Ajker Patrika

ভুলে ভরা পরীক্ষাকেন্দ্রের সতর্কতামূলক ব্যানার

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ মে ২০২৩, ১৩: ০৩
ভুলে ভরা পরীক্ষাকেন্দ্রের সতর্কতামূলক ব্যানার

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে নকল নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে টানিয়ে দেওয়া হয় সতর্কীকরণ ব্যানার। কিন্তু এসব ব্যানারে লেখা বাক্যে বানান ভুলের কারণে বিষয়টি দৃষ্টিকটু ঠেকেছে অনেকের কাছে।

গতকাল রোববার সকাল ১০টায় সারা দেশের ন্যায় উপজেলার ১০টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নকলের প্রবণতা দূর করতে নিজ নিজ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনা লেখাসংবলিত ব্যানার কেন্দ্রের প্রধান ফটকসহ আশপাশের জনসমাগম স্থানে টানিয়ে দেওয়া হয়। 

নকল প্রতিরোধে সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনা প্রচারণার এসব ব্যানারে ভুলের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। ভুল বানানে ভরা ব্যানার দেখে পরীক্ষার্থীসহ শিশু-কিশোরেরা ভুল বানান শিখছে বলে মন্তব্য করেছে সচেতন মহল। মনোবিদেরা বলছেন, এ ধরনের ভুল বানান যাত্রাপথে শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। বানান ভুল ও ভাষা বিকৃতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাকে দায়ী করে অনেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইসলামপুর নেকজাহান পাইলট মডেল হাইস্কুল ও শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল নিরুৎসাহিত করতে ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়। ব্যানারে ‘পরীক্ষা’ শব্দটি লেখা হয়েছে ‘পরিক্ষা’ বানানে। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বাক্যে ‘রাহিম’ শব্দটি লেখা হয়েছে ‘রাহীম’। অন্যদিকে ‘নকলমুক্ত’ শব্দটিও লেখা হয়েছে ‘নকল মুক্ত’।

এ ছাড়া মোবাইল, ঘড়ি বা যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষেধ বাক্যটিও অর্থ ও ব্যাকরণসিদ্ধ নয়। বাক্যটিতে ‘ইলেকট্রনিক’ শব্দের স্থলে ‘ইলেকট্রনিক্স’, ‘কোনো’ শব্দের স্থলে ‘কোন’ লেখা হয়েছে।

ইসলামপুর নেকজাহান পাইলট মডেল হাইস্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব রেজাউল করিম বাবু মোবাইল ফোনে বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ড থেকে আমাদের যেসব চিঠি দেওয়া হয়, তাতে ‘পরিক্ষা’ শব্দটি এভাবেই লেখা থাকে। তবে ব্যানারে কীভাবে লেখা হয়েছে, তা আমি দেখিনি।’

শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক আখন্দ বলেন, ‘ব্যানারে লেখা ভুল হয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখব।’

উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘আমি পরীক্ষাকেন্দ্রেই আছি। তবে ভুলে ভরা লেখাসংবলিত ব্যানার টানিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার নজরে পড়েনি।’

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘পরীক্ষাকেন্দ্রের ব্যানার ভুলভাবে লেখা হয়েছে কি না, সেটা আমার জানা নেই। তবে মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই শুদ্ধতার চর্চা করতে হবে। এর জন্য সবাইকে ভাষা ব্যবহারে যত্নবান হতে হবে।’

শিশু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হেফজুল বারী বলেন, শিশুরা অনেক কিছুই দেখে শেখে। বিশেষ করে বর্ণমালা শেখার পর যা দেখে, তা-ই বানান করে পড়ার চেষ্টা করে। ফলে যাত্রাপথে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা ভুল বানানের ঘেরাটোপ থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারে না।

সরকারি ইসলামপুর কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক মাহমুদা সুলতানা বলেন, বাংলা একাডেমি অনেক শব্দের বানান পরিবর্তন করেছে। ‘পরীক্ষা’ বানানটি কীভাবে লেখা হয়েছে, তা অভিধান দেখে বলছি। পরে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘পরীক্ষা’ শব্দটি ‘পরিক্ষা’ লিখলে ভুল হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ মানিক মিয়া বলেন, ‘বিকৃত বানান ও ব্যাকরণগত ভুলের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যত্রতত্র বাংলা বানানের ভুল ভাষার জন্য অমর্যাদাকর। এ ধরনের ভুল ও বিকৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত