Ajker Patrika

 ‘একটা অঘটন ঘইট্ট্যা গেলে পরে বেহেরই খবর অইব’

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ১২
 ‘একটা অঘটন ঘইট্ট্যা গেলে পরে বেহেরই খবর অইব’

‘কয় দিন পর পর দেহি লোকজন আইয়ে। ফডু তুইল্ল্যা লইয়া যায়। কিন্তু কামের কাম কিচ্ছু অয় না। এইতা যে হুদাই বাইল-বাট্টার দোহানদারি আমরা বুঝি! কত চেয়ারম্যান, মেম্বোর আইলে গেলে, কিন্তু এইডা নিয়া কেউর কোনো মাথা বেদনাও নাই। যেই দিন হুনবাইন বিরিজ থাইক্ক্যা পইরা দু-একজন মইরা গেছে কিংবা বড় কোনো অঘটন ঘইট্ট্যা গেছে; পরে দেখবাইন বেহেরেই (সবার) খবর অইব। এর আগে এইডা ঠিক অইত না।’ 

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ একটি সেতু দিয়ে পারাপারের সময় আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন সত্তরোর্ধ্ব মো. সুলাইমান। তিনি সরিষা ইউনিয়নের এনায়েতনগর গ্রামের বাসিন্দা। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেতুটির এক পাশের বেশির ভাগ অংশের এবং অন্য পাশের অর্ধেক অংশের রেলিংয়ের কংক্রিট খসে বেরিয়ে গেছে রড। বাকি অর্ধেক অংশের রেলিং, কংক্রিট তো দূরের কথা পিলারেরও কোনো অস্তিত্ব নেই। 

ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতু দিয়ে পারাপারের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় ও উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জাটিয়া ও সরিষা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে কাঁচামাটিয়া নদী। এক পাশের অংশে জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া বাজার, অন্যপাশে সরিষা ইউনিয়নের কুর্শিপাড়া বাজার। দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নদী পারাপারের জন্য ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে একটি পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মো. আব্দুছ ছাত্তার। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন শুরু হয়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই সেতুটির রেলিংয়ের কংক্রিট খসে রড বেরিয়ে যায়। পিলার ভেঙে নিচে পড়ে যায়। জরাজীর্ণ সেতুটি এ অবস্থায় দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে তা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। 

কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকাস্থানীয় বাসিন্দা মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘সেতুর এক পাশের অংশে রেলিংয়ের কংক্রিট খসে রড বেরিয়ে আছে, বাকি অর্ধেক অংশের পিলার নেই। এ অবস্থায় একটু অন্যমনস্ক হলেই ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে অথবা বেরিয়ে থাকা রডের আঘাতে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’ 

কথা হয় অটোরিকশাচালক মামুন মিয়ার সঙ্গে। মামুন বলেন, ‘সেতু দিয়া পার অওনের সময় অনেক ডর (ভয়) করে। মনে অয় যাত্রী লইয়া যেকোনো সময় বিরিজের নিচে পইরা যাইয়াম।’ 

জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামছুল হক ঝন্টু বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ওই সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনসহ হাজারো মানুষ দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এটি মেরামত না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেতুটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার বলেছি।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) তৌহিদ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার বিষয়ে অবগত আছি। এডিবি কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পের অর্থায়নে অচিরেই সেতুটি মেরামত করে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত