Ajker Patrika

বাজারে দোকান বরাদ্দে পৌর মেয়র হাতিয়েছেন কোটি টাকা

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
Thumbnail image
সাবেক মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার। ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌরসভার সাবেক মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে একে একে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দোকান বরাদ্দের নামে দুটি বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৮-১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। এ বিষয়ে করা প্রতারণাসহ আট মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল ৮ অক্টোবর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাড়াটঙ্গী মৌজায় দুতলা পৌর শপিং কমপ্লেক্স নির্মিত হয়। এতে ৫৬টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে পুরোনো ব্যবসায়ীদের জন্য ২১টি দোকান বরাদ্দ করে বাকি ৩৫টি দোকান দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভবন নির্মাণ শুরু করেই মেয়র বিল্লাল নতুন-পুরোনো ব্যবসায়ী ও কাউন্সিলরদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত রসিদের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দের নামে ৫ থেকে ২৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। পরে দোকান ‘দিই-দিচ্ছি’ বলে কালক্ষেপণ করেন।

এর মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি গা ঢাকা দিলে দুই ব্যবসায়ী প্রতারণার অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এ ছাড়া সাবেক মেয়র বিল্লাল দরি চারআনি বাজারে সবজি, মাংস ও মাছ বিক্রেতা ১০৮ জনের কাছে বিট (স্থান) বরাদ্দ দিয়ে ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। তবে দিয়েছেন ৫ হাজার টাকার রসিদ।

পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘পৌর শপিং কমপ্লেক্স এবং দরি চারআনি বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে মেয়র কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা নিয়েছে। ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। আজকে সময় এসেছে বিচার চাওয়ার, তাই চাচ্ছি।’

মামলার বাদী মো. আল-আমীন বলেন, ‘তিনটি দোকান বুকিংয়ের জন্য বাধ্য হয়ে মেয়রকে দুই ভাই মিলে ২৯ লাখ টাকা দেই। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ৪ লাখ টাকা দিয়ে রসিদ হাতে নিই। কিন্তু এর পর থেকে দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে নানা টালবাহানা করেন তিনি। পরে ২৭ আগস্ট আমি এবং আব্দুর রশিদ নামের আরেক ব্যবসায়ী আদালতে দুটি মামলা করি। মেয়র গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেলহাজতে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়েছেন, এই অবস্থায় কোনো টাকাপয়সা ফেরত দিতে পারবেন না।’

এ বিষয়ে কথা হলে পৌরসভার বাজার পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মেয়র ব্যক্তিগত রসিদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এতে পৌরসভার কোনো দায় নেই। দরি চারআনি বাজারে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করলেও শপিং কমপ্লেক্সে দোকান কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কারণ, জেলা প্রশাসন জমিটি তাদের দাবি করে মামলা করেছে। তবে বিআরএস সূত্রে জমির মালিক পৌরসভা। আশা করি, রায় আমাদের পক্ষে আসবে। পরে নিয়ম অনুযায়ী দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হায়দার বলেন, ‘সরকারের জায়গায় পৌরসভা মার্কেট নির্মাণ করতে পারবে, কিন্তু অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সেটি না করে প্রভাব খাটানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। যাঁরা টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তাঁরা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত