছরে আমরা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণও করিনি।’ দলীয় পদে থেকেও নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আগে জানতাম না যে দলে পদে থাকলে পর্যবেক্ষক হওয়া যাবে না। পরে জেনেছি। ছাত্রজীবনে আমি পদ ছাড়াই রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগ করেছি। সে জন্য আমাকে সম্মান করে তাঁতী লীগের পদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমি সেভাবে দলীয় সভায় যাই না।’ 

জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ অস্বীকার করে রুপন বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার এমপিও করে দিতে পারেনি। তাই নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।’ সংস্থার জনবল ও অফিসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনটা উপজেলায় কাজ চলছে। সেখানেই সব জনবল আছে। শহরে শুধু অফিস আছে।’ 

তবে রুপন তাঁর অফিসে নিয়ে যেতে চাননি। এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তাঁতী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমিও চাই গণতান্ত্রিক দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সে জন্যই নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে ইসিতে আবেদন করেছি।’ 

ইসির নীতিমালা অনুযায়ী, পর্যবেক্ষক হিসেবে কোনো সংস্থা নিবন্ধিত হলে সেই সংস্থার কর্মীরা পরবর্তী পাঁচ বছর যেকোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবেন। নির্বাচন শেষে নিবন্ধিত সংস্থাটি ইসিতে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। এতে নির্বাচন কেমন হয়েছে সে বিষয়টি সংস্থাটি তুলে ধরবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত