Ajker Patrika

৮ মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ, প্রধান হুজুর পলাতক

সেনবাগ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৭: ১৪
৮ মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ, প্রধান হুজুর পলাতক

নোয়াখালীর সেনবাগের গোপালপুর তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার আট আবাসিক শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার প্রধান হুজুরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত মাদ্রাসাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ গা ডাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

গত শনিবার উপজেলার নবীপুর ইউপির গোপালপুর তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার প্রধান আবদুল ফাত্তাহর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে শতাধিক অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন মাদ্রাসা ঘেরাও করেন। এর ফাঁকে মাদ্রাসার শিক্ষক জহিরুল ইসলামের সহায়তায় অভিযুক্ত মাদ্রাসাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। এদিন রাত পৌনে ১১টায় মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়বের চট্টগ্রামের সেগুনবাগানের বাসায় মুখ্য কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিটির সভাপতি কাজী সরওয়ার আলম, সেক্রেটারি আবদুল ছাত্তার, শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ও সদস্য কাজী ফিরোজ আলম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মাদ্রাসার পরিচালক অভিযুক্ত আবদুল ফাত্তাহের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আনা অনৈতিক আচরণ প্রমাণিত হওয়ায় দায়সারাভাবে আবদুল ফাত্তাহকে পরিচালকের পদ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ভুক্তভোগী এক আবাসিক ছাত্রের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। সে জানায়, মোট ১৬ জন আবাসিক ছাত্রের মধ্যে ৮ জন ছাত্রকে বিভিন্ন সময়ে পরিচালক আবদুল ফাত্তাহ ভয়ভীতি দেখিয়ে শয়নকক্ষে নিয়ে বলাৎকার করেন। কোমলমতি ছাত্ররা প্রতিবাদ করলে তাদের করা হতো নির্যাতন। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে জানায়, আবাসিক ছাত্রদের মধ্যে পঞ্চম, তৃতীয়, চতুর্থ এ দ্বিতীয় সে নিজেও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। 

নুর নবী নামে একজন অভিভাবক আজকের পত্রিকাকে জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বড় হুজুরের অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক জহিরুল ইসলামকে জানালে তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। উল্টো তিনি বড় হুজুরের চাহিদা মেটাতে আবাসিক ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবদুল ফাত্তাহ ও জহুরুল ইসলামের বিচার দাবি করেন এ অভিভাবক।

এদিকে এ ঘটনার সত্যতা জানতে গত রোববার রাতে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হলে অর্ধশতাধিক অভিভাবক ও এলাকাবাসী আবদুল ফাত্তাহর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। বলাৎকারের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে এ সময় স্থানীয় চান মিয়া নামের এক ব্যক্তি অভিযোগকারীদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। 

পরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতসহ করণীয় বিষয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাদ্রাসায় বৈঠক করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বেলায়েত হোসেন সোহেল। এ সময় সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওহাব, রামেন্দ্র মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন, মাদ্রাসার সেক্রেটারি আবদুল ছাত্তার, শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। 

সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল ওহাব আজকের পত্রিকাকে জানান, শিক্ষকের অনৈতিক বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং আবাসিক ভবন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সোহেল ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে আজকের পত্রিকাকে জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ১২০ শতক ভূমিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে তালিমুল কুরআন প্রতিষ্ঠা করেন ব্যবসায়ী আবদুল ছাত্তার, হেফজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন আমেরিকাপ্রবাসী মোতাহের হোসেন ও মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন আবুল কাশেম। বর্তমানে ৩টি বিভাগে ৫৩১ জন ছাত্র–ছাত্রী ও ১১ জন শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত। ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুল ফাত্তাহ ৫ দিন ধরে পলাতক। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলে বারবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের নিজ বাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীতে তাঁর হদিস মিলছে না। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩২
নিহত যুবদল কর্মী মো. সাজ্জাদ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত যুবদল কর্মী মো. সাজ্জাদ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ায় বিএনপি নেতার ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় মো. সাজ্জাদ (২৫) নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত সাজ্জাদ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার হিরাকান্দা গ্রামের মো. আলমের ছেলে। তিনি নগরের তক্তারপুল এলাকার বিসমিল্লাহ টাওয়ারে ভাড়া থাকতেন। সাজ্জাদ নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশাহর ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, সোমবার রাতে সাজ্জাদসহ কিছু যুবদল কর্মী একটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় স্থানীয় সোহেল, বোরহান ও দেলোয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মেয়রের ছবিযুক্ত ওই ব্যানার ছিল সোহেল-বোরহান গ্রুপের। এই সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, রাতে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় দুটি গ্রুপের ১৫ থেকে ২০ জন হেলমেট পরে হামলায় অংশ নেয়। তারা আশপাশের ভবনে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। ঘটনার সময় পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাতে বাসায় ফিরে গেছে।

চমেক হাসপাতালে নিহত সাজ্জাদের বাবা মো. আলম বলেন, ‘বন্ধুরা ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল আমার ছেলেকে। কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে জানি না। আমি শুধু চাই, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার হোক।’ চমেকে উপস্থিত যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশা অভিযোগ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা গুলি করার আগে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেয়। যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে জি এম সালাউদ্দিন আসাদ নামের একজন বলেন, ‘যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যুবদলের পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করছে। মেয়রের ছবি লাগিয়ে তারা ব্যানার-পোস্টার টানায়। মেয়রের লোকেরা ব্যানার খোলার নির্দেশ দিলে আমাদের ছেলেরা খুলতে যায়। তখন তাদের মারধর করা হয়। পরে উদ্ধার করতে গেলে ভবনের ছাদ থেকে গুলি চালানো হয়, এতে সাজ্জাদ নিহত হয়।’

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির মরদেহ দেখতে চমেক হাসপাতালে যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আগে আওয়ামী ছত্রচ্ছায়ায় থাকলেও এখন আমার ছবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আমি আগে থেকেই থানাকে জানিয়েছিলাম ও ব্যানার সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। তবু ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, নিহত সাজ্জাদের বুকে গুলি লেগেছে। এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যানার টানানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আধিপত্য ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে সেই বিরোধ তীব্র হয়। সোমবার রাতের ঘটনায় তারই রেশ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সোহেল ও বোরহান দীর্ঘ ১৬ বছর পটিয়ার আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁরা নগর বিএনপি নেতা গাজী মোহাম্মদ সিরাজউল্লাহর গ্রুপে যোগ দেন। দেলোয়ার ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চু গ্রুপের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে লরির সংঘর্ষ, প্রাণ গেল একজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ০৩
চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে লরির সংঘর্ষে ট্রেনের ইঞ্জিন ও লরি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে লরির সংঘর্ষে ট্রেনের ইঞ্জিন ও লরি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম নগরের সাগরিকা এলাকায় চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে লরির সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। দ্রুতগামী লরিটি মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনে ধাক্কা দেয়। এতে একটি বগিসহ ট্রেনের ইঞ্জিন ও লরিটি রেললাইনের ওপর উল্টে পড়ে। এ সময় লরির চাপায় একজনের মৃত্যু হয়। আজ মঙ্গলবার ভোরে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম শামসুল হাই (৬০)। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীর দিদার কলোনিতে। তিনি ওই এলাকায় নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।

রেলওয়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মালবাহী ট্রেনটি নগরের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় আজ ভোর ৪টায়। ভোর ৪টা ২০ মিনিটে সাগরিকার বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লরিটি রেললাইনে ঢুকে পড়ে সরাসরি ট্রেনের ইঞ্জিনে ধাক্কা দেয়। এ সময় ইঞ্জিন ও একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। দুর্ঘটনার পর ট্রেনের বাকি মালবাহী বগিগুলো সিজিপিওয়াই স্টেশনে নিয়ে আসা হয়।

জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় গেটম্যানের অবহেলা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। গেট খোলা ছিল। এতে দ্রুতগামী লরিটি মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনে ধাক্কা দেয়। এই ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, লরি ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। ওই লাইন শুধু মালবাহী ট্রেন ও কনটেইনার পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভবন নির্মাণ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার, টিনের ঘরে পাঠদান

মো. ইমরান হোসাইন,কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে টিনশেড ঘরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে টিনশেড ঘরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাঁচ বছর আগে ব্যবহারযোগ্য পুরোনো স্কুল ভবন ভেঙে ফেলা হয়। নতুন ভবনের আশ্বাসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হয় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের পুকুরপাড়ের একটি টিনশেড ঘরে। সেই অস্থায়ী ঘরে কেটেছে পাঁচটি বছর। এখনো রোদ, বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে চলছে ক্লাস।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪৭ শিক্ষার্থী ও ৬ শিক্ষকের এই দুর্ভোগ এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। জায়গা না থাকায় নিয়মিত অ্যাসেম্বলিও হয় শ্রেণিকক্ষের ভেতর বা চলাচলের সড়কে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। পাইলিং করা লোহার দণ্ডে জং ধরেছে, পানিতে ডুবে আছে অসমাপ্ত পিলার। চারপাশে ছড়িয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। পুরোনো ভবনের শুধু ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কক্ষটি’ রাখা হয়েছে, বাকিটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা পুকুরপাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেড ঘরে পাঠ নেয়। শ্রেণিকক্ষের সংকটে চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বসতে হয় এক বেঞ্চে।

নতুন ভবনের আশ্বাসে ব্যবহারযোগ্য পুরোনো স্কুল ভবন ভেঙে ফেলা হয়।
নতুন ভবনের আশ্বাসে ব্যবহারযোগ্য পুরোনো স্কুল ভবন ভেঙে ফেলা হয়।

অভিভাবক মোহাম্মদ ইদ্রিছ বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা খুবই খারাপ। শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। নতুন ভবন না হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কমবে। প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা জোহরা, ইমরান হোসাইন তানভীর ও পঞ্চম শ্রেণির ফারাবি রহমান রাব্বি বলে, ‘গরমের সময় টিনের চালার নিচে ক্লাস করা যায় না। মনে হয় শরীর পুড়ে যাচ্ছে। পুরোনো ভবনটাই অনেক ভালো ছিল।’

অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকাদার ও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মধ্যে কাজের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নির্মাণকাজ থেমে আছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ইতিমধ্যে লোহা ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে (এমডিএফপি প্রকল্প) প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পুরোনো ভবন ভেঙে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক টিনশেড ঘর ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেলে প্রকল্প স্থবির হয়ে যায়। ফলে শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্লাস পরিচালনায়, কমেছে শিক্ষার্থীও।

স্থানীয় যুবক আমিনুল হক, মোহাম্মদ সাকিব, রিদোয়ান ও সায়মন বলেন, ‘ঠিকাদার পাঁচ বছর আগে পাইলিং শুরু করেছিল। সবাই ভেবেছিল ভবন দ্রুত হবে। কিন্তু এক বছর পরই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন সামগ্রীগুলো নষ্ট হচ্ছে, দেখার কেউ নেই।’

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব বেগম বলেন, ‘ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আগে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল, এখন আছে মাত্র ১৪৭ জন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসও বন্ধ। দামি জিনিস রাখা যায় না চুরির ভয়ে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলে ভবন ভেঙেছিল ঠিকাদার। কিন্তু পাঁচ বছরেও কাজ হয়নি। বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সানাউল্লাহ কাউছার বলেন, এমডিএফপি প্রকল্পে ভবন বরাদ্দ ছিল, কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী কক্ষ নির্মাণের জন্য সহায়তা চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে প্রকল্প বাতিল হয়েছে। বি-স্ট্রিম প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিদ্যালয় ভবনের জন্য নতুন বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ত্রিশালের দুর্গাপুর-কুরুয়াগাছা: রাস্তা নয়, যেন খাল

ত্রিশাল(ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
লাচলের অনুপযোগী ময়মনসিংহের ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাচলের অনুপযোগী ময়মনসিংহের ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়কটি এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে রাস্তাটি ভেঙে তৈরি হয়েছে হাঁটুসমান গর্ত ও জলাবদ্ধতা। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, এ যেন রাস্তা নয়, খাল। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাদামিয়া, কুরুয়াগাছা ও দুর্গাপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটির প্রায় সব অংশ ভাঙাচোরা। নিয়মিত ভারী মালবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে জায়গায় জায়গায় দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গভীর খাদ। এখন বড় চাকার লরি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ছোট যান যেমন অটোরিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা পথচারীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি—দ্রুত সংস্কার না করলে এই সড়কে দুর্ঘটনা বাড়বে। পাশাপাশি এলাকার মানুষ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি অটোরিকশা খাদে পড়লে চালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে প্রাণপণ চেষ্টা করে সেটি তুলছেন। অন্যদিকে অসুস্থ এক নারীকে কয়েকজন মিলে কাদামাটির রাস্তায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

অটোরিকশাচালক খায়রুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে জানলে এই রাস্তায় কখনো আসতাম না। গাড়ি খাদে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন সাহায্য না করলে পার হতে পারতাম না। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত যেন রাস্তা মেরামত করা হয়।’

স্কুলশিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলে, ‘রাস্তাটা এত খারাপ যে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। বৃষ্টির সময় পা কাদায় ডুবে যায়, অনেক সময় পড়ে যাই। এতে অনেক দিন ক্লাসে যেতে পারি না। সরকারের কাছে অনুরোধ, রাস্তাটা যেন দ্রুত পাকা করা হয়।’

মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আবুল কালাম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত। এই রাস্তার আংশিক কাজের জন্য একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু করা যাবে। বাকি অংশও এই অর্থবছরের মধ্যে অনুমোদন নিয়ে শেষ করার আশা করছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত