Ajker Patrika

আত্রাইয়ে সেচে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ নলকূপ মালিকদের বিরুদ্ধে

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আত্রাইয়ে সেচে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ নলকূপ মালিকদের বিরুদ্ধে

নওগাঁর আত্রাইয়ে চলতি বোরো মৌসুমে জমিতে পানি সেচে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নলকূপ মালিকদের বিরুদ্ধে। উপজেলা সেচ কমিটি নির্ধারিত দরের চাইতে বিঘা প্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কৃষকেরা। এদিকে নলকূপ মালিকেরা বলছেন তেলের দাম ও পাহারাদারের মজুরি বেশি থাকায় সেচে বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলা জুড়ে প্রায় ১৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ধান রোপণের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এসব জমিতে পানি সেচের জন্য বিদ্যুৎ চালিত গভীর-অগভীর নলকূপ ও এলএলপি রয়েছে মোট ৮৪৫টি এবং ডিজেল চালিত গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে মোট ৬ হাজার ৯৫৩টি। এ ছাড়া ১০টি সোলার নলকূপ দিয়ে ধানের জমিতে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। 

আত্রাই উপজেলা সেচ কমিটির সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে এলাকা ও মাটির রকম ভেদে পানি সেচে আলাদা আলাদা দর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোঁপাড়া, আহসানগঞ্জ ও সাহাগোলা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ চালিত গভীর-অগভীর নলকূপে বিঘা প্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা এবং ডিজেল চালিত নলকূপে ৪ হাজার টাকা এবং পাঁচুপুর, বিশা, মনিয়ারী, হাটকালুপাড়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ চালিত গভীর-অগভীর নলকূপে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ডিজেল চালিত নলকূপে ৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি বিঘা জমিতে পানি সেচের দর নির্ধারণ করা হয়। চলতি মৌসুমে নতুন দর নির্ধারণ না করায় আগের দরেই জমিতে পানি সেচ দেবেন নলকূপ মালিকেরা। 

কিন্তু নলকূপ মালিকেরা কৃষকদের থেকে নির্ধারিত দরের চাইতে কোথাও কোথাও বিঘা প্রতি ৭০০ টাকা আবার কোথাও ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করে পানি সেচ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষকেরা বলছেন, এমনিতেই গত আমন মৌসুমে উপজেলার প্রায় ১২ হাজার বিঘা জমির ধান বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনেক লোকসান হয়েছে। এসব লোকসান কাটাতে আগে-ভাগেই জমিতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই জমিতে ধান রোপণ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কৃষকদের মতে, দফায় দফায় রাসায়নিক সার, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি পরে যাচ্ছে। এর মধ্যে নলকূপ মালিকেরা নির্ধারিত দরের চাইতে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। এতে শুরুতেই লোকসানের কবলে পরছেন তারা। 

উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের বিল গলিয়া গ্রামের কৃষক রুবেল খাঁন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ চালিত নলকূপে নির্ধারিত প্রতি বিঘা জমিতে পানি সেচে দর ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। সেখানে নলকূপ মালিক মিঠু হোসেন প্রতি বিঘা ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন। এতে বিঘা প্রতি ৭০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছেন নলকূপ মালিক। ফলে ধান রোপণের শুরুতেই বিঘাপ্রতি ৭০০ টাকা লোকসানে পড়ছি।’ 
 
আত্রাই উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের পশ্চিম মাঠ এলাকার একটি ধানখেত। ছবি: সংগৃহীততবে নলকূপ মালিক মিঠু হোসেন বলেন, ‘আমার নলকূপের আওতায় যে জমিগুলো রয়েছে তা কয়েকটি মৌজা মিলে। গ্রামের লোকজন বসে ২ হাজার ৫০০ টাকা বিঘা পানি সেচের হার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমি সে অনুযায়ীই টাকা নিয়ে পানি সেচ দিচ্ছি।’ 

মনিয়ারী ইউনিয়নের ধর্মপুর, উলাবাড়িয়া, হেঙ্গলকান্দি এলাকায় ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনে পানি সেচে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বিঘা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই এলাকার কৃষক নাসির উদ্দীন বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। সেখানে প্রতি বিঘা ৫ হাজার টাকা দিয়ে পানি নিতে হয়েছে। এতে বিঘা প্রতি নির্ধারিত দরের চাইতে দেড় হাজার টাকা করে ৫ বিঘা জমিতে সাড়ে সাত হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। 

ধর্মপুর গ্রামের শ্যালো মেশিন মালিক জামাল উদ্দীন বলেন, তেলের দাম বেশি। পাহারাদারের মজুরিও বেশি এবং মাটিতে অতিরিক্ত পানি সেচ দিতে হয়। তাই বিঘাপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে নিতে হচ্ছে। এই এলাকায় সবাই ৫ হাজার টাকা বিঘা হারে পানি সেচ দিচ্ছেন। তাই আমিও ৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছি। 
 
আত্রাই উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যসচিব বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মো. আলী হোসেন বলেন, জমিতে পানি সেচে নির্ধারিত দর অনুসরণ করতে নলকূপ মালিকদের বলা হয়েছে। এর পরেও যদি কেউ কৃষকের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তাহলে ওই নলকূপ মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিয়ের আসরে কনে বদল, মেয়ের জায়গায় মা

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

বদলির পর ঠাকুরগাঁওয়ের ওসির পোস্ট: ‘বুঝলে বুঝ, না বুঝলে খেয়ে নে তরমুজ’

এক ফ্যাসিস্ট নেত্রীর পাল্লায় পড়ে পুলিশ খারাপ হয়েছিল: এসপি

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ বাংলাদেশের কাছে তুলল পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত