Ajker Patrika

নওগাঁর রাণীনগর: বস্তায় আদা চাষে ‘দুর্নীতির প্রদর্শনী’

মো.সাহাজুল ইসলাম, রাণীনগর (নওগাঁ)
আদাগাছ পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। গতকাল নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আদাগাছ পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। গতকাল নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনীতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কেউ বলছেন তালিকায় নাম থাকলেও প্রদর্শনী পাননি, কেউ বলছেন বরাদ্দ অনুযায়ী প্রদর্শনীর উপকরণ পাননি, আবার কেউ বলছেন কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা আদাবীজের গাছই ওঠেনি। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পতিত জমিতে অনাবাদি প্রকল্পের আওতায় এই উপজেলায় ২২টি প্রদর্শনী হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনাবাদি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ২১ মার্চ একযোগে ২২ জন কৃষককে প্রতি প্রদর্শনীর জন্য ৩০টি খালি বস্তা, আড়াই কেজি আদাবীজ, ৬ কেজি ডিএপি, ৬ কেজি পটাশ সার, ১০ কেজি জিপসাম, ২৫ কেজি জৈব সার এবং একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।

কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছে, প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো দেশে আদার চাহিদা পূরণ করে আমদানিনির্ভরতা কমানো, বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে তুলে ধরা এবং কম খরচে পতিত জমিতে বেশি লাভজনক আদা চাষ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। তবে মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের সুফল নিয়ে শঙ্কার কথা বলছেন কৃষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা ২২ জন প্রদর্শনী কৃষকের তালিকায় প্রথমে রয়েছেন একডালা ইউনিয়নের জলকৈ গ্রামের মৃত জসমত আলীর ছেলে মনজুর রহমান। কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমার নামে যে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে, তা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে জানতে পারলাম। অফিস থেকে আমাকে এরকম কোনো প্রদর্শনী দেওয়া হয়নি বা বলাও হয়নি। এ বিষয়ে আমার কিছু জানাও নেই।’ এ নিয়ে প্রদর্শনীর দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা ব্লক সুপারভাইজার আফাজ উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে একডালা গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, ‘অফিস থেকে দেওয়া আদাবীজ থেকে গাছ ওঠেনি। তাই নতুন করে বাজার থেকে আদাবীজ কিনে রোপণ করতে হয়েছে।’ গহেলাপুর মানিকহার গ্রামের কৃষক অঞ্জনা রানী বলেন, অফিস থেকে তাঁকে ৩০টি খালি বস্তা, ২ কেজি ডিএপি, ২ কেজি পটাশ সার, ২ কেজি আদা, আধা বস্তা জৈব সার ও একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু পাননি। একই কথা বলেন ওই গ্রামের কৃষক অনন্ত সরকার।

রাণীনগর উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকার কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে কৃষকেরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই কৃষি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিমা খাতুন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী সব উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে তালিকায় নাম থাকলেও প্রদর্শনী না পাওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...