Ajker Patrika

চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২ 

নওগাঁ প্রতিনিধি
চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২ 

নওগাঁয় পথরোধ করে চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ও মারধর এবং দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। 

পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। 

আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রাশিদুল হক। শনিবার রাতে জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—জয়পুরহাট জেলার কাশাবাড়িয়া এলাকার রফিকুল ইসলাম (৩৮) ও তেঘরবিশা এলাকার লিমন হোসেন মিন্টু (৩৩)। 

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আব্দুল জব্বার নামে এক ব্যক্তি নজিপুর ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে মোটরসাইকেল চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজী-মহাদেবপুর রাস্তার বেলট মোড়ে দুটি মোটরসাইকেল আরোহী অজ্ঞাত চার ব্যক্তি রাস্তায় আটকে আব্দুল জব্বারের চোখে-মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে তাঁকে মারধর করে। এ সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাঁর ব্যাগে ও পকেটে থাকা ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তি মহাদেবপুর থানায় মামলা করলে পুলিশ অভিযান পরিচালনার জন্য একটি টিম গঠন করে।’ 

এসপি আরও বলেন, ‘অভিযানের একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ছিনতাইয়ের টাকা দিয়ে কেনা স্বর্ণের চেন, দুল, ফ্রিজ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন আসামিরা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন, মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমন্বয়হীনতায় চালু হয়নি খুলনার শিশু হাসপাতাল

  • গণপূর্ত বলছে, কাজ শেষ এখন বুঝে নিতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ না হওয়ায় এটি অরক্ষিত।
  • ভবন নির্মাণকাজ শেষে বছর পেরিয়েছে, কেনা হয়নি আসবাব। নিয়োগ হয়নি জনবল।
  • সেবা থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশু।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রথম ধাপে হাসপাতাল ভবনের পঞ্চম তলা পর্যন্ত নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১১৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রথম ধাপের কাজও শেষ হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। এতে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে সাড়া দেয়নি তারা। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিত থাকছে। আর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও এখনো করা যায়নি।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুদের জন্য হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের যদি কোনো সমন্বয়হীনতা থাকে, তাহলে তার সমাধান করে দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা দরকার।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। হাসপাতালটি নির্মাণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে সিটি বাইপাস সড়কের পাশে জমি চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ৫২ কোটি ২ লাখ টাকায় ৪ দশমিক ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।

গণপূর্ত বিভাগ ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের বেসমেন্ট ও একতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রৈতি এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ পায়। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংশোধিত প্রস্তাবে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন মেলে। এতে রান্নাঘর, সাবস্টেশন, পাম্পহাউস, সীমানাপ্রাচীর, রাস্তা, নালা ও গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে কাগজ-কলমে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়। অন্যদিকে নতুন করে হাসপাতালটির ষষ্ঠ থেকে দশম তলার কাজ শুরু করার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে দেরি হয়েছে। এ কারণে দরপত্র আহ্বানও বিলম্বিত হয়। কাজ শুরুর পর জমির প্রবেশপথ নিয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জটিলতা দেখা দেওয়ায় বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। প্রথম ধাপের পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।’

খুলনা সিভিল সার্জন মাহফুজা খাতুন চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিতই থাকছে। হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও নেই। গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সীমানাপ্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রকল্পে পুরো বাউন্ডারি ওয়াল ও প্রধান ফটকের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে ভবনটি ছয়তলা থেকে দশতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ বাকি রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, নালা, প্রধান ফটক, নার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ৯৮ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত এসব কাজ শেষ করা হবে।’

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারি এ হাসপাতাল নির্মিত হলে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে। হাসপাতালকে আরও আধুনিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। তাহলে অন্য হাসপাতালগুলোরও চাপ কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় পাট চাষ: লোকসানে চাষি, লাভে ফড়িয়া

  • মাসখানেক আগে ফড়িয়ারা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ পাট কেনেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
  • অধিকাংশ কৃষকের কাছে পাট না থাকলেও বাজারদর বেড়ে ৪২০০ টাকায় পৌঁছেছে।
  • ধারদেনা শোধের চাপে থাকা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনে মুনাফা গুনছেন ফড়িয়ারা।
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
বিক্রির জন্য চরাঞ্চল থেকে নৌকায় করে পাট নিয়ে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন ফুলছড়ি বাজারের একটি ঘাটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিক্রির জন্য চরাঞ্চল থেকে নৌকায় করে পাট নিয়ে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন ফুলছড়ি বাজারের একটি ঘাটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জমি বর্গা নিয়ে ও ধারদেনা করে পাট চাষ করেছিলেন কৃষকেরা। তাঁরা দেনা শোধ করার জন্য মাসখানেক আগে খেতের পাটগাছ কেটে সোনালি আঁশ বিক্রি করে দেন। সে সময় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে কিনে নেন। এতে কৃষকদের আবাদ ও শ্রমিক খরচও ওঠেনি। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকের কাছেই পাট নেই। অথচ প্রতি মণ পাটের দাম বেড়ে ৪ হাজার ২০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা লোকসানে থাকলেও লাভবান হচ্ছেন পাট মজুত করে রাখা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এবং পাটের বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী চক্রের কারণে পাটচাষিরা লোকসানে পড়েন। মৌসুমের সময় তাঁরা কম দামে পাট কিনে এখন চড়া দামে কারখানায় বিক্রি করছেন। প্রতিবছর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে পাটের আবাদই ছেড়ে দিয়েছেন।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছয় বছর ধরেই পাটের আবাদ কমছে। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। পরের বছর ২০২২ সালে তা নেমে আসে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টরে। ২০২৩ সালে তা পরিবর্তিত ছিল। ২০২৪ সালে এসে আরও কমে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর। সর্বশেষ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২ হেক্টর জমিতে আবাদ বাড়লেও এখনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

জেলার বিভিন্ন হাটে দেখা গেছে, প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়; যা এক মাস আগেও ছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে কৃষকদের কাছে পাটের মজুত নেই। এখন বেচাকেনা চলছে মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ফলে পাটের মূল্য বাড়লেও তা কৃষকদের লাভে আসছে না। কারণ, অধিকাংশ কৃষক আগেই ধারদেনা শোধ করতে কম দামে পাট বিক্রি করে দেন।

কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে পাটের দাম নির্ধারণ করেন পাটকলমালিক ও ফড়িয়া সিন্ডিকেট। মৌসুমের শুরুতে তাঁরা কম দামে পাট কিনে মজুত রাখেন। পরে বাজারে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

গাইবান্ধার ফুলছড়ির চরাঞ্চলের কৃষক মতি মিয়া বলেন, ‘এখন পাটের দাম ভালো, কিন্তু আমাদের ঘরে তো পাট নাই। কাটার সময় বিক্রি করেছি ২ হাজার ৮০০ টাকায়। তখন বিক্রি না করলে ধারদেনা শোধ হতো না। যাঁরা সেই পাট কিনে মজুত করে রেখেছেন, এখন তাঁরাই লাভ করছেন।’

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সোবাহান মিয়া বলেন, সার, বীজ, শ্রমিক—সবকিছুতেই খরচ বেশি। আবার ঝুঁকি নিতে হয় বন্যা-খরার। এত কষ্ট করে পাট চাষ করে লাভ হয় না।

একই গ্রামের নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনত, তাহলে আমরা লোকসানে পড়তাম না। এখন তো আমরা শুধু সিন্ডিকেটের হাতে মরছি।’

ফুলছড়ি হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে পাট কিনি, কিন্তু দাম ঠিক হয় ঢাকার মিলমালিকদের নির্দেশে। আমরা শুধু তাঁদের দেওয়া দামে বেচাকেনা করি।’

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিকুল ইসলাম দৈনিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে পাটের বাজার ভালো। পাট চাষে উৎসাহিত করতে এ বছর জেলায় দুই হাজার কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলে কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ ফিরবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরগুনার ২ আসন: বিএনপির মনোনয়ন চান ১১ জন

বরগুনা প্রতিনিধি
নজরুল ইসলাম মোল্লা, ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লা, ফজলুল হক মাস্টার, নূরুল ইসলাম মনি, খন্দকার শোয়াইব মাহবুব ও মাওলানা শামীম। ছবি: সংগৃহীত
নজরুল ইসলাম মোল্লা, ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লা, ফজলুল হক মাস্টার, নূরুল ইসলাম মনি, খন্দকার শোয়াইব মাহবুব ও মাওলানা শামীম। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বরগুনায় জমে উঠেছে নির্বাচনী রাজনীতি। একসময় আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর সেই সমীকরণ বদলে গেছে। মাঠে নেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র জাতীয় পার্টি। এমন বাস্তবতায় মাঠে সক্রিয় বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যরা। নির্বাচন সামনে রেখে জেলার দুটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মরিয়া অন্তত ১১ জন।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পুরোদমে মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন ইতিমধ্যে জেলার দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ভোটারদের মন জয় করতে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশে ব্যস্ত। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের তৎপরতা সেভাবে চোখে পড়ছে না।

২০০১ সালে বরগুনায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল। বরগুনা-১ (সদর, বেতাগী), বরগুনা-২ (বামনা, পাথরঘাটা) এবং বরগুনা-৩ (আমতলী, তালতলী)। ২০০৮ সালে এটি কমিয়ে দুটি করা হয়। বর্তমানে বরগুনা-১ আসন গঠিত সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে। আর বরগুনা-২ আসন গঠিত বেতাগী, বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলা নিয়ে। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট ভোটার ৮ লাখ ১ হাজার ১৭৩ জন। এর মধ্যে বরগুনা-১ আসনে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৭ এবং বরগুনা-২ আসনে ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৫৬ জন।

বরগুনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে তৎপর অন্তত পাঁচজন। তাঁরা হলেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লা, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লা, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল হক মাস্টার, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হুমায়ুন হাসান শাহিন এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. রেজবুল কবির। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম মোল্লাকে ২০১৮ সালে সাবেক এমপি মতিউর রহমান তালুকদারের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন তালিকায় রাখা হয়েছিল। পরে মতিউর রহমান তালুকদারের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হলে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘সারা জীবন বিএনপির রাজনীতি করেছি। ছাত্রদল করেছি, দীর্ঘদিন জেলা যুবদলের সভাপতি ছিলাম। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চার বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। শেখ হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। রাজপথে আন্দোলন করেছি। তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সাধারণ মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছি। আশা করি, দল আমার মূল্যায়ন করবে।’

বরগুনা-২ আসনেও রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। আসনটিতে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। বিএনপির মনোনয়নের জন্য এখানে অন্তত ছয়জনের দৌড়ঝাঁপের কথা শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মনি, মরহুম বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেনের ছেলে ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খন্দকার শোয়াইব মাহবুব, ওলামা দলের মাওলানা শামীম, যুবদলের মনিরুজ্জামান মনির, আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের মিজানুর রহমান খান জাকির এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হারুনুর রশিদ খান।

নূরুল ইসলাম মনি বিভিন্ন সভায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে খন্দকার শোয়াইব মাহবুব বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপির কঠিন সময়ে দলকে আগলে রেখেছেন। বৃদ্ধ বয়সে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চাই। আশা করি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাভার সিটি করপোরেশন: ভালো-মন্দের হিসাব মেলাচ্ছে মানুষ

  • সিটি করপোরেশন গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত।
  • নাগরিক সুবিধা বাড়বে, অবকাঠামো উন্নয়ন হবে।
  • ট্যাক্স বাড়বে, কষ্টে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ।
অরূপ রায়, সাভার 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাভার পৌরসভাসহ সাভার ও আশুলিয়ার ১২টি ইউনিয়নকে একীভূত করে ‘সাভার সিটি করপোরেশন’ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্ভাব্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

সাভারকে সিটি করপোরেশন করার সিদ্ধান্তের পর থেকে এলাকায় পক্ষে-বিপক্ষে বলাবলি হচ্ছে। কেউ বলছেন, সিটি করপোরেশন করা হলে এই অঞ্চলে নাগরিক সুবিধা বাড়বে, অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়ন হবে। আবার কেউ বলছেন, সিটি হলে কর বাড়বে, তার জেরে বাড়বে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একটি পৌরসভা ও ৪০৩টি গ্রাম নিয়ে ২৮০.১২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সাভার উপজেলা। রাজধানীর অদূরে হওয়ায় পৌর শহর ছাড়া অনেক গ্রামেও ঘরবাড়ি, ভবনের ক্ষেত্রে কমবেশি শহরের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু নেই যথাযথ পানীয় জল সরবরাহ, পানিনিষ্কাশন ও পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো নাগরিক সুবিধা।

গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে সাভার ও আশুলিয়ায় একের পর এক গড়ে উঠতে থাকে ছোট-বড় কলকারখানা।

কারখানাগুলোতে কাজ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন মানুষ। তাঁদের বসবাসসহ নানা চাহিদাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে বাড়তে থাকে ভবনের সংখ্যা, যার অধিকাংশই গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে। নগর গবেষকেরা বলছেন, এ কারণে এলাকাটিতে পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

কিন্তু সিটি হলেও আপাতত কী উপকার হবে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সংশয় রয়েছে। সাভারের ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমান অভি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন হলে নাগরিকদের কর বেড়ে যাবে। কিন্তু সাভার ও আশুলিয়ার যে ভৌগোলিক অবস্থা, তাতে গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছাতে ১০০ বছর লেগে যাবে।’

ঢাকা জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি মিনি আক্তারও ব্যয় বৃদ্ধির দিকটি উল্লেখ করে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের ফি তুলনামূলক অনেক কম। সিটি করপোরেশন হলে তা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এ এলাকায় বসবাসকারীদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের পোশাকশ্রমিক। হোল্ডিং ট্যাক্স ও সার্ভিস চার্জ বেড়ে গেলে বাড়িঅলারা নিশ্চয়ই তা ভাড়াটেদের ওপর চাপাবে। এতে পোশাকশ্রমিকদের ব্যয় বেড়ে যাবে।’

সাভার পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদির বলেন, ‘সিটি করপোরেশন সেই এলাকাতেই করা উচিত, যেটা শহর। সাভার ও আশুলিয়ার অধিকাংশ এলাকাই এখনো প্রত্যন্ত। পুরো সাভার ও আশুলিয়া নয়, সাভার পৌর শহরসহ যেসব এলাকায় শহরের ছোঁয়া লেগেছে, ওই সব এলাকাকে সিটি করপোরেশনের মধ্যে নিলে ভালো হবে।’

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান মনে করেন বলেন, রাজধানীসংলগ্ন সাভার এলাকার উন্নয়নের জন্যই এটি সিটি হওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘এলাকার অনেকে আইন মানতে চান না। অনেকেই পরিবেশকে অবজ্ঞা করে নদী-নালাতে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলেন। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের সিটি করপোরেশন দরকার। এই পুরো এলাকার উন্নয়নটা ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য সরকারের আগ্রহ দরকার।’

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাভার পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ‘সিটি করপোরেশন হলে এলাকার সড়ক, ফুটপাত, ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একক কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে। এতে কাজের গতি ও মান বাড়বে। এ ছাড়া জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স ও হোল্ডিং করসহ নাগরিকদের সেবা এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত