Ajker Patrika

গাজনার বিলে তলিয়ে গেছে ২০০ বিঘা জমির আমন ধান, দিশেহারা কৃষক

­­শাহীন রহমান, পাবনা
পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলে তলিয়ে গেছে ধানখেত। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলে তলিয়ে গেছে ধানখেত। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ করে স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দেওয়ার তলিয়ে গেছে পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধান। কীভাবে এই ক্ষতি পোষাবেন, তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করে স্লুইসগেটের পানি ছেড়েছেন। তবে ইউএনও বলছেন, পাটচাষি ও মৎস্যসম্পদের কথা চিন্তা করে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আজ সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সুজানগর উপজেলার বাদাই গ্রামের অংশে গাজনার বিলে পানিতে ভরে গেছে। পানির ওপরে কিছু কিছু ধানগাছের সবুজ মাথা বেরিয়ে আছে। বেশির ভাগ ধান পানিতে ডুবে রয়েছে। কৃষকেরা নিজের হাতে বপন করা ধানের এমন দৃশ্য দেখে দিশেহারা।

বাদাই গ্রামের কৃষক বকুল শেখ। এবার ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান বপন করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এক রাতের ব্যবধানে পানিতে তলিয়ে গেছে তাঁর সাত বিঘা জমির ধান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

বকুল শেখ বলেন, ‘আমি কৃষিকাজ করি। এর ওপরই নির্ভর। আমার তো উপায় নাই। এখন আমার কী হবে। আপনারা যদি ক্ষতিপূরণ দেন, তাহলে বেঁচে থাকার মতো কিছু করতে পারি।’

শুধু বকুল শেখই নন, তাঁর মতো আরও শতাধিক কৃষকের কপালে একই চিন্তার ভাঁজ। হঠাৎ করেই তালিমনগর স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের প্রায় ২০০ বিঘা জমির বোনা আমন ধান। এখন কীভাবে এই ক্ষতি পোষাবেন, তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না কৃষকেরা।

কৃষক রিজাই শেখ ও নাদের শেখ বলেন, ‘আমাদের এখানে তালিমনগর স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণ করেন ইউএনও। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ না করে পানি ছেড়ে দিয়েছেন। এক রাতের মধ্যে ধান সব ডুবে গেছে। এর আগে কখনো এমন হয়নি।’

কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘বিলের ৫০০ বিঘা জমির মধ্যে ২০০ বিঘা জমির আমন ধান এখন পানির নিচে। যদি ধীরে ধীরে অল্প করে পানি ছাড়া হতো, তাহলে ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না আমাদের।’

সুজন বিশ্বাস ও আকতার হোসেন নামের দুই কৃষক বলেন, ‘এই আমন ধানটায় আমাদের খরচ খুবই কম হয়। এই ধানে বছরের খাবারের একটা ব্যবস্থা করি আমরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন, আশা সব পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এখন এর ক্ষতিপূরণ চাই।’

জানতে চাইলে ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ‘পাটচাষীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ও বিলে মৎস্যসম্পদের কথা চিন্তা করে জুলাইয়ের শুরুতে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ, পাট কাটার উপযুক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পানির সংকট রয়েছে। এ ছাড়া জোয়ারের পানির সঙ্গে রেণু পোনা বিলে আসে। এসব মিলিয়ে গত ১ জুন পানি ছাড়া হয়। তবে যদি কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, আমাদের জানালে কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পানি ছাড়ার বিষয়ে কৃষকেরা আমাদের জানিয়েছিল যে পানি যেন একেবারে না ছেড়ে আস্তে আস্তে ছাড়ে। বিষয়টি আমরা ইউএনও স্যারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু উঁচু এলাকার পাটচাষীদের চাপ ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পানি ছাড়তে তিনি বাধ্য হন। এখানে আসলে সবার কথাই মাথায় রাখতে হয়। তবে পাম্প হাউসের মাধ্যমে পানি টেনে নিলে বেশির ভাগ জমির ধান রক্ষা পাবে।’

এ কৃষি কর্মকর্তা জানান, সুজানগর উপজেলায় এ বছর ২ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭৭ টন চাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অবিশ্বাস্য কম খরচে বাংলাদেশিদের গোল্ডেন ভিসা দেবে দুবাই, সুবিধা কী

উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণে একমত সব দল

ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠন নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দিলেন টিউলিপ–রুশনারা

চেক জালিয়াতির মামলায় সাংবাদিকের ৫ মাসের কারাদণ্ড

ফারজানা রুপা ও শাকিলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জাতিসংঘকে ব্যাখ্যা দিল সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত