Ajker Patrika

উপজেলা চেয়ারম্যানের মারপিটে আহত ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও নাটোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২: ৫৯
উপজেলা চেয়ারম্যানের মারপিটে আহত ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের মারপিটে আহত ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবন (২০) মারা গেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান। আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, জীবনের মাথায় গুরুতর জখম ছিল। মাথার ভেতরে রক্ত জমে ছিল। জীবন এতটাই সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন যে অস্ত্রোপচার করে রক্ত বের করার কোনো উপায় ছিল না। লাইফ সাপোর্টে রেখে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি, ধীরে ধীরে আরও অবনতি হয়েছে। দুপুরে তিনি মারা গেছেন। 

মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ আইসিইউ থেকে বের করে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেখান থেকে মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। 

নিহত জীবন নলডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। নলডাঙ্গার রামশার কাজীপুর শাহপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবার নাম ফরহাদ হোসেন শাহ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে তাঁকে মারধরের ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে, ঘটনার দুই দিন আগে রামশার কাজীপুর আমতলী বাজার জামে মসজিদের মাইকের যন্ত্রাংশ চুরি হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে সালিসি বৈঠক বসিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। চেয়ারম্যান তাঁর প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জীবনকেও জোরপূর্বক দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। 

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আসাদ। উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁকে ডেকে পাঠান। জীবন সেখানে গেলে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেন এগিয়ে গেলে তাঁকেও মারপিট করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনেরা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দুজনকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন জীবন। 

সেদিনই সন্ধ্যায় এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, জীবন মারা গেছেন। উপজেলা ছাত্রলীগ শোকবার্তাও দেয়। এতে পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ডও চাওয়া হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে গ্রেপ্তারের দাবি করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আত্মগোপনে চলে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ। এখনও তিনি আত্মগোপনে। 

জীবন ও তাঁর বাবার ওপর হামলার ঘটনায় নলডাঙ্গা থানায় আগেই একটি মামলা হয়েছে। জীবনের মা জাহানারা বেগমের দায়ের করা এ মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে (৪৫) প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য দুই আসামি হলেন-উপজেলা চেয়ারম্যানের বড় ভাই ফয়সাল শাহ ফটিক (৫৩) এবং ছোট ভাই আলিম-আল রাজি শাহ (৩৭)। এদের মধ্যে আলিমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

শুক্রবার জীবনের মৃত্যুর খবর পৌঁছালে এলাকায় আবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সতর্কতা হিসেবে উপজেলা সদরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’ 

ওসি জানান, জীবন ও তাঁর বাবার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলাটিই এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। মামলার পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত