Ajker Patrika

আড়াই কোটির উদ্ধার যান নিজেই অকেজো

  • একটির অবস্থান এখন পানির নিচে; বাকি দুটির ইঞ্জিন বিকল।
  • চুরি হয়ে গেছে লোহার বেঞ্চ ও যন্ত্রাংশ, প্রায় সর্বত্র মরিচা ধরেছে।
মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি স্পারবাঁধ ঘাটে ডুবে আছে উদ্ধারকারী নৌযান। ছবি: আজকের পত্রিকা
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি স্পারবাঁধ ঘাটে ডুবে আছে উদ্ধারকারী নৌযান। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানুষ বাঁচানোর জন্য কেনা উদ্ধারকারী নৌযানকেই এখন উদ্ধারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে নীলফামারীতে। প্রায় আড়াই কোটি টাকায় কেনা তিনটি আধুনিক রেসকিউ বোটের একটির অবস্থান এখন পানির নিচে। আর বাকি দুটির ইঞ্জিন বিকল। মাসের পর মাস অযত্নে ক্ষয়ে যাচ্ছে সরকারি এই সম্পদ।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় সারা দেশে ৬০টি আধুনিক উদ্ধারকারী বোট কেনা হয়েছিল। প্রতিটির দাম ৮৮ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে নীলফামারী জেলার জন্য বরাদ্দ হয় তিনটি। ডিমলার দোহলপাড়া ও ঝুনাগাছ চাপানি এলাকায় দুটি এবং জলঢাকার ডাউয়াবাড়ী ঘাটে একটি বোট রাখা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ বা হস্তান্তর নিয়ে কোনো নির্দেশনা জারি হয়নি। ফলে বরাদ্দ বন্ধ, দায়িত্বও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বন্যা ও দুর্যোগকালে ত্রাণ তৎপরতা এবং উদ্ধারকাজে ব্যবহারের জন্য কেনা হলেও বোটগুলো এখন কার্যত অকেজো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝুনাগাছ চাপানি ঘাটে থাকা একটি বোট তিস্তা নদীতে পানির নিচে ডুবে আছে। অন্য দুটি বোটে নেই ছাউনি, তলার কাঠের পাটাতন ভেঙে গেছে, কেবিন ভাঙাচোরা। চুরি হয়ে গেছে লোহার বেঞ্চ ও যন্ত্রাংশ, কাঠামোর প্রায় সর্বত্র মরিচা ধরেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, ‘বন্যার সময় এই বোটগুলো দেখলেই স্বস্তি পেতাম। এখন সব বিকল। বিপদের সময় মানুষ উদ্ধার করবে কে?’

কিসামত চর গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এবারের বন্যায় আমাদের গ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে। কেউ আসেনি। তখন বুঝেছি, এই বোট থাকলেও কোনো কাজে লাগে না।’

স্থানীয় কৃষক আরিফ ইসলাম বলেন, ‘কোটি টাকার বোট কিনে যদি ফেলে রাখা হয়, তাহলে মানুষের উপকার হবে কীভাবে?’

চাপানি এলাকার বাসিন্দা জিয়ারুল ইসলাম বলেন, সরকারি জিনিস নষ্ট হলে কেউ খোঁজ নেয় না। কোটি টাকার সম্পদ এভাবে নষ্ট হচ্ছে, অথচ কারও কোনো দায় নেই।

খালিশা চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, এই বোটগুলো সচল থাকলে বন্যার সময় মানুষ ও মালামাল উদ্ধারসহ ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যবহার করা যেত। এখন এগুলোই উদ্ধার দরকার। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।

বোটগুলোর দায়িত্বে থাকা চালকেরা জানান, ১৭ মাস ধরে তাঁরা কোনো বেতন পাচ্ছেন না। বোটের চালক রুবেল ও জাভেদ বলেন, কাজ না থাকলেও বোটগুলোর পাহারা দিতে হয় সব সময়। কিন্তু বেতন বা সরঞ্জাম না থাকায় সেটা কঠিন হয়ে পড়ছে। অযত্নে কোটি টাকার বোট নষ্ট হচ্ছে।

চালকদের অভিযোগ, প্রতিবছর সংস্কারের জন্য বরাদ্দ এলেও সেই টাকায় কোনো কাজ হয় না।

বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আমার জানা নেই। যখন প্রকল্প চালু ছিল, তখন হয়তো বরাদ্দ ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমানে কোনো বরাদ্দ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, বোটগুলো সচল রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

সেনা কর্মকর্তাদের জন্য ‘সাবজেল’ ঘোষণার যৌক্তিকতা কী, টিআইবির প্রশ্ন

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা করলেন হাবিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত