Ajker Patrika

পানিবন্দী সাঁওতাল পল্লির ২০ পরিবার

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি
পানিবন্দী সাঁওতাল পল্লির ২০ পরিবার

একমাত্র ঘরের ছোট্ট বারান্দায় বসে কাঁথা সেলাই করছেন সুকুমারী। বাড়ির সামনে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে আছে দুটি শিশু। খেলতে যেতে পারছে না তারা। প্রায় দুই মাস ধরে এমন গৃহবন্দী অবস্থা তাঁদের। পানি বারান্দা ছুঁই ছুঁই করছে। চলাচলের জন্য বাড়ির ভেতর থেকে রাস্তা পর্যন্ত প্রথমে ইট পাতা হয়েছিল। সেই ইট তলিয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন বাড়ি থেকে বের হলেই হাঁটু সমান পানি ডিঙিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।  

এ অবস্থা শুধু সুকুমারীর পরিবারের নয়, চারঘাট উপজেলার পরানপুর গ্রামের ২০টি সাঁওতাল পরিবারের চিত্র একই রকম। তবে বন্যার পানিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি মাছ চাষের জন্য কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় বৃষ্টির পানিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। 

সাঁওতাল সমাজ প্রধান বাবু রাম জানান, এখানে ২০টি সাঁওতাল পরিবার রয়েছে। তাঁদের সবার নিজস্ব জমি নেই। কয়েকজনের জমিতে পরিবারগুলো সমঝোতা করে বসবাস করছেন। নিচু জায়গা হওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই সবদিকের পানি এসে সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে একটা ছোট কালভার্ট থাকার কারণে প্রতিবছর সেই পানি বিলের দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু এ বছর কালভার্টের দক্ষিণ পাশের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ শুরু করেছেন সেন্টু আলী ও লবো কুমার নামের দুজন ব্যক্তি। এ জন্য গত দুই মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন তাঁরা। 

তিনি আরও জানান, মাটি ও বেড়ার ঘর হওয়ার কারণে পানিতে অনেকের ঘর ভেঙে পড়েছে। দুটি সাঁওতাল পরিবার ঘর হারিয়ে রাস্তায় অস্থায়ী ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েও তাঁরা কোনো প্রতিকার পাননি। 

কালভার্টের মুখ বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টু আলী ও লবো কুমার বলেন, জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে তা সঠিক। এ জমিতে আগে ধান চাষ করতাম। অনেক টাকা খরচ করে এবার মাছ চাষ করছি। বাইরের দূষিত পানি পুকুরে প্রবেশ করলে মাছের ক্ষতি হবে। এ জন্য কালভার্টের মুখ বন্ধ করা হয়েছে।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন বলেন, সাঁওতাল পরিবারগুলো খুবই অসহায় অবস্থায় আছে। তাঁদের বাড়ির ভেতরেও হাঁটুপানি। আমি চেষ্টা করেও মাছ চাষিদের কালভার্টের মুখ খোলাতে পারিনি। ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অবস্থা খুব করুণ। প্রশাসনের সহযোগিতায় খুব দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত