Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জের কলেজ: দুই বছর ধরে বেতনহীন ৪১ শিক্ষক-কর্মচারী

  • পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা
  • একটা প্রতিষ্ঠান তো এভাবে চলতে পারে না: দাতাসদস্য
  • দুর্ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার, ফান্ড না থাকার অজুহাত অধ্যক্ষের
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের কলেজ: দুই বছর ধরে বেতনহীন
৪১ শিক্ষক-কর্মচারী

কিশোরগঞ্জের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘স্বেচ্ছাচারিতায়’ দুই বছরের বেশি সময় ধরে নন-এমপিও ২৯ শিক্ষক ও ১২ কর্মচারী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বেতন চাইলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ।

ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিনা কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং বেতন-ভাতা বন্ধ করে রাখেন। তাঁর কারণে দুই বছর ধরে বেতন হচ্ছে না তাঁদের।

১৯৮২ সালে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটি এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮৪ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩ হাজার ৩০০। কলেজটির বার্ষিক আয় প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ আর ব্যয় প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, কলেজে ফান্ডের অভাব নেই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সঠিক আয়-ব্যয়ের হিসাব গোপন করে রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষক বলেন, ‘দুই বছরের অধিক সময় বেতন পাই না। উনি কলেজেও নিয়মিত আসেন না। কাউকে দায়িত্ব দেন না এবং ছুটিও নেন না। কলেজের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও আমরা তাঁকে পাই না।’

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার দায়িত্ব পায়, যা আগে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির হাতে ছিল। তবে শিক্ষকের সংকট থাকলে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে এনটিআরসিএর অনুমোদনক্রমে পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে। শিক্ষকেরা বলেন, ‘শুধু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সদিচ্ছার অভাবে আমরা বেতন পাচ্ছি না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন ফান্ড নেই, কিন্তু আমাদের তো একটা হিসাব আছে। বাংলাদেশের একমাত্র কলেজ, যেখানে বিনা বেতনে চাকরি করতে হচ্ছে। আমাদের দুরবস্থা দেখার মতো কেউ নেই।’

কলেজের অভিভাবক সদস্য আবু নাসের মিন্টু হিলালি বলেন, ‘টাকা আছে, তারপরও বেতন দেয় না কেন, এটা তো গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলতে পারবেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সপ্তাহে এক দিনও অফিস করেন না। ফোন করলে ধরেন না।’

দাতাসদস্য কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘মাসের পর মাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজে আসেন না। তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ঠিকমতো মিটিংও করেন না। একটা প্রতিষ্ঠান তো এভাবে চলে না, চলতে পারে না।’

কলেজটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নূরুন নাহার চায়না বলেন, ‘তদন্তের মাধ্যমে নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে আমাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। আমরা প্রতিবেদন দাখিল করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তা গ্রহণ না করে পুনরায় কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে দেন অন্যদের। এখন কী অবস্থায় আছে, তা আমি জানি না। মিটিং ডাকা হয়েছিল, তা-ও ক্যানসেল করা হয়েছে।’

কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রতন বলেন, ‘কলেজটি পতিত সরকার একবারে জিরো পজিশনে নিয়ে গেছে। কোনো ফান্ডিং নেই। আমি আসলে চলে যেতে চাই। এত যদি গ্যাপ থাকে কীভাবে কী করার? এক প্রিন্সিপাল দৌড়াইছে, আরেক প্রিন্সিপাল আসেন না। এই প্রতিষ্ঠানে যাওয়াটা আমার অপরাধ হইছে। আমি চাচ্ছি একটা জরুরি মিটিং ডেকে বিষয়গুলো সেটেল্ড করতে।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অপরিকল্পিত নিয়োগের কারণে অনেক বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতার খাতিরে এবং বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি কলেজ হওয়ায় ছাত্রসংখ্যা কমে যায়। সেটা বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের নিচে চলে এসেছে। এমতাবস্থায় ১২০ শিক্ষকের বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যার জন্য বিগত ৩ বছরের মধ্যে দেড় বছরের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি আসার পরে ৪ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি। এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কলেজটির নিজস্ব গভর্নিং বডি রয়েছে, তাদের দায়িত্ব বিষয়টি দেখা। এরপরও কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...