Ajker Patrika

নীলফামারীর ডিমলা: টাকা ছাড়া মিলছে না বিনা মূল্যের চিকিৎসা

  • ভেটেরিনারি হাসপাতালে ভোগান্তির শিকার খামারিরা।
  • কৌশলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সার্জনের বিরুদ্ধে।
  • ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে গরু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারীর ডিমলায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে বিনা মূল্যের সেবা পেতেও টাকা গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খামারিরা বলছেন, হাসপাতালটিতে ঠিকমতো চিকিৎসা মেলে না। এদিকে ভেটেরিনারি সার্জন হাসপাতালে পশুর চিকিৎসা না দিয়ে বাড়ি গিয়ে দিতে চান। এর জন্য তাঁকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।

অভিযোগ রয়েছে, একের পর এক গরু অসুস্থ হলেও প্রান্তিক খামারিরা পাচ্ছেন না বিনা মূল্যের চিকিৎসা। চিকিৎসা পেতে হলে টাকা দিতে হয়। কিন্তু টাকা দিয়ে পশুর চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য সব খামারির থাকে না।

এলাকাবাসী বলছেন, হাসপাতাল খোলা থাকলেও চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। আবার হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলে দিতে হয় ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘ভিজিট’। টাকা না দিলে মেলে না চিকিৎসা। ফলে মারা যাচ্ছে গরু, ক্ষতির মুখে পড়ছেন খামারিরা।

উপজেলার ছোটখাতা গ্রামের প্রান্তিক খামারি শরীফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার গরুর বাছুরের হার্নিয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভেটেরিনারি সার্জন বললেন অস্ত্রোপচার করতে হবে। এখানে হবে না, বাড়িতে নিয়ে যান, সেখানে অস্ত্রোপচার করে দেব। তবে খরচ দিতে হবে ৫ হাজার টাকা। ভেবেছিলাম সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই ফিরে আসতে হয়েছে।’

একই এলাকার খামারি ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘গরু অসুস্থ হলে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার পাই না। পরে ফোনে বললে বলেন, বাড়িতে গিয়ে দেখবেন, কিন্তু টাকা লাগবে। না দিলে আসেন না।’

চরখড়িবাড়ি এলাকার রশিদুল ইসলাম জানান, ‘বন্যার সময় চর এলাকা থেকে গরু নিয়ে হাসপাতালে আসতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু হাসপাতালে গেলে ডাক্তার থাকেন না। ফিরে গিয়ে দেখি গরু মরেছে। আমরা গরিব মানুষ, ২-৩ হাজার টাকা দিয়ে ডাক্তার ডাকব কীভাবে?’

একই অভিযোগ কুটির ডাঙ্গা এলাকার খামারি সুলতান আলীর। তিনি বলেন, ‘বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু আগে চুক্তি করতে হয়। ২ হাজার না দিলে ডাক্তার গরু দেখেন না। বাধ্য হয়ে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। ফলে ভুল চিকিৎসায় সম্প্রতি আমার দুটি গরু মারা গেছে।’

স্থানীয় খামারিরা আরও অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আসাদুজ্জামান প্রায়ই হাসপাতালে থাকেন না। সরকারি সেবা বিনা খরচে দেওয়ার বদলে তিনি বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করেন এবং এর জন্য দাবি করেন ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। এমনকি উপজেলা শহরের বিভিন্ন বাজারে ব্যক্তিগত চেম্বারও চালাচ্ছেন।

বাবুরহাট সদরের খামারি আনিছুর ইসলাম বলেন, ‘ওষুধ থাকে, তবু বাইরে থেকে কিনতে বলে। ঘুষ না দিলে চিকিৎসা মেলে না। এতে আমাদেরই সর্বনাশ হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে প্রথমে তিন থেকে চার দিন ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। একাধিকবার প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। পরে দেখা মিললেও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে কথা বাড়াতে রাজি হননি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মদন কুমার রায় বলেন, সরকারি হাসপাতালে সব চিকিৎসা ও অপারেশন বিনা মূল্যে। কেউ যদি অর্থ নেয়, তা অনৈতিক। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

স্ত্রীর সম্পদ পুনরুদ্ধারে মামলা করা যায়

হামাসকে নিরস্ত্র হতে বাধ্য করা হবে, প্রয়োজনে আমরাই করব সহিংসভাবে: ট্রাম্প

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত