Ajker Patrika

দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভাতা মিলছে না শাহীদার

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) 
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৫, ০০: ২৯
শাহীদা বেগমের পলিথিনে মোড়ানো ঘর। গতকাল বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শাহীদা বেগমের পলিথিনে মোড়ানো ঘর। গতকাল বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোরের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে পড়েন মোছা. শাহীদা বেগম। গন্তব্য এক হিন্দু পরিবারের বাসা। সেখানে ঝিয়ের কাজ করেন। মাস শেষে হাতে পান এক হাজার টাকা আর পাঁচ কেজি চাল। সেই আয় আর আশপাশের মানুষের দান-সদকায় চলে তাঁর সংসার।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া গ্রামের এক কোনায় পলিথিনে মোড়ানো এক ঝুপড়িঘরে বসে জীবনের কঠিন গল্প শোনাচ্ছিলেন প্রায় ৫০ বছরের বিধবা মোছা. শাহীদা বেগম।

ঘরের এক পাশে কাঠের চৌকি, পাশে খাবারের ডালা, ছেঁড়া কাঁথা—সবকিছুই যেন জীবনের দুঃসহ কষ্টের সাক্ষ্য দেয়।

শাহীদা বেগম জানান, তাঁর প্রথম স্বামী আকতার শেখ ১৯৮৮ সালে ডায়রিয়ায় মারা যান। এরপর দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেও সেই স্বামী কয়েক বছরের মধ্যে জ্বরে মারা যান। সন্তানদের নিয়েই জীবন কাটছিল, কিন্তু কয়েক বছর আগে যুবক ছেলে আতাউরের মৃত্যু যেন সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে দেয়।

শাহীদা বেগম তাঁর পলিথিনে মোড়ানো ঘরে বসে আছেন। গতকাল বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শাহীদা বেগম তাঁর পলিথিনে মোড়ানো ঘরে বসে আছেন। গতকাল বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিজের সামর্থ্যেই কষ্টে ৩ শতাংশ জমি কিনে সেখানে একটি ভাঙাচোরা ঘর তুলেছিলেন। কিন্তু এক-দেড় বছর আগে ঝড়ে সেই ঘরও ভেঙে যায়। এখন পলিথিন দিয়ে কোনোরকমে মাথার ওপর ছায়া তৈরি করে বসবাস করছেন বাক্‌প্রতিবন্ধী মেয়ে তারাবানু (তারানী) ও মৃত ছেলের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, টিন নেই, জানালা-দরজাও নেই। বৃষ্টি নামলেই পানি পড়ে ঘরে। সেই পানির মধ্যেই কাটে রাত-দিন। কোনোভাবে নামাজ পড়াও সম্ভব হয় না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বড় ছেলে বিয়ের কয়েক বছর পরই মারা গেছেন। সেই ঘরে রয়েছে একটি ছয়-সাত বছরের শিশু। বাক্‌প্রতিবন্ধী মেয়েরও বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু সংসার টেকেনি। আর ছোট ছেলে আগে দিনমজুরের কাজ করতেন, এখন আর তা-ও করতে পারেন না।

সব মিলিয়ে মানবেতর এক জীবন পার করছেন শাহীদা বেগম।

শাহীদা বেগম আজকের পত্রিকাকে জানান, একটু শান্তিতে নামাজ পড়তে পারেন না। শুধু কষ্ট আর চোখের পানি। একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদ ও সমাজসেবা কার্যালয়ে গেছেন সরকারি বয়স্ক বা বিধবা ভাতার জন্য। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

শাহীদা বলেন, ‘সবাই বলে আসেন, পরে দেখা যাবে। কেউ একটা কার্ড করে দেয় না। আর কত ঘুরব? এখন যদি সরকার একটা ঘর দিত, একটা ভাতার কার্ড দিত, তাহলে হয়তো শেষ জীবনটা একটু শান্তিতে কাটাতে পারতাম।’

এ বিষয়ে জানতে কালিয়া এলাকার ইউপি সদস্য সাইফুলের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার যখন অনলাইনে আবেদনের সময় দেয়, তখন হয়তো আমরা বিষয়টি দেখতে পারি। এমনি বললেই তো আসলে কাউকে বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ড দেওয়া যায় না। তবে ওনার ছবি পাঠান, দেখি এরপর খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক কেরানির ২৪টি আলিশান বাড়ি ও ৩০ হাজার কোটির সম্পদ

আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

সব কমিটি থেকে নারীদের সিস্টেমেটিক্যালি সাইড করা হয়েছে: সামান্তা শারমিন

ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে রেখে ‘৪ কোটি টাকা আদায়’

অবরোধকারীদের ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের’ হামলা, পুলিশের লাঠিপেটায় শাহবাগ ফাঁকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত