Ajker Patrika

নরসিংদীতে ভূমিকম্প

শিশুদের ভয় কাটেনি এখনো, দেওয়া হচ্ছে কাউন্সেলিং

  • বড়দের আতঙ্ক কাটলেও শিক্ষার্থী-শিশুরা ভয়ে।
  • শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং দেওয়ার পরামর্শ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায়।
  • বুঝিয়ে-শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে চেষ্টা করছেন শিক্ষকেরা।
রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পরপর দুই দিনের ভূমিকম্পে নরসিংদীর মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা বড় প্রভাব ফেলেছে সেখানকার শিশুদের মনোজগতে। অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, শিশুরা এখনো ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠছে। মনোযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনায়। শিক্ষার্থী ও শিশুদের মনের এই ভয় দূর করতে স্কুলে স্কুলে দেওয়া হচ্ছে কাউন্সেলিং সেবা।

জেলা প্রশাসনসূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর ঘোড়াশাল ও গাবতলী এলাকায় ভূমিকম্পের আতঙ্কটা বেশি ছিল। সেটা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করা হয়। হাসপাতালগুলোকেও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যা যা করণীয় তা করতে বলা হয়েছে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমন ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। বড়দের আতঙ্ক অনেকটা কমেছে। তবে শিক্ষার্থী ও শিশুদের ভয় কাটাতে স্কুল-কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করা হবে। শিশুদের মানসিক ট্রমা থেকে বের করে আনার জন্য কাউন্সেলিংয়ের কথা বলেছি।’

গতকাল মঙ্গলবার নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ স্কুল-কলেজে পরীক্ষা চলছে। তবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের ভয় কাটানোর জন্য কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার তারিখও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা শিক্ষা অফিসার এ এস এম আবদুল খালেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা চলছে। ভূমিকম্পের পর সবাই আতঙ্কে ছিল। তাই জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও শিক্ষার্থীদের মানসিক কাউন্সেলিং করার কথা বলা হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ভূমিকম্পের পর তাদের নিজেদের মতো পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করেছে।’

গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো দেশ। এতে ১০ জন নিহত, সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। সেদিনের ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। সেদিনের ঘটনা এখনো ভুলতে পারছে না সেখানকার মানুষ।

শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ৩১ ঘণ্টার মধ্যে আরও তিনটি মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে একটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকার দড়িহাওলাপাড়া।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে দড়িহাওলাপাড়ার পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজটির গেটে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। পাশে ভাঙা কংক্রিট। শুক্রবার সকালের শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখানেই বড় ফাটল ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মাটি সংগ্রহের পর সেখানে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। ঘটনার পর গতকাল থেকেই কলেজটি আবার চালু করা হয়। কলেজটিতে দুপুরে পরীক্ষা চলছিল।

পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মো. আরিফ পাঠান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভূমিকম্পের আতঙ্ক কাটাতে প্রথম দুটি পরীক্ষার তারিখ পেছানো হয়েছে। আজ থেকে তাদের সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আগেই কাউন্সেলিং করা হয়েছে।

দড়িহাওলাপাড়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আবাসিক এলাকা। সেখানে প্রায় ৭০টির বেশি ভবনে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বাস করে। ভূমিকম্পের কারণে পিডিবির এই আবাসিক এলাকার ১১টি ভবনে ফাটল ধরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝাঁকুনির কথা আজও ভুলতে পারছে না পিডিবির এই আবাসিক এলাকার শিশুরা। সেখানে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা চামেলী-৩ নম্বর ভবনের তিনতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মাইশা জামান তানিশা। ভূমিকম্পের পর কেমন আছো জানতে চাইলে তানিশা বলে, রাতের বেলা ভয় পাই। হাঁটতে গেলে মনে হয় এই বুঝি ভূমিকম্প হচ্ছে।

তানিশা বাবা হাফেজ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কালকেই কান্নাকাটি করা শুরু করসিল। পরে বলসি আম্মু, আব্বু আসি তো কিসের ভয়?’

পলাশ উপজেলার ভাগ্যেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সখিনা হাওলাদার নামের এক নারী জানান, তাঁর মেয়ে সামিয়া হাওলাদার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভূমিকম্পের পর ঘরের চালে কিছু পড়লে ভয়ে কেঁপে ওঠে সে। গত সোমবার মধ্য রাতে ভূমিকম্প ভূমিকম্প বলে চিৎকার করে ওঠে।

ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে পলাশ শিল্পাঞ্চল সরকারি কলেজ। এটি এই এলাকায় একক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার একটি ভবন পুরোপুরি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে। কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্ররা একধরনের ট্রমার মধ্যে ছিল, একটা আতঙ্কের মধ্যে পড়েছিল, এখন সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেছে। আমাদের শিক্ষকেরা চেষ্টা করছেন বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরাতে। না হলে তো ওদেরই ক্ষতি ৷’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ