নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিককে মারধর: শাস্তি পেলেন ছাত্রলীগের ১৬ নেতা-কর্মী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) শৃঙ্খলা–পরিপন্থী কাজ ও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৬ নেতা-কর্মীর সনদ বাতিল, স্থায়ী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ–সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত প্রশাসনের তদন্ত কমিটির দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে সুপারিশের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তগুলোর অনুমোদন হয়। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ যেন বজায় থাকে এবং এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই লক্ষ্যে সিন্ডিকেট কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ। সেই খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের এই শাস্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে চারজনের সনদ বাতিল, একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শাস্তি পাওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ওরফে যাযাবর নাঈমকে (ফোকলোর, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার; সাবেক উপকর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক জয় মোড়লের (আইন ও বিচার বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকের সনদ বাতিল; সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক লোবন মোখলেছের (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল; ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ তুহিনের (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকের সনদ বাতিল এবং ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে।

বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল হক হিমেলকে (টিপিএস বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর; সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহকে (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর; ছাত্রলীগ কর্মী রেজওয়ানুল কবীর রাব্বিকে (ইইই বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর; আবু রায়হানকে (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর; গালিব ফয়সাল নির্ঝরকে (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) দুই বছর; সৌমিক জাহানকে (চারুকলা বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর; নাঈমুল ইসলাম অনিককে (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর; পবিত্র মণ্ডলকে (পপুলেশন সায়েন্স, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর এবং আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে (চারুকলা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন অনুষদের সহসম্পাদক হাবিবুল্লাহ জামির (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ এবং ছাত্রলীগ কর্মী নয়ন হাসানের (ইএসই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ও মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ খবর পেয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ, বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীবের ওপর হামলা চালানো হয়। তাঁদের কয়েক দফায় মারধর করে আবু নাঈম আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। এ ঘটনায় সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের তৎকালীন প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে সভাপতি ও তৎকালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।