Ajker Patrika

‘ভাই গো আমি আর কখনো তুমারে রান্না করে খাওয়াইতে পারব না’

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘ভাই আমার মিলে কাজে যাওয়ার সময় আমি নিজ হাতে হাঁসের মাংস রান্না করে খাওয়াইছি। ভাই গো, আমি আর কখনো তুমারে রান্না করে খাওয়াইতে পারব না। ভাই তুমি কই গেলা আমারে ছাইড়া। তুমরা আমার ভাইরে আমার কাছে আইন্যা দেও, আমি ভাইয়ের চাঁদ মুখটা দেখব’। কান্না করতে করতেই কথাগুলো বলছিলেন আসমা। 

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে স্টিল মিলে গ্যাস পাইপ বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচ শ্রমিকের মধ্যে তাঁর ভাই জাকারিয়া (২২) ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

নিহত জাকারিয়া শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বরুয়াজানি গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে। 

আজ তাঁদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তাঁর বাবা-মা। তাঁরা বিলাপ করে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। 

জাকারিয়ার প্রতিবেশী মিলন হোসেন বলেন, ‘চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ছিল ছোট। বড় ভালো ও মিশুক ছেলে ছিল জাকারিয়া।’ 

জাকারিয়ার বড় বোন আসমা খাতুন কখনো উচ্চ স্বরে, কখনো নীরবে, আবার কখনো আকাশের দিকে হাত তুলে বিলাপ করে যাচ্ছেন। সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীরাও অঝোরে কাঁদছেন। 

এ নিয়ে ওই বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচজনের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হলো। দগ্ধ অপর একজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। 

মৃত অপর তিনজন হলেন-নালিতাবাড়ী উপজেলার বড়ুয়াজানী গ্রামের মোজাম্মেল (৩০), সাইফুল ইসলাম (৩০) ও রংপুর কোতোয়ালি উপজেলার আফসাদপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম (৩২)।

এর আগে সোমবার বিকেলে মোজাম্মেল মারা যাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে সাইফুল ও শরিফুল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

গত শনিবার ভোরে গোদনাইলের সৈয়দপাড়া এলাকায় শারমিন স্টিল মিলে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সাইফুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, মোজাম্মেল, জাকারিয়া ও শরিফুল ইসলাম নামের পাঁচ শ্রমিক দগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে মোজাম্মেল, সাইফুল ও জাকারিয়ার গ্রামের বাড়ি নালিতাবাড়ী উপজেলায়। 

আজ বুধবার বিকেলে নালিতাবাড়ী উপজেলার বরুয়াজানীতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চলছে আহাজারি। এক বাড়ি থেকে শোনা যায় পাশের বাড়ির কান্নার শব্দ। একই গ্রামের দগ্ধ হওয়া তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় শুধু স্বজনরা নয়, শোকাহত হয়েছে পুরো গ্রাম। 

সংশ্লিষ্ট কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়ামুল কাউসার বলেন, ‘দগ্ধ হওয়া পাঁচজনের চারজনই আমার ইউনিয়নের। এর মাঝে তিনজনই মারা গেল। বাকি একজনের অবস্থাও শুনেছি আশঙ্কাজনক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত