Ajker Patrika

ভবনের কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও

  • নতুন দোতলা ভবনের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ।
  • পুরোনো ভবনে প্রায়ই পলেস্তারা খসে পড়ে আঘাত পান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ 
ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মোড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন নির্মাণের ৮০ শতাংশ কাজ শেষে ঠিকাদার লাপাত্তা হন ২০২০ সালে। এর পর থেকে আর কোনো কাজ না হওয়ায় এভাবেই পড়ে আছে ভবনটি। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মোড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন নির্মাণের ৮০ শতাংশ কাজ শেষে ঠিকাদার লাপাত্তা হন ২০২০ সালে। এর পর থেকে আর কোনো কাজ না হওয়ায় এভাবেই পড়ে আছে ভবনটি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মোড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এক বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হয় দোতলা ভবন নির্মাণের ৮০ শতাংশ কাজ। কিন্তু পরের বছর, ২০২০ সাল থেকে লাপাত্তা ঠিকাদার। ফলে কাজও গেছে আটকে। গত পাঁচ বছর এই অবস্থা। অগত্যা ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো ভবনেই চলছে পাঠদান। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশঙ্কা, পুরোনো ভবনটি এতই জরাজীর্ণ, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অবশ্য প্রশাসন বলছে, নতুন ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, প্রায় ৩৫ বছর আগে তৎকালীন অজপাড়া গ্রাম আকুয়া মোড়লপাড়ায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কয়েকজন মিলে উদ্যোগ নেন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। মানুষের দানের ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩৩ শতাংশ জমি। গ্রামের নামে নামকরণ হয় আকুয়া মোড়লপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়।

বিদ্যালয় সূত্র বলেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন নির্মাণের কাজ পায় আয়ান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ছাদসহ দোতলা ভবনের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। এর মধ্যেই ২০২০ সালে লাপাত্তা হন ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা। এরপর আর কাজ হয়নি। আধা নির্মিত ভবনটি এখন স্থানীয় মাদকসেবীদের ‘নিরাপদ আখড়ায়’ পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সেখানে চলে মাদকসেবন, যা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থী ৩১৪ জন। জরাজীর্ণ একতলা ভবনের তিনটি রুমে দুই শিফটে পাঠদান চলে। ভবনের জায়গায় জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। পলেস্তারা পড়ে আহতও হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাসে প্রত্যেক বেঞ্চে ৪-৫ জন করে শিক্ষার্থী বসানো হয়।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রামিম হাসান বলে, ‘এক বেঞ্চে পাঁচজন বসছি। লেখা যায় না। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে।’

স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘৩০-৩৫ বছর আগে মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ভিক্ষুকও দান করেছে। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় নেই। তাই, এখানেই সবাই আসে পড়তে। আমরা চাই, সরকার বিদ্যালয়টির দিকে নজরদারি দিক।’

আকুয়া মোড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল কবীর বলেন, ‘ভবনটির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে হঠাৎ ঠিকাদার উধাও হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এই জরাজীর্ণ ভবনেই পাঠদান করতে হচ্ছে। বারবার উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হলেও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার গোলাম মোস্তফার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

সদর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঠিকারদার পলাতক রয়েছেন। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ভবনটির কাজ দ্রুত শেষ করতে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত