Ajker Patrika

যুগ্ম সচিবের ফেসবুক ‘হ্যাকার’ আল আমিন বিকাশের দোকানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
যুগ্ম সচিবের ফেসবুক ‘হ্যাকার’ আল আমিন বিকাশের দোকানি

র‍্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর পর স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. এনামুল হক যাঁর বিরুদ্ধে নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগ তুলেছেন, তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ-এর এজেন্ট। রাজধানী ঢাকার মালিবাগে তাঁর বিকাশের দোকান আছে। মো. আল-আমিন নামের এই ব্যক্তিকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২৩ মার্চ এনামুল হক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। 

তবে র‍্যাব মো. আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করে রাজপাড়া থানা-পুলিশে দেয়নি। রাজধানী ঢাকার শাজাহানপুর থানায় সোপর্দ করা হয়। এই থানায় আল-আমিনের নামে কোনো মামলা ছিল না। 

র‍্যাব কেন আল-আমিনকে শাজাহানপুর থানায় দিল, তা জানতে চাইলে এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্লা আজ শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। কিন্তু আমার থানার অধীনে মালিবাগে নাকি তাঁর বিকাশের দোকান আছে। এই দোকান থেকেই তাঁকে আটক করা হয়। এ জন্য র‍্যাব আসামিকে এই থানায় দিয়েছে।’ 

ওসি বলেন, ‘র‍্যাব আল-আমিনকে এই থানায় দিলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। পরে সন্দেহজনক অপরাধী হিসেবে ৫৪ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আল-আমিনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা আছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করে রাখার বিষয়টি রাজপাড়া থানায় জানিয়েছি। রাজপাড়া থানা তাঁকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাবে।’ 

আল-আমিনের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’ আল-আমিনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে কি না তা জেনে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ রকম কিছু হয়নি।’ 

গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে (৩৮) আটক করে র‍্যাব। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে প্রথমে নওগাঁয় এবং পরে রাজশাহীর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যুগ্মসচিব এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর যখন জেসমিন মৃত্যুশয্যায়, তখন পরদিন তাঁকে ২ নম্বর আসামি করে থানায় মামলা করেন এনামুল হক। আর এই মামলার প্রধান আসামি করা হয় আল-আমিনকে। 

এজাহারে যুগ্মসচিব এনামুল হক লেখেন, আল আমীন ও জেসমিন তাঁর ছবি ব্যবহার করে এনামুল হক নামেই ফেসবুক আইডি খোলেন এবং এই আইডি থেকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। পরে এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন আইডি খোলার ব্যাপার নয়, তাঁর আইডি হ্যাক করেছিলেন আল আমিন। 

র‍্যাব দাবি করছে, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল-আমিন র‍্যাবের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন। 

এদিকে র‍্যাবের হেফাজতে ২৪ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিনের মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পরিবার অভিযোগ তুলেছে, নির্যাতনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। র‍্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। র‍্যাবের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার নওগাঁয় যান। নওগাঁয় জেসমিনকে যে স্থান থেকে আটক করা হয়েছিল সেখানে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে তদন্ত দল।

এ দিনই অভিযান চালানো র‍্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের ১১ জন সদস্যকে রাজশাহীতে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর শুক্রবার তদন্ত দল এই ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। 

র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন একজন মেজরও। তদন্ত কমিটির প্রধানও র‍্যাবের একজন মেজর। তদন্ত দল র‍্যাব ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে সবকিছু জানার চেষ্টা করছে। র‍্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার আজ শুক্রবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, তদন্ত কমিটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। দলটি রাজশাহীতেই অবস্থান করছে। তদন্ত শেষ করে দলটি ঢাকায় ফিরবে বলেও জানান তিনি। 

জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ব্যাপারেও তদন্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে নওগাঁ জেলা প্রশাসন থেকে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে কি না তা জানা যায়নি বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কল না ধরার কারণে। 

এদিকে জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়নি। তবে দ্রুতই প্রতিবেদন প্রস্তুত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত