Ajker Patrika

বেকায়দায় নিম্নমধ্যবিত্ত

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
Thumbnail image

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে দাম বেড়েছে শাক-সবজির। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর হঠাৎ বেড়ে যায় শাক-সবজির দাম। শাক-সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবারহ কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাহিদার তুলনায় এ বছর সবজির উৎপাদন কম। যে কারণে দাম কিছুটা বেশি। তবে রবি মৌসুমের শাক-সবজি বাজারে উঠলেই দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আকাশছোঁয়া দাম বেড়েছে সবজির। প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা দাম বেড়েছে বিভিন্ন তরকারির।

প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগেও ২৫-৩৫ টাকা ছিল। এ ছাড়া গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০, করলা ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়শ ৫০-৬০, বরবটি ৪০-৫০, পটোল ৪০-৫০, ঝিঙে ৫০-৬০, চিচিংগা ৪০-৫০, শষা ৪০-৫০, লাউ প্রকারভেদে ৪০-৫০, মিষ্টি কুমড়ো প্রতি পিচ প্রকারভেদে ৫০-৬০ থেকে শুরু হয়ে ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চাল কুমড়ো প্রতি পিচ ৪০-৫০ টাকা, কাঁচাকলা হালি ৪০-৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য সব সবজি কেজিপ্রতি ১০-৩০ টাকা দাম বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু এগুলোই নয়, প্রকারভেদে নিত্যপণ্যের সবকিছুর দামই দিগুণ বেড়েছে।

খোকন সাহা নামে এক ভ্যানগাড়ি চালক বলেন, ‘শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি আয়। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’

মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘একে তো সার এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, তার মধ্যে নিত্যপণ্যের যে হারে দাম বেড়েছে আয় তো দূরের কথা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়বে।’
ফুটপাতে ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘সারাদিনে সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো আয় হয়। বেচাবিক্রি কম থাকলে এর চেয়ে কমও হয়।

সামান্য এই আয়ে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কোনো মতে টেনেটুনে সংসার চলে। বর্তমান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারের যে অবস্থা তাতে চাল, ডাল, তেল কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। তার মধ্যে শাক-সবজির বাজারে আকাশছোঁয়া দামের উত্তাপে নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমানে ধারদেনা করে কোনোমতে সংসার চালালেও আগামী দিনে দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগান দিতে পারবো কিনা সেই চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।’

ঈশ্বরগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ শাক-সবজির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও বিপাকে রয়েছেন।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মো. সুমন মিয়া, বাবুল মিয়াসহ কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় এই উপজেলায় চার ভাগের এক ভাগ শাক-সবজি উৎপাদন হয়। বাকি শাক-সবজি অন্যান্য অঞ্চল থেকে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে পরিবহন খরচ বেশি এবং পণ্য উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানি কমে গেছে। আমদানি কমায় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। আমদানি না বাড়লে দাম কমবে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই সময়টাতে চাহিদার তুলনায় সবজি উৎপাদন কম হয়। যে কারণে দাম কিছুটা বেশি থাকে। তবে নতুন শাক-সবজি বাজারে উঠলেই দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে জানান তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত