Ajker Patrika

দুর্গাপুরে ১১ দিন ধরে নেই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
দুর্গাপুরে ১১ দিন ধরে নেই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত

রাজশাহীর দুর্গাপুরে ১১ দিন ধরে কর্মস্থলে নেই উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। এতে ব্যাহত হচ্ছে দাপ্তরিক কাজ। সেবা নিতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে অন্য উপজেলায় বদলি হয়ে চলে যাওয়ায় এ ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল বদলি নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন দায়িত্ব না বুঝিয়ে দিয়েই চলে গেছেন পবা উপজেলায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তিনি অফিস করতে পারেননি। পবায় মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের বাইরে বারান্দায় বসে সময় কাটছে তার।

অপরদিকে পবার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুনকে বদলি দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুর উপজেলায়। কিন্তু হাবিবা খাতুন অসুস্থ জনিত কারণে ছুটিতে আছেন। ছুটিতে থাকায় তিনি এখনো পবার দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি ফাতেমার হাতে। কিন্তু ফাতেমা দুর্গাপুরের দায়িত্ব হস্তান্তর না করেই পবায় থাকছেন। এ নিয়ে ১১ দিন ধরে দুর্গাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নেই। ফলে সুনশান অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

আজ রোববার দুপুরে দুর্গাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, একেবারে সুনশান অবস্থা। ভেতরে তিনজন কর্মচারী ছাড়া আর কেউ নেই। এমন সময় সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন সেবা নিতে আসা পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আরমান আলী।

আরমান আলী জানান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে এসে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন তিনি।

সেবা গ্রহীতা আরমান আরও বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর তিন দিন এই কার্যালয়ে আসলাম। একদিনও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না। অফিসের লোকজনও বলতে পারে না কবে কখন তারা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে পাবেন।’

এ সময় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী সোহেলী বেগম বলেন, ‘১১ দিন ধরে ম্যাডাম নেই। শুনেছি নতুন ম্যাডাম এখানে বদলি দিয়েছেন। তিনিও এখনো যোগদান করেননি। তাই দাপ্তরিক কাজে বিড়ম্বনা হচ্ছে। অফিসের অনলাইনের কাজ কিছুটা আমরা করলেও অনেক কাজে ম্যাডামের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। সেগুলো আর হচ্ছে না। তাই ভুক্তভোগীরা ফিরে যাচ্ছেন।’

সোহেলী আরও বলেন, ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট কার্যক্রমের আওতায় এ উপজেলা প্রতি মাসে ১ হাজার ৯৪৬ জন অসচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারীকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া চাল ওঠানো সম্ভব না। যেহেতু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নেই। কাউকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি। এ মাসের চাল কীভাবে দেওয়া হবে এ নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।’

অভিযোগে দুর্গাপুর ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমি বদলির আদেশ নিয়েই পবায় এসেছি। কিন্তু কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকায় বাইরে অফিস করছি।’

দায়িত্ব হস্তান্তর না করেই অন্য উপজেলায় চলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা খাতুন কল কেটে দেন।

পবা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন বলেন, ‘আমি অসুস্থ। মেডিকেল সনদ নিয়ে আবেদন করে বৈধ পন্থায় ছুটিতে আছি। আমি এখনো পবার দায়িত্বে আছি। সেখানে ফাতেমা খাতুন দুর্গাপুরের দায়িত্ব হস্তান্তর না করে অবৈধভাবে পবায় এসে বারান্দায় বসে সময় কাটাচ্ছে। অথচ দুর্গাপুরে কাজ বুঝিয়ে দেননি তিনি।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমার ছুটি শেষ হলে আমি কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তারপর পবা থেকে যাব।’

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, ‘এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা দ্রুত মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পাব।’

রাজশাহী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শবনম শিরীন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। সেখানে এটার সমাধান হবে। পবার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন।’

দুর্গাপুরের কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে ফাতেমা পবায় গেছেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে শবনম শিরীন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সব জায়গায় কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তাকে অন্যত্র যেতে হবে। তবে তিনি কী কারণে তা করেননি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সমাধান দেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত