Ajker Patrika

ভোটের মাঠে

আ.লীগের ঘাঁটিতে নজর বিএনপির

  • ছয় আসনের চারটিতে সম্ভাব্য প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি।
  • সব কটিতে তৎপর জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
  • কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির ৮ মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

একসময় আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জে এবার ভোটের মাঠের চিত্র একেবারেই আলাদা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দলটির আগের সেই আধিপত্য আর নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার জেলায় ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদও তৎপর রয়েছে।

১৯৯১ সালে জেলার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে বড় ব্যবধানে জয় পায় বিএনপি। বাকি দুটি যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। তবে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জেলায় দুটি করে আসন পায় বিএনপি। ২০০৮ সালের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় সব কটি আসনই ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। তবে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বদলে গেছে আগের সব সমীকরণ। আগে জেলায় সাতটি আসন থাকলে পরে একটি কমিয়ে ছয়টিতে নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে এবার চারটিতে সম্ভাব্য প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে সব কটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত।

কিশোরগঞ্জ-১

সদর-হোসেনপুর নিয়ে গঠিত আসনটিতে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা শাখার সাবেক নায়েবে আমির মোসাদ্দেক ভূঁইয়া। দীর্ঘদিন থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিএনপি এখনো এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত না করায় প্রচারে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। আসনটিতে সাবেক এমপি মো. মাসুদ হিলালীসহ বিএনপির অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল হোসাইন, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল। জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, ব্যারিস্টার এম আতিকুর রহমান এবং হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম মবিনও আলোচনায় রয়েছেন।

গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাবেক নেতা হাফেজ আজিজুর রহমান। খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থী শায়খুল হাদিস হিফজুর রহমান খান। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মুহাম্মদুল্লাহ জামী এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে হেদায়েতুল্লাহ হাদী প্রার্থী হতে পারেন।

কিশোরগঞ্জ-২

আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখার আহ্বায়ক জালাল উদ্দীন। কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া নিয়ে গঠিত আসনটিতে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মোড়ল। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন ছাঈদ আহমদ। গণঅধিকার পরিষদ থেকে আলোচনায় আছেন শফিকুল ইসলাম শফিক। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সম্ভাব্য প্রার্থী রশীদ আহমদ জাহাঙ্গীর হোছাইনী। এনসিপি থেকে আলোচনায় আছেন আলাউদ্দিন আহমেদ ও মো. দিদার শাহ।

কিশোরগঞ্জ-৩

করিমগঞ্জ ও তাড়াইল নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থিতা পেয়েছেন কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. জিহাদ খান। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হৃদ্‌রোগ বিভাগের সাবেক এই প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন আলমগীর হোসাইন তালুকদার। খেলাফত মজলিস থেকে আতাউর রহমান শাহান এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে শায়খুল হাদিস আবু বকর সিদ্দিক মনোনয়ন পেতে পারেন। এনসিপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজন। তাঁরা হলেন খায়রুল কবির ও ইকরাম হোসেন।

কিশোরগঞ্জ-৪

ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। সম্প্রতি নানা ঘটনায় তিনি সমালোচিত হলেও দল প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচিত মুখ তিনি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শেখ মো. রোকন রেজা। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন অলিউর রহমান। ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী বিল্লাল আহমেদ মজুমদার। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনোনয়ন পেতে পারেন আনোয়ারুল ইসলাম।

কিশোরগঞ্জ-৫

নিকলী ও বাজিতপুর নিয়ে গঠিত আসনটিতে এখনো প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি বিএনপি। ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার জন্য আসনটি খালি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁকে সহযোগিতা করতে কেন্দ্র থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁকে সহায়তা করছেন নেতা-কর্মীদের একাংশ। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল। তাঁকে প্রার্থী করার দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর অনুসারীরা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির মোহাম্মদ রমজান আলী। খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আহাদ। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী হতে পারেন দিলাওয়ার হোসাইন নূরী। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমও এই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

কিশোরগঞ্জ-৬

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান পাঁচবার এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভৈরব ও কুলিয়ারচর নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি মো. শরীফুল আলম। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভৈরব উপজেলা আমির মোহাম্মদ কবীর হোসাইন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী হতে পারেন লাইস উদ্দিন। খেলাফত মজলিস থেকে সাইফুল ইসলাম সাহেল এবং ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ মুছা খান মনোনয়ন পেতে পারেন। এনসিপি থেকে আলোচনায় রয়েছেন মোজাক্কির আজাদ সাব্বির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাঁধের জমি লিজ দিয়ে বিপাকে পাউবো

  • মেয়াদ শেষ হলেও মামলার কারণে নতুন করে ইজারা দিতে বিপত্তি।
  • তিন বছর ধরে লিজবিহীন অবস্থায়; ফলে পার্কটিতে কোনো আয়ও হচ্ছে না।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের মনু ব্যারাজ‍সংলগ্ন এলাকায় পরিত্যক্ত শিশুপার্ক পরিণত হয়েছে ঝোপঝাড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের মনু ব্যারাজ‍সংলগ্ন এলাকায় পরিত্যক্ত শিশুপার্ক পরিণত হয়েছে ঝোপঝাড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজার শহরঘেঁষা মাতারকাপন এলাকায় মনু ব্যারাজ‍। এর কয়েক মিটার দূরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ১ একর জায়গাজুড়ে পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল ড্রিমস শিশুপার্ক নামে বিনোদন কেন্দ্র। তবে এ পার্কটি বিভিন্ন জটিলতায় এখন বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, শুরুর দিকে বৈধভাবে পার্কটি লিজ দেওয়া হলেও বর্তমানে মামলা জটিলতায় তিন বছর ধরে লিজবিহীন অবস্থায় আছে। ফলে পার্কটি থেকে কোনো আয়ও হচ্ছে না।

পাউবো বলছে, মামলা থাকায় ২০২২ সাল থেকে লিজ দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ইজারাদারের দাবি, তাঁদের লিজ এখনো বৈধভাবে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পার্কটি পাঁচ বছর মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষের আগেই ইজারাদারেরা মামলা করেন। পার্কটি চালাতে গিয়ে ইজারাদারদের লোকসান হচ্ছে বলে মামলা করা হয় বলেও জানা গেছে।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা থেকে সূচনা হওয়া ১৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মনু নদের ৭৩ কিলোমিটার বাংলাদেশে রয়েছে। এই নদকে ঘিরে মনু নদ প্রকল্প নামে ১৯৮৩ সালে বৃহৎ সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রকল্প। এখানে যে ব্যারাজ করা হয়েছে, তা দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক আসেন। তবে এখানে ব্যারাজ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে অনেক পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে। 

স্থানীয়রা বলছেন, এখানে বিনোদনের জন্য পার্ক স্থাপন করা হলেও বাস্তবে বাচ্চাদের কয়েকটি খেলনাসামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নেই। চারদিক শুধু জঙ্গলে ঢাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মনু ব্যারাজের কয়েক মিটার দূরে ড্রিমস শিশুপার্ক। পার্কের বাইরে একটি সাইনবোর্ড। চারপাশে টিনের বেড়া। ভেতরে শিশুদের জন্য মিউজিক নৌকাসহ কয়েকটি বিনোদনসামগ্রী থাকলেও সেগুলো ঝোপজঙ্গলে ভরা। পাশে স্থাপনা ভাঙাচোরা। দেখে ভূতের বাড়ি ছাড়া অন্য কিছু ভাববার উপায় নেই।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, এখানে সরকারের প্রচুর জায়গা আছে। প্রতিদিন বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় অনেক পর্যটক আসেন। এখানে যে পার্ক আছে, এটা শুধু জায়গা দখল ছাড়া আর কিছু নয়।

পার্কের সাইনবোর্ডে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ইঞ্জিনিয়ার সুলতান হোসেন নাম পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘আমরা লিজ নিয়ে পার্ক স্থাপন করেছি। আমাদের লিজের সময় এখনো আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আমাদের এখানে হামলা করে ভাঙচুর ও সবকিছু লুট করে নেওয়া হয়েছে। এজন্য পার্কের এই অবস্থা।’

মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বর্তমানে মামলা চলমান। মামলা শেষ হলে নতুন করে আবার লিজ দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে মিড ডে মিল: শুরুতেই গলদ, সুফল নিয়ে শঙ্কা

  • কর্মসূচির শুরুতেই নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
  • শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ।
আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম 
প্রাথমিকে মিড ডে মিল: শুরুতেই গলদ, সুফল নিয়ে শঙ্কা

কুড়িগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল কর্মসূচির শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে এসব অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা সরকারি বিধি অনুযায়ী শিশুদের জন্য মানসম্মত খাবার সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, সরকার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানো ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে সপ্তাহে পাঁচ দিন মিড ডে মিল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কুড়িগ্রামে কর্মসূচি চালুর এক সপ্তাহ না পেরোতেই নিম্নমানের খাবার, রুটিন অনুযায়ী খাবার না পাওয়া, এমনকি কিছু ক্লাস্টারে খাবার সরবরাহ না করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে কর্মসূচির সুফল নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রৌমারী উপজেলার ১১৪টি প্রাইমারি স্কুলে ১৮ হাজার ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী সপ্তাহে পাঁচ দিন ‘পুষ্টিকর’ খাবার পাওয়ার কথা। নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী প্রতি রবি, বুধ ও বৃহস্পতিবার বনরুটি (১২০ গ্রাম) ও সেদ্ধ ডিম (৬০ গ্রাম), সোমবার বনরুটি ও ইউএইচটি দুধ (২০০ গ্রাম) এবং মঙ্গলবার ফর্টিফায়েড বিস্কুট (৭৫ গ্রাম) ও মৌসুমি ফল বা কলা (১০০ গ্রাম) দেওয়ার কথা। তবে অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বিভাগকে সমন্বয়ের বাইরে রেখে খাবার সরবরাহ শুরু করেছে।

রৌমারী উপজেলার যাদুরচর নতুন গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ বাউশমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর বারবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, রুটিন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ হয়নি। যে খাবার দেওয়া হয়েছে, তার মানও ছিল নিম্নমানের। রুটি ছিল শক্ত ও নিম্নমানের, আর কলা ছিল সম্পূর্ণ কাঁচা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের জন্য কাঁচা কলা সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে চর বারবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফুল হক বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে ৯৪ জন শিক্ষার্থী। ১৮ তারিখ ৭০ জনের জন্য ডিম ও রুটি পেয়েছি। ১৯ তারিখ শুধু রুটি পেয়েছি, তারপর আজ পর্যন্ত আর কোনো খাবার সরবরাহ করা হয়নি।’

যাদুরচর নতুন গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘১৮ তারিখ রুটি ও কলা দিয়েছে; কিন্তু পরিমাণ ছিল কম। ১৯ তারিখ শুধু রুটি দিয়েছে। এরপর আর কোনো খাবার সরবরাহ করেনি। আজকে শুধু কলা দেওয়া হয়েছে, তাও পুরোপুরি কাঁচা। আগামী সাত দিনেও খাওয়ার উপযোগী হবে না। ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে ফোন করলে তিনি বলেন, প্রাক্কলন মূল্যের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দর নিয়ে কাজ করায় সরবরাহে সমস্যা হয়েছে।’

নিম্নমানের খাবার সরবরাহের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আইসল্যান্ড ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠান ১৮ নভেম্বর মৌখিকভাবে জানিয়ে সরবরাহ শুরু করে। আমরা এখনো কোনো কার্যাদেশ পাইনি। ২৫ নভেম্বর কয়েকটি স্কুলে কাঁচা কলা সরবরাহের অভিযোগ ওঠার পর তারা সরবরাহ স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে। ১ ডিসেম্বর থেকে আবার সরবরাহ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন। মানসম্পন্ন খাবার সরবরাহ ঠিকাদারের দায়িত্ব। আবার অনিয়ম পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসল্যান্ড ট্রেডিংয়ের প্রতিনিধি রায়হান বলেন, ‘আমরা ময়মনসিংহসহ কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছি। খুব অল্প সময়ে কার্যাদেশ পাওয়ায় খাবার সরবরাহে কিছুটা অব্যবস্থাপনা হয়েছে। ১ ডিসেম্বর থেকে সবকিছু নিয়মমতো শুরু হবে। আমরা সবার সহযোগিতা চাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, ‘রৌমারী ও রাজিবপুরে খাবার সরবরাহে অনিয়মের ঘটনা আমার নজরে এসেছে। ঠিকাদার আমাদের কোনো চুক্তিপত্র দেয়নি, কোনো সমন্বয়ও করেনি। নিজেদের মতো করে কাজ করছে। নিম্নমানের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, দেশের ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকার মিড ডে মিল কর্মসূচি চালু করছে। কুড়িগ্রামের উলিপুর ও ফুলবাড়ী ছাড়া বাকি সাত উপজেলার প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচির আওতায় খাবার পাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে ভূমিকম্প

শিশুদের ভয় কাটেনি এখনো, দেওয়া হচ্ছে কাউন্সেলিং

  • বড়দের আতঙ্ক কাটলেও শিক্ষার্থী-শিশুরা ভয়ে।
  • শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং দেওয়ার পরামর্শ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায়।
  • বুঝিয়ে-শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে চেষ্টা করছেন শিক্ষকেরা।
রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পরপর দুই দিনের ভূমিকম্পে নরসিংদীর মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা বড় প্রভাব ফেলেছে সেখানকার শিশুদের মনোজগতে। অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, শিশুরা এখনো ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠছে। মনোযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনায়। শিক্ষার্থী ও শিশুদের মনের এই ভয় দূর করতে স্কুলে স্কুলে দেওয়া হচ্ছে কাউন্সেলিং সেবা।

জেলা প্রশাসনসূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর ঘোড়াশাল ও গাবতলী এলাকায় ভূমিকম্পের আতঙ্কটা বেশি ছিল। সেটা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করা হয়। হাসপাতালগুলোকেও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যা যা করণীয় তা করতে বলা হয়েছে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমন ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। বড়দের আতঙ্ক অনেকটা কমেছে। তবে শিক্ষার্থী ও শিশুদের ভয় কাটাতে স্কুল-কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করা হবে। শিশুদের মানসিক ট্রমা থেকে বের করে আনার জন্য কাউন্সেলিংয়ের কথা বলেছি।’

গতকাল মঙ্গলবার নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ স্কুল-কলেজে পরীক্ষা চলছে। তবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের ভয় কাটানোর জন্য কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার তারিখও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা শিক্ষা অফিসার এ এস এম আবদুল খালেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা চলছে। ভূমিকম্পের পর সবাই আতঙ্কে ছিল। তাই জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও শিক্ষার্থীদের মানসিক কাউন্সেলিং করার কথা বলা হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ভূমিকম্পের পর তাদের নিজেদের মতো পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করেছে।’

গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো দেশ। এতে ১০ জন নিহত, সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। সেদিনের ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। সেদিনের ঘটনা এখনো ভুলতে পারছে না সেখানকার মানুষ।

শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ৩১ ঘণ্টার মধ্যে আরও তিনটি মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে একটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকার দড়িহাওলাপাড়া।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে দড়িহাওলাপাড়ার পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজটির গেটে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। পাশে ভাঙা কংক্রিট। শুক্রবার সকালের শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখানেই বড় ফাটল ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মাটি সংগ্রহের পর সেখানে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। ঘটনার পর গতকাল থেকেই কলেজটি আবার চালু করা হয়। কলেজটিতে দুপুরে পরীক্ষা চলছিল।

পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মো. আরিফ পাঠান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভূমিকম্পের আতঙ্ক কাটাতে প্রথম দুটি পরীক্ষার তারিখ পেছানো হয়েছে। আজ থেকে তাদের সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আগেই কাউন্সেলিং করা হয়েছে।

দড়িহাওলাপাড়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আবাসিক এলাকা। সেখানে প্রায় ৭০টির বেশি ভবনে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বাস করে। ভূমিকম্পের কারণে পিডিবির এই আবাসিক এলাকার ১১টি ভবনে ফাটল ধরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝাঁকুনির কথা আজও ভুলতে পারছে না পিডিবির এই আবাসিক এলাকার শিশুরা। সেখানে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা চামেলী-৩ নম্বর ভবনের তিনতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মাইশা জামান তানিশা। ভূমিকম্পের পর কেমন আছো জানতে চাইলে তানিশা বলে, রাতের বেলা ভয় পাই। হাঁটতে গেলে মনে হয় এই বুঝি ভূমিকম্প হচ্ছে।

তানিশা বাবা হাফেজ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কালকেই কান্নাকাটি করা শুরু করসিল। পরে বলসি আম্মু, আব্বু আসি তো কিসের ভয়?’

পলাশ উপজেলার ভাগ্যেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সখিনা হাওলাদার নামের এক নারী জানান, তাঁর মেয়ে সামিয়া হাওলাদার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভূমিকম্পের পর ঘরের চালে কিছু পড়লে ভয়ে কেঁপে ওঠে সে। গত সোমবার মধ্য রাতে ভূমিকম্প ভূমিকম্প বলে চিৎকার করে ওঠে।

ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে পলাশ শিল্পাঞ্চল সরকারি কলেজ। এটি এই এলাকায় একক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার একটি ভবন পুরোপুরি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে। কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্ররা একধরনের ট্রমার মধ্যে ছিল, একটা আতঙ্কের মধ্যে পড়েছিল, এখন সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেছে। আমাদের শিক্ষকেরা চেষ্টা করছেন বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরাতে। না হলে তো ওদেরই ক্ষতি ৷’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার ২

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনার তেরখাদায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় খালাসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে জেলার তেরখাদা উপজেলার মোকামপুর ক্যাম্প পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে স্থানীয় লস্করপুর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. নাজমুল মোল্যা (৫০) ও মোসা. রহিমা বেগম (৫০)। রহিমা বেগম সম্পর্কে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির খালা।

মঙ্গলবার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট) আনিসুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ১৯ নভেম্বর খালা (গ্রেপ্তার হওয়া মোসা. রহিমা বেগম) তাকে নিয়ে তার নানার বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে রহিমা বেগমের সহায়তায় গ্রেপ্তার মো. নাজমুল মোল্যা ২০ নভেম্বর শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে ২৪ নভেম্বর তেরখাদা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (সংশোধনী-২০০৩) মামলা করেন। পুলিশ ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, গ্রেপ্তার রহিমা বেগম চারিত্রিকভাবে ভালো নন। তিনি সামান্য অর্থের বিনিময়ে নিজের বোনের মেয়েকে ধর্ষকের হাতে তুলে দেন। এ ঘটনার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শিশুটির মা তাঁর নিজের বোনকে আসামি করে মামলা করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত