Ajker Patrika

পূজায় বাজবে ঢাক, দাসপাড়ায় ঢাকিদের ব্যস্ততা

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ০১
পূজায় বাজবে ঢাক, দাসপাড়ায় ঢাকিদের ব্যস্ততা

দুর্গাপূজার উৎসবে দেবী অর্চনায় আহারী তালে বাজে ঢাক। এ ঢাকের বাদ্য পূজা উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। নাটোরের লালপুরের দুর্গোৎসব ঘিরে দাসপাড়ায় তাই ঢুলিরা তাঁদের ঢাক মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢাকি-ঢুলিরা তাঁদের ঢাক মেরামত করছেন। ওয়ালিয়া ইউনিয়নের রায়পুর দাসপাড়ায় ১৫ জন, ফুলবাড়ী পূর্বপাড়ার (আটঘরিয়া দক্ষিণ) দাসপাড়ার সাতজন এবং দুয়ারিয়া ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামের ১২ জন ঢাকি বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ঢাক বাজানোর জন্য ৭ থেকে ১৬ হাজার টাকা চুক্তি নিয়েছেন।

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রায়পুরের ঢাকি মিঠুন চন্দ্র দাসের (৪১)। তিনি জানান, ঢাক বাজানোর পাশাপাশি ঢাকঢোল মেরামত করেন তিনি। এ বছর সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা জোড়ায় বিলমাড়িয়া মন্দিরে ঢাক বাজানোর চুক্তি নিয়েছেন। গত বছরের চেয়ে ২ হাজার টাকা বেশি পেয়েছেন।

ফুলবাড়ী পূর্বপাড়ার (আটঘরিয়া দক্ষিণ) দাসপাড়ার ঢুলি রাসু চন্দ্র দাস (৫২) বলেন, ‘আমার বাবা চৈতন চন্দ্র দাস, দাদা রাজেন্দ্র চন্দ্র দাস, পরদাদা (দাদার বাবা) দিনু চন্দ্র দাস, তাঁর পূর্বপুরুষেরাও বংশপরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে আসছেন। বুধপাড়া কালীমন্দিরে প্রায় ২০০ বছর ধরে আমাদের বংশপরম্পরায় ঢাক বাজাই আমরা।

রাসু চন্দ্র দাস আরও বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে ঢাক বাজাই। পূজা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বছরে দুই-তিন মাস ঢাক, ঢোল, কাসি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা রোজগার হয়। এ দিয়ে সংসার চলে না। অন্য কাজ করতে না পারায় পূর্বপুরুষের পেশা ছাড়তে পারছেন না। এ বছর আমার ছেলে সোহাগ চন্দ্র দাস সুজিত (১৬) ওই মন্দিরে ৭ হাজার টাকা জোড়া চুক্তিতে ৫ দিন ঢাক বাজাবে।’

দুর্গোৎসবকে ঘিরে দাসপাড়ায় ঢাকিদের ব্যস্ততাঢাক মেরামতকারী রায়পুর দাসপাড়ার সুনিল চন্দ্র দাস (৬৫) জানান, বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি ঢাকের চাক তৈরি করেন তিনি। স্থানীয় ঢাকিরা উৎসবের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন।

একই এলাকার নিরা চন্দ্র দাস (৮০) জানান, তাঁর পূর্বপুরুষেরা ঢাকঢোল তৈরি ও মেরামত করতেন। ঢাক মেরামতের জন্য প্রতিটি চামড়া ৩৫০ টাকায় কিনে আনেন। বাজারে ছোট ঢাকের দাম ৪ হাজার টাকা। কাঠের তৈরি বড় ঢাক ১৪ হাজার এবং টিনের তৈরি ঢাক ৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি করে থাকেন।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের লালপুর উপজেলা শাখার সদস্যসচিব দ্বিপেন্দ্রনাথ সাহা বলেন, ‘এ বছর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৪২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্‌যাপিত হচ্ছে।’

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অনুষঙ্গ বাদ্যযন্ত্র শিল্পীদের সহায়তায় পদক্ষেপ নেবে উপজেলা প্রশাসন।’

লালপুর-বাগাতিপাড়া (নাটোর-১) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ৪২টি মন্দিরে ৫০০ কেজি করে চালের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত