Ajker Patrika

৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে প্রাণে রক্ষা পান সিরাজগঞ্জের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৮: ০৮
Thumbnail image

৯৯৯ ফোন দিয়ে প্রাণে রক্ষা পান সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজছাত্র আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করার পর শিক্ষক রায়হান শরীফ অস্ত্র উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস তাহলে সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলব।’ শিক্ষকের গুলিতে আহত কলেজছাত্র আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন মামলার অভিযোগপত্রে এ কথা উল্লেখ করেছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক রায়হান শরীফ সব সময় অস্ত্র নিয়ে ক্লাসে আসতেন। টেবিলে অস্ত্র রেখে লেকচার দিতেন। শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতেন। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হতেন এবং শিক্ষার্থীদের অহেতুক বকাবকি করতেন। বকাবকির একপর্যায়ে রায়হান শরীফ ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন। 

গুলিতে তমালের ডান পায়ের ঊরুর ওপরের অংশে গুরুতর জখমসহ পঙ্গু করে। গুলি করার পর শিক্ষক রায়হান শরীফ অস্ত্র উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘তোরা যদি ওকে (তমালকে) চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস, তাহলে সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলব।’ পরে অন্য শিক্ষার্থীরা জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন দিতে ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রায়হান শরীফকে আটক করে। এ সময় তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্র জব্দ করে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।

তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলতে গুলি করা হয়েছে। তাকে গুলি করার পর তার বন্ধু আকতারুজ্জামন মোবাইল ফোনে আমাকে জানায় তমালকে গুলি করা হয়েছে। তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমি কলেজে ছুটে আসি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।’

এদিকে ডা. রায়হান শরীফ ফৌজদারি অপরাধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের পার্সোনেল-১ শাখা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আমিরুল হোসেন চৌধুরী আজ দুপুরে আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন।

অপর দিকে কলেজছাত্র আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করার প্রতিবাদ আজও ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে কালো ব্যাচ ধারণ করেন শিক্ষার্থীরা।

৪ মার্চ বিকেলে কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফ শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন। এরপর রায়হান শরীফকে ঘরে আটকে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ সময় পড়ে থাকা একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া তাঁর ব্যাগটিও জব্দ করা হয়। এই ব্যাগের ভেতরে আরও একটি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশি কাতানা (ছোরা) ও ১০টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু জব্দ করা হয়।

এসব অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে রায়হানের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করে। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে তাঁর ছেলেকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা করেন। 

এ দুটি মামলা সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুজন উপপরিদর্শক (এসআই) তদন্ত করছেন। দুটি মামলার আসামি হিসেবে শিক্ষক রায়হান শরীফকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত